‘শান্ত’ অসম মুখর মমতার সমালোচনায়

চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরেও সব আশঙ্কায় জল ঢেলে অসম শান্ত। বরাক বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কোথাওই কোনও অশান্তির খবর নেই।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের আগে আশঙ্কা ছিল। উদ্বেগ ছিল কেন্দ্রের, রাজ্যের শাসকদের। আতঙ্কিত ছিলেন মানুষও। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ আকার নিতে পারে, এই ধারণায় রাজ্যে অতিরিক্ত ২২০ কোম্পানি বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনীও আনানো হয়েছিল। রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকায় তা মোতায়েনও করা হয়েছিল।

Advertisement

কিন্তু চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরেও সব আশঙ্কায় জল ঢেলে অসম শান্ত। বরাক বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কোথাওই কোনও অশান্তির খবর নেই।

এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অসমের বাঙালিরা। আর মমতার প্রকাশ্য নিন্দায় সরব অসমের বিভিন্ন দল ও সংগঠন। রাজনীতি নির্বিশেষে দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে, এনআরসি দফতরের তাগাদা সত্ত্বেও কেন লক্ষাধিক নথি যাচাই করে সময়ে ফেরত পাঠাল না পশ্চিমবঙ্গ? এই বাঙালিদের নাম বাদ পড়ার দায়ে মমতাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন অসমের রাজনীতিকরা।

Advertisement

প্রয়াত কংগ্রেস নেতা হিতেশ্বর শইকিয়ার ছেলে তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের দেবব্রত শইকিয়া আজ মমতার ভূমিকার নিন্দা করে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এখন বাঙালিপ্রীতি না দেখিয়ে অসমের বাঙালিদের নাম যাতে বাদ না পড়ে তার জন্য নথি যাচাইয়ের বিশেষ বিভাগ তৈরি করে দিতে পারতেন তিনি। কিছুই না করে এখন তিনি অসমীয়া-বাঙালি বিভাজনে মদত দিচ্ছেন।’’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈয়ের কথায়, ‘‘মমতার অসম নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। এখানে যে ভারতীয় বাঙালি, অসমীয়া, বিহারি, নেপালি, হিন্দু বা মুসলিমদের নাম বাদ পড়েছে, আমরাই তাঁদের হয়ে লড়ব। বাইরের কারও তা নিয়ে রাজনীতি করার দরকার নেই।’’

বিজেপি নেতা, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘‘অসম ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিদেশিদের ভার নিচ্ছে। বাকি বিদেশিদের আশ্রয় দিতে পারেন মমতাদেবী। খামোখা আমাদের রাজ্যে অশান্তি না করে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় কোনও আপত্তি থাকলে আদালতে যান।’’ মুখ্যমন্ত্রী প্রেস উপদেষ্টা হৃষিকেশ গোস্বামী আজ বলেন, ‘‘রাজ্যে কোথাও অশান্তি নেই। যাঁদের নাম বাদ পড়েছে- তাঁরা আন্দোলন না করে বরং আবেদন করতে তৈরি হচ্ছেন। এখানে মিথ্যে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা না করাই ভাল।’’ অসম চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী, অগপ নেতা প্রফুল্ল মহন্তের কথায়, ‘‘তৃণমূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অসমের স্বার্থ বিঘ্নিত করতে বিতর্ক সৃষ্টি করছে, সংসদ অচল করছে।’’ পাশাপাশি, ‘সারা অসম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশন’-এর সভাপতি দীপক দে ও উপদেষ্টা চিত্ত পালের মতে, ‘‘মমতাদেবী মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাঙালিদের পাশে দাঁড়ালে নিশ্চয় স্বাগত জানাব। কিন্তু রাজনীতির স্বার্থে অসমের বাঙালিদের কাজে লাগানো ঠিক হবে না।’’

এ দিকে, ২ ও ৩ অগস্ট পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে অসম সফরে আসছে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। থাকবেন সুখেন্দু শেখর রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রত্না দে নাগ, নাদিমুল হক, অর্পিতা ঘোষ, মমতা ঠাকুর, মহুয়া মৈত্র। দেবব্রত শইকিয়ারা মনে করেন, তাঁরা এসে বিষয়টি নিজেরা আগে বুঝুন। খামোখা জলঘোলা করাটা ওঁদের পক্ষে ঠিক হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement