গাড়ির ভিড়। রবিবার শ্রীনগরের রাস্তায়। ছবি: পিটিআই।
এ বছরের ইদের দিনটাতেও ঘরের বাইরে বেরোতে পারেননি মানুষ। আড়াই মাস ধরে উত্তেজনা, বিক্ষোভ, ছররা বন্দুক আর মৃত্যুর খবরেই ডুবে ছিল কাশ্মীর। তার মধ্যেই উরিতে জঙ্গি হামলা। তবে দমবন্ধ এই পরিস্থিতির মধ্যেই আজ উপত্যকায় নেমে এসেছে খোলা হাওয়া। ৮০ দিনের মাথায়, রবিবার কাশ্মীরের সব জায়গা থেকে কার্ফু তুলে নেওয়া হয়েছে।
বহু দিন পরে শ্রীনগরের রাস্তায় আর পাঁচটা দিনের মতো গাড়ি চলাচল করেছে। এমনকী ভিড়ের জন্য বহু রাস্তায় যানজটও হয়েছে। খুলেছে দোকানপাট। শ্রীনগর ও অন্য জেলাগুলিতে দোকান-বাজারে ভিড় ছিল দেখার মতো। এ বারই প্রথম কার্ফুর মধ্যে ইদ কাটিয়েছিল কাশ্মীর। আজ বাজারে ভিড় দেখে এক ছাত্র মনসুর আহমেদের মন্তব্য ‘‘লোকেদের কেনাকাটা দেখে তো মনে হচ্ছে আগামিকাল যেন ইদ। ইদের আগে মানুষ এ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাজার করতে।’’ তিন মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য তলানিতে। কার্ফু উঠে যাওযার সুযোগে আজ চুটিয়ে ব্যবসা করেছেন দোকানিরা। শ্রীনগরের রেসিডেন্সি রোডের দোকানদার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘‘কয়েক মাসে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে কিছুটা ক্ষতি অন্তত পুষিয়ে যাবে।’’
তবে আজ গোটা কাশ্মীর থেকে কার্ফু উঠে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু পরিস্থিতি একেবারে শান্ত হয়ে গিয়েছে, এমনটা মোটেই নয়। রবিবার শ্রীনগরে কয়েকটি জায়গায় ছোট মাপের বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছে। তবে বিকেল পর্যন্ত রাজ্যের কোথাও বড় সংঘর্ষের খবর নেই। রাজ্য প্রশাসনের আশা, সোমবার পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। অবশ্য সেপ্টেম্বরের শুরুতে শ্রীনগরে ও সংলগ্ন এলাকায় কার্ফু তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত তা ছিল আংশিক। গত দু’-তিন ধরে উপত্যকা ক্রমশ শান্ত হয়ে আসায় আজ কাশ্মীরের সব জায়গা থেকে কার্ফু তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মেহবুবা মুফতি সরকার। তবে জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা এখনও জারি রয়েছে। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যখন ভারত-পাকিস্তান কাজিয়া তুঙ্গে, তখন রাজ্য প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে নয়াদিল্লি। কেন্দ্র মনে করছে, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে উপত্যকার পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে হিজবুল মুজাহিদিন গোষ্ঠীর কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকে অশান্ত হয়ে ওঠে উপত্যকা। প্রতিবাদে পথে নামে কাশ্মীরের যুব সমাজ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন প্রায় ৯০ জন বিক্ষোভকারী। আহত কয়েক হাজার। বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশ পুলিশের ছররা গুলিতে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তবে এরই মধ্যে জঙ্গি গোষ্ঠী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আবেদন অগ্রাহ্য করে রাজ্যের পুলিশের দশ হাজার পদের জন্য আবেদন জানিয়েছেন পঁচিশ হাজার কাশ্মীরি যুবক। যুবকদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করেছিল প্রশাসন। আবেদনকারীর সংখ্যা দেখে সেই পদক্ষেপ সফল হয়েছে বলেই মনে করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। যদিও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে কাশ্মীরি যুবকদের ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুপওয়ারা থেকে সব থেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। আর আবেদনের বিচারে কাশ্মীরের সব থেকে উপদ্রুত এলাকা বলে পরিচিত অনন্তনাগ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। জঙ্গিদের হুমকি অগ্রাহ্য করে যে ভাবে কাশ্মীরি যুবকেরা এগিয়ে এসেছে তা দেখে উৎসাহিত কেন্দ্র। ফের কয়েক মাস পরে আর এক দফা নিয়োগ কর্মসূচি চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
গত আড়াই মাস ধরে চলা কাশ্মীরের পরিস্থিতি সামনে এনে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হয়েছে পাকিস্তান। বুরহান ওয়ানির মতো জঙ্গিকে সমর্থনের পাশাপাশি নওয়াজ শরিফ কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তবে এই বিষয় নিয়ে লাহৌরের আদালতে আজ ধাক্কা খেয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী জামাত উদ দাওয়া প্রধান হাফিজ সৈয়দ। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সব মঞ্চে ইসলামাবাদ যাতে সরব হয়, সেই আবেদন জানিয়ে লাহৌর আদালতের দ্বারস্থ হয় হাফিজ। কিন্তু এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় বলে ওই আবেদন খারিজ করে দেয় লাহৌর আদালত।