রাম-রাজ্যে রেহাই নেই বাবাসাহেবেরও!
ভীমরাও অম্বেডকর নামের মধ্যে শেষে ‘রামজি’ জুড়ল উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার। উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আর এক ‘রাম’— রাম নাইকের সুপারিশে। সব সরকারি কাজে এ বার থেকে পরিবর্তিত নামই ব্যবহার হবে। বিজেপি’র এক নেতা তো বলেই দিলেন, ‘‘বাবাসাহেব হিন্দু ধর্ম ছেড়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ‘রামজি’ জুড়ে ফের হিন্দু হলেন তিনি। এটি তাঁর ঘর-ওয়াপসি।’’
‘রামজি’ অম্বেডকরের বাবার নাম। রাজ্যপালের মতে, মরাঠিতে বাবার নাম নিজের নামে যুক্ত করাই রেওয়াজ। উত্তর ভারতে এতদিন অম্বেডকরের ভুল নাম প্রচার হত। আর এই নিয়েই তুলকালাম রাজনীতিতে। বসপা নেত্রী মায়াবতী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাবাসাহেবের অনুগামীদের উপরে অত্যাচার করা হচ্ছে। অথচ সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য এই নামবদল করা হল।’’ বিরোধীরা তো বটেই, বিজেপির সাংসদদেরও অসন্তোষ, বাবাসাহেবের নাম বদলের দরকারটা কী?
ঘরোয়া মহলে বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘দরকার’ অনেক। মায়াবতীর দলের রাজ্যসভার প্রার্থী ‘ভীমরাও অম্বেডকর’কে সদ্য হারিয়ে দিয়েছে বিজেপি। বিরোধীরা প্রচার করছে, নরেন্দ্র মোদী ‘দলিত-বিরোধী’। সুপ্রিম কোর্টে দলিত আইন লঘু হওয়ার পর বিরোধীদের একজোট করে পথে নেমেছেন রাহুল গাঁধী। আর গোরক্ষপুর, ফুলপুর উপনির্বাচনের ফল দেখিয়েছে, বিজেপি থেকে দূরে সরছে দলিতরা। ফলে বাবাসাহেবের সঙ্গে তাঁর বাবার নাম জুড়ে ‘দলিত-রাম-অম্বেডকর’—এক ঢিলে তিন ক্ষেত্রে ফায়দা তুলতে চাইল বিজেপি। ১৪ এপ্রিল অম্বেডকরের জন্মদিনেও তেড়েফুঁড়ে আসরে নামছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশেই দলিতদের মন টানতে সকলকে হিন্দু-ছাতার তলায় আসার ডাক দিয়েছিলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। সেই সূত্র ধরেই ‘দলিত আইকন’-এর নামে হিন্দুত্বের ছোঁয়া লাগাল বিজেপি। তবে সরকারের যুক্তি, সংবিধানেও বাবাসাহেব সই করেছিলেন ‘ভীমরাও রামজি অম্বেডকর’ বলে। ১৯৭৩ সালে ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছিল এই নামে। ইংরেজিতে ‘বি আর অম্বেডকর’-এ ‘আর’ শব্দটি তাঁর বাবার নাম— রামজি।
মায়াবতীর পাশাপাশি সমাজবাদী পার্টির একাধিক নেতা আজ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সপা-বসপা জোটে ভয় পেয়েই বিজেপি নতুন ফন্দি আঁটছে। এতেও তাদের ব্যর্থতা ঘুচবে না।’’ কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার মতে, ‘‘মোদী দলিত-আদিবাসীদের অবজ্ঞা করার ফল পাচ্ছেন ভোটে। তাই দিশাহারা হয়ে প্রতীকী বদল করছেন।’’
আরও পড়ুন: মেয়েরা কেন থেমে থাকবে, প্রশ্ন তরুণী সরপঞ্চের
দলিতদের সম্পর্কে সরকারি মনোভাবে এমনিতেই ক্ষুব্ধ বিজেপির নেতারা। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ সাবিত্রী ফুলে কার্যত বিদ্রোহী হয়ে এপ্রিলের গোড়ায় বিক্ষোভ-কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন। বিজেপির দলিত সাংসদ উদিত রাজও বলেন, ‘‘অহেতুক বিতর্ক বাধিয়ে নাম বদলের কী দরকার ছিল? দলিতদের মধ্যে এই নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে।’’