পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়লেই আমাদের রাতের ঘুম ছুটে যায়! কিন্তু যেটা আমরা এখনও জানি না, কোন কোন উপায়ে পেট্রোল পাম্পগুলি আমাদের ঠকায়! কী ভাবে আমাদের তেল কম দেয় পেট্রোল পাম্পগুলি! পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ুক বা না বাড়ুক।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের চালানো অভিযানে দেখা গেল, আমাদের ঠকানোর জন্য পেট্রোল পাম্পগুলিতেই ফাঁদ পেতে রাখা হয়। ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরনের একটি ইলেকট্রনিক চিপ। যার দাম বড়জোড় হাজার তিনেক টাকা। পেট্রোল, ডিজেল ভরার জন্য আমরা গাড়িগুলিকে পেট্রোল পাম্পের যে মেশিনগুলির সামনে দাঁড় করাই, সেই মেশিনগুলিতেই খুব কৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া থাকে ওই বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক চিপ। আমাদের ঠকানোর ‘খেলা’টা খেলে ওই ইলেকট্রনিক চিপই। ওই চিপের কারসাজিতেই প্রতি এক লিটার পেট্রোল, ডিজেলে অন্তত ৫০ মিলিলিটার করে তেল কম দেয় পেট্রোল পাম্পের মেশিনগুলি। একটি তার দিয়ে ওই ইলেকট্রনিক চিপটি পেট্রোল পাম্পের মেশিনে লাগানো থাকে। আর আমরা যে ভাবে ঘরে টিভি চালাই, ঠিক সেই ভাবেই রিমোট কন্ট্রোলে চালানো হয় ওই চিপটিকে।
চিপটি কী করে, জানেন?
লাগাম টেনে আমরা যেমন ঘোড়ার ছোটার গতি কমাই, ঠিক তেমন ভাবেই ওই বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক চিপটি পেট্রোল পাম্পের তেল ভরার মেশিনটির রাশ টেনে ধরে। যে গতিতে ওই মেশিন থেকে পেট্রোল, ডিজেল বেরিয়ে আসার কথা, সেই গতিটাকেই কমিয়ে দেয়। খুব সামান্য পরিমাণে নয়, ৬ শতাংশ তো বটেই! আর এই ভাবেই প্রতি এক লিটারে অন্তত ৫০ মিলিলিটার করে ‘তেল মেরে’ দেয় পেট্রোল পাম্পগুলি।
তাতে কতটা ঠকতে হয় আমাদের?
হিসেব কষে দেখা যাচ্ছে, এক লিটার পেট্রোল, ডিজেল ভরতে চাইলে, এই ইলেকট্রনিক চিপ বসানো পেট্রোল পাম্পের মেশিনগুলি আদতে আমাদের দেয় ৯৪০ মিলিলিটার তেল। মানে, লিটারে অন্তত ৬০ মিলিলিটার তেল কম দেয় পেট্রোল পাম্পগুলি।
পুলিশ জানাচ্ছে, এই ভাবে মাসে কম করে গড়ে ১৪ লক্ষ টাকা বাড়তি রোজগার করেছেন ওই পেট্রোল পাম্পগুলির মালিকরা।
হালে উত্তরপ্রদেশের রাজধানী শহর লখনউয়ের আটটি পেট্রোল পাম্পে এমনই একটি ‘তেল চোর চক্রে’র হদিশ মিলেছে। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স অভিযান চালিয়েছে লখনউয়ের ওই আটটি পেট্রোল পাম্পে। আটক করেছে ওই বিশেষ চিপের ‘কারিগর’ সহ বেশ কয়েক জনকে।
আরও পড়ুন- ছেলে কালো, কনে ছাদনাতলা থেকেই পালাল
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স জানিয়েছে, ওই বিশেষ ইলেকট্রনিক চিপটি বানিয়েছে রবিন্দার নামে এক যুবক। তাকে আটক করা হয়েছে। জেরায় রবিন্দার জানিয়েছে, এক ইঞ্জিনিয়ারই তাকে ওই বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক চিপ বানাতে শিখিয়েছিল। এমন প্রায় এক হাজার ইলেকট্রনিক চিপ বানিয়ে রবিন্দার সেগুলি উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে বিক্রি করেছে। সিতাপুর, চিনহাট, সমতা মুলক ও কেজিএমইউ-এর পেট্রোল পাম্পগুলি থেকে ওই বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক চিপগুলি পুলিশ উদ্ধার করেছে। কারা কারা রিমোট কন্ট্রোলে ওই ইলেকট্রনিক চিপগুলি চালাতো, তাদেরও নামধাম জানা গিয়েছে।
পাম্পগুলির মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে।