অমেঠীর জন বিশ্বাস যাত্রায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মঞ্চে উপস্থিত কারও মুখেই মাস্ক নেই। প্রবল ভিড়েও লঙ্ঘিত হল কোভিড-বিধি। ছবি— পিটিআই।
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপি যে বিশুদ্ধ হিন্দু তাস নিয়ে খেলায় নেমেছে, ইতিমধ্যেই তা প্রকাশ্যে এসেছে। এই খেলায় তাদের প্রধান কুশীলব মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা, গোরক্ষনাথের মঠাধীশ। ধর্মীয় জিগির তুলে প্রতিপক্ষকে বিঁধতে কোনও সুযোগ ছাড়ছেন না তিনি। আর জায়গাটা যদি অমেঠী হয়, অবধারিত ভাবে চলে আসে কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধীর প্রসঙ্গ।
হতে পারে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের গড় হিসেবে পরিচিত অমেঠী আসনটি বিজেপির তারকা প্রার্থী স্মৃতি ইরানির কাছে খুইয়েছেন রাহুল। কিন্তু অমেঠী আর কংগ্রেস এখনও অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। সেই কংগ্রেস, যার নেতা রাহুল গাঁধী ‘হিন্দু বনাম হিন্দুত্ববাদী’ তত্ত্ব প্রচারে এনে যোগীদের বিঁধছেন। সোমবার যোগী তাই নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন রাহুলের বিরুদ্ধে। আর সেই আক্রমণ রাহুলের হিন্দু পরিচিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, হিন্দু ধর্ম নিয়ে বলার অধিকার কোথায় পেলেন রাহুল, যাঁর পূর্বপুরুষ নিজেকে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল হিন্দু’ বলে ঘোষণা করেছিলেন? আর যোগীর এই সব মন্তব্যের পাল্টা তাঁকে ঝাঁঝালো আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা টুইটে যোগীকেই বলেছেন, ‘অ্যাক্সিডেন্টাল যোগী, ইন্টেনশনাল যোগী। এই সব এলোমেলো ও উৎপটাং কথাবার্তা তাঁর পরাজয়ের ইঙ্গিতই দিচ্ছে।’
ঠিক কী বলেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী? যোগী বলেছেন, “রাহুল কি সত্যিই হিন্দু রীতি-রেওয়াজে অভ্যস্ত? তিনি তো মন্দিরে গিয়ে কী ভাবে বসতে হয়, সেটাই জানেন না। পুজারীকে বলে দিতে হয় সে সব। সেই রাহুল আবার ‘হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদ’ নিয়ে নানা অবান্তর কথা বলে চলেছেন। উনি তো হিন্দুই নন। ‘অ্যাক্সিডেন্টাল হিন্দু’র উত্তরসূরি যেমন হিন্দু হতে হয়, উনি তেমনই হিন্দু। তাই অমেঠীর ভোটারদের সঙ্গেও অ্যাক্সিডেন্টাল ব্যাপার স্যাপার করেন। ভোটের সময় এলেই এঁরা হিন্দু হন। না জানেন হিন্দু রীতি, না বোঝেন হিন্দুত্ববাদ।” এর পরেই যোগী নিজের প্রসঙ্গ টানেন। বলেন, “আমার কোনও লুকো নো কর্মসূচি নেই। আমি প্রকাশ্যেই বলি, আমি ভারতীয়, হিন্দুত্ব আমার সাংস্কৃতিক পরিচিতি। ভোটের জন্য অন্য সম্প্রদায়কে তোষণ করি না। সকলকে বলতে বলি, গর্ব করে বলো তুমি হিন্দু। আর যাঁদের লুকনো কর্মসূচি থাকে, তাঁরা ভোটের সময়ে বড় হিন্দু হয়ে ওঠেন। অন্য সময়ে তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।”
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র সুরজেওয়ালা বলেন, “আদিত্যনাথকে রাজনৈতিক যোগী বললে সাধুদের অপমান করা হয়। উনি সাধুদের গেরুয়া বসনের অপমান করছেন। পাঁচ বছরে কী করেছেন, সেটা উনি বলেন না। সব থেকে বড় ‘অপরাধ প্রদেশ’ তৈরি করেছেন। কত চাকরি দিয়েছেন, সেটা বলেন না। উনি মানুষকে হিন্দু-মুসলমানে বিভাজন করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন।”