রেণুকা চৌধুরি সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদী যা বলেছেন, তার তীব্র নিন্দা শুরু করেছে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে বলেও দাবি করা হচ্ছে। —ফাইল চিত্র।
রেণুকা চৌধুরির প্রতি নরেন্দ্র মোদীর কটাক্ষকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার উত্তাল হয়ে উঠল সংসদ। প্রধানমন্ত্রীকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে আক্রমণে নামল কংগ্রেস। মহিলা সাংসদরা তুমুল হট্টগোল শুরু করলেন। তার জেরে মুলতুবিও করে দিতে হল রাজ্যসভা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ রেণুকা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর হওয়া সত্ত্বেও চেয়ারপার্সন বেঙ্কাইয়া নায়ডু নিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছেন না বলে কংগ্রেস অভিযোগ করেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দেওয়া হবে বলেও রেণুকা চৌধুরি জানিয়েছেন।
বুধবার সংসদের দুই কক্ষেই ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সময় মোদী আধার প্রসঙ্গে মুখ খোলেন। আধারের পরিকল্পনা অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে হয়েছিল বলে মোদী দাবি করেন। রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রেণুকা চৌধুরী হাসতে শুরু করেন।
রেণুকার সশব্দ হাসিতে বিরক্তি প্রকাশ করেন রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তিনি কংগ্রেস সাংসদের আচরণের নিন্দা করেন এবং তাঁকে সতর্ক করেন।
বেঙ্কাইয়া নায়ডুর এই ধমকের মাঝেই রেণুকার দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বেঙ্কাইয়াকে বলেন, ‘‘সভাপতিজি, আপনাকে অনুরোধ করছি, রেণুকাজিকে কিছু বলবেন না। রামায়ণ সিরিয়ালের পরে এমন হাসি শোনার সৌভাগ্য এত দিনে হল।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যসভার টিভি স্থির, সরব বিরোধীরা
পরে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের নিন্দায় সরব হয় কংগ্রেস। দলের টুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘‘প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্যসভার সদস্য রেণুকা চৌধুরির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন, আমরা তার নিন্দা করছি। রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন শ্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে আমরা নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে অনুরোধ করছি এবং সভার সদস্যের উপযুক্ত সম্মান সুনিশ্চিত করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’’
রেণুকা চৌধুরি নিজেও প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, তাঁর কাছ থেকে আর কী-ই বা আশা করা যায়? আমি ওই স্তরে নেমে তাঁর কথার জবাব দিতে পারব না। একেই আসলে বলা হয় মহিলাদের সম্মানহানি করা।’’
বিরোধী পক্ষের এই তীব্র নিন্দাতেও অবশ্য বিজেপি নেতৃত্বের টনক নড়েনি। রেণুকা সম্পর্কে মোদীর মন্তব্যটির সূত্র ধরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট শেয়ার করেন, যাতে একটি ভিডিও রয়েছে। সেই ভিডিওয় রামায়ণের চরিত্র শূর্পনখার অট্টহাস্য দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: জনতার দরবারে রাহুল, মোদীকে হটানোর বার্তা
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়ে যায় রাজ্যসভায়। সনিয়া গাঁধী এ দিন সকালে সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় যে রেণুকা চৌধুরির সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে সুর চড়ানো হবে সংসদে। ফলে রাজ্যসভা বসতেই তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেন বিরোধী পক্ষের মহিলা সাংসদরা। প্রধানমন্ত্রীকে দুঃপ্রকাশ করতে হবে বলে তাঁরা দাবি তোলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় মুলতুবি করতে হয় সভা। পরে অবশ্য আবার সভার কাজ শুরু হয়।
রেণুকা চৌধুরি এ দিন কিরেন রিজিজুর বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন। ‘‘দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু, দেশের মহিলাদের সম্মান রক্ষা করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু তিনি যে ভাবে এক জন মহিলাকে অসম্মান করলেন, তাতে তাঁর রুচির পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। আমি তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনতে চলেছি।’’