Yogi Adityanath

Cattle: স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দেশের ‘লাস্ট বয়’, বেওয়ারিশ গরু-বলদের সংখ্যায় প্রথম হল এই রাজ্য

যোগী সরকার রাজ্যে ৫ হাজারের বেশি গোশালা খুলেছে। বেওয়ারিশ গরু দত্তক নেওয়ার জন্য মাসিক অর্থ সাহায্য ঘোষণা করেছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

উত্তরপ্রদেশের বান্দা জেলার লালক সিংহ ব্যাঙ্ক থেকে এক লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে ছয় বিঘা জমিতে মুগ ডালের চাষ করেছিলেন। প্রতিদিন রাত জেগে ফসল পাহারা দিতেন। কিন্তু গত জুন মাসে এক রাতে ডজন খানের বেওয়ারিশ গরু তাঁর জমিতে ঢুকে সমস্ত ফসল নষ্ট করে। কী ভাবে ব্যাঙ্কের দেনা শোধ করেন, সেই চিন্তায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন নান্দনা গ্রামের ৫২ বছরের লালক।

Advertisement

গোরক্ষক বাহিনীর দাপট ও গোহত্যার উপর নিষেধাজ্ঞার জেরে বেওয়ারিশ গরু-বলদ যে উত্তরপ্রদেশের চাষিদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে, তা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। এ বার কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকই জানাল, গোটা দেশে বেওয়ারিশ গরু-বলদের সংখ্যা কমলেও উত্তরপ্রদেশে তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সূচকে উত্তরপ্রদেশ পিছনের সারিতে পড়ে থাকলেও, বেওয়ারিশ গরু-বলদের সংখ্যায় উত্তরপ্রদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে।

কৃষি মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২-র হিসেব অনুযায়ী গোটা দেশে ৫২.৮৭ লক্ষ বেওয়ারিশ গবাদি পশু ছিল। ২০১৯-এর পশু গণনায় তা ৫০.২১ লক্ষে নেমে এসেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে বেওয়ারিশ পশুর সংখ্যা ১০.০৯ লক্ষ থেকে বেড়ে ১১.৮৪ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে। বৃদ্ধির হার ১৭ শতাংশর বেশি। গোটা দেশে যত বেওয়ারিশ গরু-বলদ রয়েছে, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও বেশি রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। রাজ্যের ৭৫টি জেলার মধ্যে কয়েকটি বাদে বাকি সবগুলিতেই বেওয়ারিশ গরুর
সংখ্যা বেড়েছে।

Advertisement

কেন উত্তরপ্রদেশে বেওয়ারিশ গবাদি পশুর সংখ্যা বাড়ছে?

কৃষি মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, গোহত্যার নিষেধাজ্ঞা, গোরক্ষক বাহিনীর দাপটে এখন গরু জবাই বন্ধ। গবাদি পশু দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিলে বা চাষের লাঙ্গল টানার কাজে অক্ষম হয়ে পড়লে তা চাষি, পশুপালকরা জবাইয়ের জন্য বিক্রি করে দিতেন। এখন তা হচ্ছে না। এ দিকে গরিব চাষি, গোয়ালাদের পক্ষে অক্ষম গরু পালন করা সম্ভব নয়। তাই তাঁরা রাস্তায় গরু-বলদ ছেড়ে দিচ্ছেন।

এই সব অভুক্ত পশুই চাষের জমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট করছে। যখন-তখন হাইওয়ে আটকে বসে থাকার ফলে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামে চাষিদের তাড়া খেয়ে বেওয়ারিশ গরুর পাল শহরের মধ্যেও খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়ছে।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিক অধ্যাপক বিকাশ রাওয়াল আগেই গবেষণা করে বলেছিলেন, দশ বছরে বেওয়ারিশ পশুর সমস্যা এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে যে এই সব গরু পালন করতে প্রতিরক্ষা খাতের দেড় গুণ অর্থ খরচ করতে হবে। এখন সরকার পশুপালন, ডেয়ারি ক্ষেত্রে যে খরচ করে, তার ৩৫ গুণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। রাওয়াল বলেন, “আসলে এর পিছনে কোনও দিনই বিশেষ অর্থনীতি ছিল না। ছিল শুধু মানুষকে হেনস্থা করা, গোরক্ষার নামে রাজনীতি করা।” সরকারি হিসেব বেওয়ারিশ পশুর সংখ্যা আদৌ ঠিক না কি, আসলে সংখ্যাটা তার থেকেও বেশি, তা নিয়েও রাওয়াল সংশয় প্রকাশ করছেন।

যোগী সরকার রাজ্যে ৫ হাজারের বেশি গোশালা খুলেছে। বেওয়ারিশ গরু দত্তক নেওয়ার জন্য মাসিক অর্থ সাহায্য ঘোষণা করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মুখে গো-ভজনা করলেও এইসব গোশালায় না খেতে পেয়ে বহু পশুর মৃত্যু হচ্ছে। চাষিদের দুর্ভোগ তো রয়েইছে। বেওয়ারিশ পশু ফসল নষ্ট করলে চাষিদের জন্য কি ক্ষতিপূরণের বন্দোবস্ত রয়েছে?

কৃষি মন্ত্রকের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় বন্য জন্তুর হামলায় ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বন্দোবস্ত রয়েছে। কিন্তু কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, হাতির মতো বন্য জন্তুর হামলায় ফসল নষ্টে ক্ষতিপূরণ মিললেও বেওয়ারিশ গরু-বলদে ফসল খেয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণ মিলছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement