ফাইল চিত্র।
যে-সে চাবি নয় মোটেও!
লম্বায় কম সে কম দেড় ফুট। তিনখানা পেল্লায় দাঁত তার। অষ্টধাতুর তৈরি বহুচর্চিত চাবি জগন্নাথভক্তদের মুখে ‘কুবের চাবি’ বা ‘কুবের কাঞ্চি’ নামে পরিচিত। অনুরূপ চেহারার আরও দু’জোড়া চাবি এখনও রক্ষিত যথাস্থানে। তবু ‘কুবের চাবি’-র অন্তর্ধানের জেরেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সুখের সংসারে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।
দ্বাদশ শতকীয় মন্দিরের চাবিটি আদতে পুরাতত্ত্বের সামগ্রী। তার দাম লক্ষ লক্ষ টাকা বলে দাবি করে ইতিমধ্যেই সিবিআই-এর কাছে এফআইআর করা হয়েছে। ‘‘চাবি হল রত্নভাণ্ডারের সুরক্ষা কবচ! সুরক্ষা কবচেরই যেখানে সুরক্ষা নেই, সেখানকার অবস্থাটা কী বুঝতে পারছেন?’’— মঙ্গলবার ফোনে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলছিলেন, পুরীর জগন্নাথভক্তদের একটি সংগঠন শ্রী জগন্নাথসেনার আহ্বায়ক প্রিয়দর্শন পট্টনায়ক। খোদ পুরীর কালেক্টরের জিম্মায় থাকা চাবি ট্রেজারি অফিস থেকে লোপাট বলে দাবি করে সোমবার তিনি ভুবনেশ্বরে সিবিআই-এর কাছে অভিযোগ ঠুকে এসেছেন।
বিরোধী কংগ্রেস-বিজেপিও সুর চড়াচ্ছে। বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী বিজয় মহাপাত্র দাবি করেছেন, সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে এবার রত্নভাণ্ডার খুলে দেখা হোক, সেখানে সব কিছু আছে না কি খোওয়া গিয়েছে। বস্তুত রত্নভাণ্ডার খুলে হিসেব মেলানোর দাবি এতই প্রবল যে শাসক দল বিজেডি-র মুখপাত্র দেবাশিস সামন্তরায় জানান, রত্নভাণ্ডার খোলা নিয়ে আইন দফতর এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলছে।
মন্দিরে জগন্নাথদেবের ‘ভাই’ বলে পরিচিত সেবায়েত-গোষ্ঠী দয়িতাপতিদের সমিতির সভাপতি রাজেশ দয়িতাপতি আবার শাসক-শিবিরের কাছের লোক। রাজেশের কথায়, ‘‘দোষ গজপতি মহারাজের। ১৯৭০-এর দশকে ওড়িশা সরকার মন্দিরের দায়িত্ব নিলেও রীতি অনুযায়ী রাজাই মন্দিরের কেয়ারটেকার।’’
মন্দির সূত্রের খবর, রত্নসিংহাসনে আসীন জগন্নাথদেবের গর্ভগৃহ আর জগমোহনের মাঝে রত্নভাণ্ডারের অবস্থান। ভাঁড়ারের বাইরের অংশে বলভদ্র-সুভদ্রা-জগন্নাথের নিত্য ব্যবহৃত অলঙ্কার। ভিতরের সিন্দুকে চাবি-বন্দি সোনা-রুপো-হিরের অলঙ্কাররাশি। ভাণ্ডারের মালিক জগন্নাথ ও মহালক্ষ্মী হলেও বিশ্বাস অনুযায়ী, রত্নের মালিক কুবের।
শেষবার রত্নভাণ্ডারের অলঙ্কারের খতিয়ান নেওয়া হয় ১৯৭৮ সালে। এর পরে ১৯৮৪ নাগাদ জগন্নাথদেবের মাথার সোনার ‘রত্নচিতা’ ভেঙে যায়। তা মেরামতির জন্য রত্নভাণ্ডার থেকে কিছু সোনা নেওয়া হয়েছিল বলে শোনা যায়! তারপরে সিন্দুক খোলার দরকার পড়েনি। মন্দির বিশারদেরা জানাচ্ছেন, ওই সিন্দুক খুলতে তিনটি চাবিই জরুরি। একটি গজপতি রাজার জিম্মায়, একটি রত্নভাণ্ডারের সেবায়েত ‘ভাণ্ডার মেকাপ’-এর দায়িত্বে এবং আর একটি রাজ্য প্রশাসনের কাছে থাকার কথা। সে-ই তিন নম্বর উধাও। জগন্নাথসেনার সন্দেহ, এর পিছনে ‘অ্যান্টিক’ চোরাইচক্র রয়েছে! সেই চক্র আবার রত্নভাণ্ডারে হাত দেয়নি তো! রত্নসিন্দুক খুলে সন্দেহ নিরসনের দাবি ক্রমশ বাড়ছে।