Uttarkashi Tunnel Rescue Operation

প্রযুক্তি ব্যর্থ, ঢাকলেন র‌্যাট-হোল মাইনাররা

প্রসঙ্গত সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে ‘অগার মেশিন’ ভেঙে যাওয়ায় বিভ্রাট ঘটে উদ্ধারকাজে। তার পরেই হাতে করে খননকাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য র‌্যাট মাইনারদের আনা হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০৭
Share:

র‌্যাট-হোল মাইনিংয়ের জন্য দিল্লি থেকে দু’টি বিশেষজ্ঞ দল আনা হয়েছিল। ছবি: পিটিআই।

একটি যন্ত্র ৫০ জন সাধারণ মানুষের কাজ করতে পারে কিন্তু কোনও যন্ত্রই এক জন অসাধারণ মানুষের বিকল্প নয়— আমেরিকান লেখক এলবার্ট হুবার্ডের এই উদ্ধৃতি যেন উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে ৪১ জন শ্রমিকের উদ্ধারকাজে র‌্যাট হোল মাইনারদের ভূমিকাকেই তুলে ধরে।

Advertisement

ন’বছর আগে এই খনন প্রক্রিয়াকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেছিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি)। উন্নত প্রযুক্তি ও উন্নত বিদেশি যন্ত্রপাতি শেষ পর্যায়ে মুখ থুবড়ে পড়ার পরে অগতির গতি সেই ‘র‌্যাট হোল মাইনিং’ই। যা শেষ বাধা দূর করে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারার সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করল। ১৭তম দিনে অবসান হল গত কয়েক দিনের টানটান অপেক্ষার।

র‌্যাট-হোল মাইনিংয়ের জন্য দিল্লি থেকে দু’টি বিশেষজ্ঞ দল আনা হয়েছিল। যাতে ছিলেন মোট ১২ জন। তাঁদের সঙ্গে ছিল বেলচা, কুঠার ও অন্যান্য যন্ত্র। অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখতে ব্লোয়ারও রাখা হয়। বিশেষজ্ঞ দলে থাকা রাজপুত রাই জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজের জন্য এক জন খননকাজ চালান, আর এক জন ধ্বংসস্তূপ সংগ্রহ করেন এবং তৃতীয় জন সেই সমস্ত পদার্থ ট্রলিতে তুলে সুড়ঙ্গের বাইরে বার করতে সাহায্য করেছেন।

Advertisement

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ আটা হাসনাইন র‌্যাট-হোল মাইনিংয়ের উপরে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ওই পদ্ধতি বেআইনি হলেও উদ্ধারকাজে র‌্যাট-হোল মাইনারদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হয়েছে। হাসনাইন মেনে নিয়েছেন পরিস্থিতি সবসময়ে অনুকূলে থাকে না। ঘণ্টাখানেক কাজের পরে বেরিয়ে আসেন এক দল র‌্যাট মাইনার।

প্রসঙ্গত সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে ‘অগার মেশিন’ ভেঙে যাওয়ায় বিভ্রাট ঘটে উদ্ধারকাজে। তার পরেই হাতে করে খননকাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য র‌্যাট মাইনারদের আনা হয়।

মূলত মাটির নীচে সরু জায়গায় কয়লা সংগ্রহের জন্য ‘র‌্যাট হোল মাইনিং’ করা হয়। এক বার গর্ত খোঁড়ার পরে দড়ি কিংবা বাঁশের সিড়ি বেয়ে সেখানে প্রবেশ করেন খননকারীরা। র‌্যাট-হোল মাইনিংয়ে গর্তগুলি চওড়ায় চার ফুটেরও কম। খননকারীরা কয়লাস্তরে পৌঁছনোর পরে সুড়ঙ্গের পাশ থেকে খুঁড়তে শুরু করা হয়। উত্তোলন করা হয় কয়লা। বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে গোটাটাই হাতে করা হয়। মেঘালয়ে অপরিসর কয়লাক্ষেত্রে এ ভাবে খননকাজ চালানো হয়। যার পোশাকি নাম ‘সাইড কাটিং’। এক বার কয়লার সন্ধান পেলে ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়ে প্রবেশ করেন খননকারীরা। এ ছাড়া ‘বক্স কাটিং’-এর মাধ্যমেও কয়লা সংগ্রহ করা হয়।

বিপদসঙ্কুল ও অবৈজ্ঞানিক বলে ২০১৪ সালে এই প্রক্রিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এনজিটি। কিন্তু তার পরেও নানা জায়গায় বিশেষত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে র‌্যাট-হোল মাইনিং চালু রয়েছে। ২০১৮ সালে অবৈধ খাদানে বন্যার জেরে আটকে পড়েন ১৫
জন। শুধুমাত্র দু’জনের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছিল। ২০২১ সালেও একই রকম পরিস্থিতিতে পাঁচ জন আটকে পড়েন। এ ক্ষেত্রে মিলেছিল তিন জনের দেহ।

তবে এ বারে সিল্কিয়ারার সুড়ঙ্গে সমস্ত রকম নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে বলে দাবি হাসনাইনের। বিশেষজ্ঞেরাও জানান, উত্তরকাশীতে শেষ পর্বে গর্ত খোঁড়ায় সব রকম সাবধানতা নেওয়া হয়। ইসিএলের ডিরেক্টর টেকিনিক্যাল (অপারেশন) নীলাদ্রি রায়ের কথায়, ‘‘উত্তরকাশীতে শেষ অংশে যে পদ্ধতিতে গর্ত তৈরি করা হয়েছে, সেই গর্ত আকারে অনেক ছোট। সেই কারণে সেটিকে অনেকে র‌্যাট হোল বলছেন। কিন্তু প্রযুক্তিগত ভাবে তা র‌্যাট হোল নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement