প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কঠিন প্রশ্নপত্র নয়, ভয় লাগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার। একের পর এক পরীক্ষায় দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে সরকারি চাকরির প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এখন এই আতঙ্কই তাড়া করে বেড়াচ্ছে উত্তরপ্রদেশের সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের। আগামী ৩১ অগস্ট পুলিশের চাকরির পরীক্ষা চলবে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে। এই পরীক্ষা এখন নির্বিঘ্নে করানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রাজ্য সরকারের।
কারণ মাস কয়েক আগেই পুলিশের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল উত্তরপ্রদেশে। যে ঘটনায় নানা প্রশ্ন এবং অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই পুলিশের পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়। আবারও সেই পরীক্ষা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। তবে এ বার আরও সতর্ক তারা। নজরদারিতে কোনও রকম ফাঁকফোঁকর রাখতে চাইছে না তারা। আগের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতেও বেশ কিছু পদক্ষেপ এবং নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
বরেলীর এক পরীক্ষাকেন্দ্রে শুক্রবার নির্ধারিত সময়েই পৌঁছেছিলেন পরীক্ষার্থীরা। ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা এক পরীক্ষার্থী সংবাদমাধ্যমকে জানান, সম্প্রতি পুলিশের যে পরীক্ষা হয়েছিল, তা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠে। তার পরই বাতিল হয়ে যায়। তবে এ বারের আয়োজন দেখে তিনি খুশি। তাঁর কথায়, “আগের বার পরীক্ষার জন্য ভাল প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু বাতিল হয়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এ বার আরও ভাল প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি।”
আগরার এক পরীক্ষার্থী আবার বলেন, “প্রশ্নপত্র কঠিন হোক, তাতে আপত্তি নেই। ভয়ও পাই না। কিন্তু প্রশ্নপত্র যেন ফাঁস না হয়। আমাদের এখন সবচেয়ে বড় ভয় সেটাই। দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নেন চাকরিপ্রার্থীরা। তার পর যখন শুনি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, পরীক্ষা বাতিল হবে, তখন প্রচন্ড হতাশ লাগে। সারা বছরের পরিশ্রম যেন এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়।” তাঁর মতোই বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীরই এক সুর। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হোক, কিন্তু ফাঁস যেন না হয়।
তবে এ বার অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর করা হয়েছে পরীক্ষাব্যবস্থা। পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার জন্য পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। কোনও ভুয়ো পরীক্ষার্থী যাতে ফাঁক দিয়ে গলে যেতে না পারে, তার জন্য এই ব্যবস্থা। এ ছাড়া আধার কার্ডে থাকা ছবির সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের ছবি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্লুটুথের মাধ্যমে যাতে নকল না করতে পারেন কেউ, তার জন্য আলাদা ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
মেডিক্যালের সর্বভারতীয় পরীক্ষার (নিট) প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা গোটা দেশে তোলপড়া ফেলে দিয়েছিল মাস দুয়ের আগেই। তার মধ্যেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। যার জেরে সরকার সেই পরীক্ষা বাতিল করে দেয়। রাজ্য জুড়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তে পথে নামেন চাকরিপ্রার্থীরা। পর পর প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় তাই এ বার অনেক বেশি সতর্ক পদক্ষেপ করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।