অনলাইন বৈঠকে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
যোগী সরকার তথা বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের পরে কংগ্রেস প্রয়োজনে অন্য দলকে সমর্থন করবে বলে জানিয়ে দিলেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। যার অর্থ, ভোটের আগে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও রকম সমঝোতা না হলেও, ভোটের পরে অখিলেশ যাদবের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা খোলা রাখছেন প্রিয়ঙ্কা। আজ প্রিয়ঙ্কা এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, “অবশ্যই, কেন নয়!’’ কংগ্রেস যে বিজেপিকে হঠাতে প্রয়োজনে ভোটের পরে অন্য দলকে সমর্থনের কথা ভাববে, তা বুঝিয়ে প্রিয়ঙ্কা বলেন, “আমরা কেন করব না! এ নিয়ে কোনও সংশয়ই নেই।”
প্রিয়ঙ্কা আজ যোগী জমানায় উন্নাওয়ের গণধর্ষণের নির্যাতিতার মা আশা সিংহ, সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া সদফ জাফর, আশা-কর্মীদের আন্দোলনের নেত্রী পুণম পাণ্ডে-সহ ৫০ জন মহিলা কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। উত্তরপ্রদেশ ভোটের জন্য আজ কংগ্রেসের প্রথম দফায় মোট ১২৫ জনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছে। প্রিয়ঙ্কার ৪০ শতাংশ আসনে মহিলা প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি মেনে তাঁদের মধ্যে ৫০ জন মহিলা। কংগ্রেস সূত্রের খবর, জাতপাতের সমীকরণ মাথায় রেখে ১২৫ জনের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ঠাকুর, তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি, মুসলমান, বৈশ্য— সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।
এর মধ্যে আশা সিংহকে প্রার্থী করা প্রিয়ঙ্কার সব থেকে বড় চমক বলে কংগ্রেস নেতারা দাবি করছেন। বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ২০১৭-তে আশাদেবীর কিশোরী কন্যাকে চাকরি দেওয়ার নাম করে বাড়িতে ডেকে ধর্ষণের অবিযোগ ওঠে। যোগী সরকারের পুলিশ বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে রাজি হয়নি। সেঙ্গারের লোকেরা আশার স্বামীকে মারধর করে। সেই অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁকেই মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করে মারধর করে পুলিশ। পুলিশি হেফাজতেই তাঁর মৃত্যু হয়। আশার কন্যা যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন। গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। দিল্লির তিস হাজারি কোর্ট কুলদীপকে কারাদণ্ড দিলেও উচ্চ আদালতে মামলা চলছে।
আজ প্রার্থী হিসেবে আশা সিংহের নাম ঘোষণা করে প্রিয়ঙ্কা বলেন, “উনি ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন। আমরা ওঁকে সুযোগ দিয়েছি যে নিজের সংঘর্ষ চালিয়ে যান। যে ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ওঁকে দমন করা হয়েছিল, পরিবারের উপর অত্যাচার হয়েছিল, সেই ক্ষমতাই উনি নিজের হাতে নিন আর নিজের জন্য নিজের লড়াই লড়ুন।”
মহিলা ভোটব্যাঙ্ককে প্রিয়ঙ্কা আলাদা ভাবে পাখির চোখ করলেও, তিনি মেনে নিয়েছেন, দীর্ঘদিন উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতার বাইরে থাকার ফলে আড়াই বছর আগেও তৃণমূল-স্তরে কংগ্রেসের সংগঠন বলে কিছু ছিল না। সেই পরিস্থিতি থেকে কংগ্রেসকে নির্বাচনে নামা অন্যতম দল হিসেবে তুলে ধরা গিয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, উত্তরপ্রদেশের ভোটে ক্রমশ বিজেপি বনাম সমাজবাদী পার্টির লড়াই-ই প্রধান হয়ে উঠছে। ফলে ভোটের পরে তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে, এসপি-কে সমর্থন করে ক্ষমতার কাছাকাছি আসার কথাও প্রিয়ঙ্কা ভেবে রাখছেন। আজ প্রিয়ঙ্কা বলেন, “আমরা যত বেশি সম্ভব আসন জয়ের চেষ্টা করব। উত্তরপ্রদেশের বর্তমান সরকারকে হটাতেও আমাদের ভূমিকা থাকবে বলে দেখতে পাচ্ছি।” শুধু বিজেপি নয়। কংগ্রেস ছেড়েও অনেকে এসপি-তে যোগ দিয়েছেন। প্রিয়ঙ্কা মেনে নিয়েছেন, কংগ্রেস ছেড়ে এসপি-তে গিয়ে প্রার্থী হলে জিতবেন ভেবেই কেউ কেউ কংগ্রেস ছাড়ছেন।
চল্লিশ শতাংশ আসনে মহিলা প্রার্থী দিলেও প্রিয়ঙ্কার নিজে ভোটে লড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ভোটের পরেও দলের সংগঠন মজবুত করতে তিনি উত্তরপ্রদেশেই থাকবেন বলে প্রিয়ঙ্কা দাবি করেছেন। উত্তরপ্রদেশে প্রিয়ঙ্কার মহিলা ভোটব্যাঙ্কের মডেল সাফল্য পেলে জাতীয় স্তরেও তাঁর ভূমিকা বাড়বে বলে অনেকেই মনে করছেন। প্রিয়ঙ্কার অবশ্য দাবি, অন্য কোথাও দল চাইলে তিনি ‘অল্পস্বল্প’ দায়িত্ব পালন করবেন।