Bhopal

ভোপালে টিকা নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু ।। টিকা কারণ নয়: ভারত বায়োটেক

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে মনে করা হচ্ছে, ওই যুবকের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্টের পরেই মৃত্যুর আরও সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যেতে পারে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ভোপাল শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ২০:২০
Share:

শোকাহত দীপকের পরিবার। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

দেশ জুড়ে করোনা টিকাকরণের দিন ঘোষণার মধ্যেই অস্বস্তির খবর।
ভারত বায়োটেকের করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন নেওয়ার ১০ দিনের মাথায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হল ভোপালের এক স্বেচ্ছাসেবকের। কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় তথা শেষ ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল)-এ অংশ নিয়েছিলেন ৪২ বছরের ওই যুবক। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে মনে করা হচ্ছে, ওই যুবকের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর আরও সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যেতে পারে। তবে ভারত বায়োটেকের দাবি, এই মৃত্যুর সঙ্গে টিকা নেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

Advertisement

হায়দরাবাদের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনার টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’-এর তৃতীয় তথা শেষ ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে সারা দেশেই। দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে এই ট্রায়াল চলছে। তার মধ্যে অন্যতম মধ্যপ্রদেশের পিপলস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় টিকা নেন ভোপালের যুবক দীপক মরাবি। তার পর ২১ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর।

দীপক জনজাতি সম্প্রদায়ের। দিনমজুরের কাজ করেন। তাঁর বাড়ির এক সদস্য বলেন, ‘‘টিকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পরে সামান্য কিছু শারীরিক অসুস্থতার কথা বলছিল। ১৭ ডিসেম্বর কাঁধে ব্যথা শুরু হয়। তার দু’দিন পর মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে শুরু করে। বাড়ির লোকেরা বললেও ডাক্তারের কাছে যেতে রাজি হননি দীপক। বলেছিলেন, দু’-এক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাব। কিন্তু অবস্থার আরও অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান দীপক।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: নিজের ঢাকে নিজেই কাঠি, ‘অবাঙালিত্ব’ মুছতে কৈলাসের ঢাক কা নিনাদ

ভারত বায়োটেকের দাবি, এই মৃত্যুর সঙ্গে টিকার কোনও সম্পর্ক নেই। মিন্ট-সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংস্থার তরফে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, “টিকা নেওয়ার ৯ দিন পর ওই স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যালোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এই মৃত্যুর সঙ্গে পরীক্ষামূলক ভাবে দেওয়া ডোজের কোনও সম্পর্ক নেই।”

এই ঘটনা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। টুইটারে তাঁর আর্জি, ‘ভিসেরা টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। সবাইকে আবেদন, বিষয়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। টিকা নিয়ে অযথা কোনও ভুল তথ্য বা আতঙ্ক যেন না ছড়ায়, যাতে টিকাকরণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে আমি নিশ্চিত, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, সেটা হলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বোঝা যায়। এত দিন পরে নয়।’

আরও পড়ুন: মুষ্টিভিক্ষার পর কৃষকের বাড়িতে জামাই আদরে মহাভোজ নড্ডার

দীপক টিকা নেওয়ার আগে সমস্ত প্রোটোকল মানা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন পিপলস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইস চ্যান্সেলর রাজেশ কপুর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দীপকের মৃত্যুর পর ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-কে জানানো হয়েছিল। তার আগে সমস্ত নিয়মকানুন মেনেই টিকা দেওয়া হয়েছিল। তিনি যে স্বেচ্ছায় টিকার ট্রায়ালে অংশ নিতে চান, নেওয়া হয়েছিল সেই অনুমতিও।’’ তবে এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাধারণত ৫০ শতাংশ মানুষকে আসল টিকা দেওয়া হয়। বাকি ৫০ শতাংশ মানুষকে দেওয়া হয় ডামি টিকা বা সাধারণ স্যালাইন। রাজেশ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি, দীপককে আসল টিকা না কি ডামি দেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও জানিয়েছেন, টিকা নেওয়ার পরে আধঘণ্টা পর্যবেক্ষণ এবং তার পরেও আরও সাত দিন তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষার নিয়মও পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মানা হয়েছে। তখন কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়েনি বলেই তাঁর দাবি।

দীপকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন মধ্যপ্রদেশ মেডিকো লিগ্যাল ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর চিকিৎসক অশোক শর্মা। প্রাথমিক রিপোর্টে তাঁর অভিমত, কোনও বিষক্রিয়ার ফলে মৃত্যু হয়েছে দীপকের। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার আগে মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে কিছু বলা কঠিন।” মধ্যপ্রদেশ পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement