National News

বেনজির: সুপ্রিম কোর্টে কার্যত বিদ্রোহ চার বিচারপতির

শুক্রবার দিল্লিতে বিচারপতি জে চেলামেশ্বরের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে চেলামেশ্বর ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি কুরিয়ানা জোসেফ, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি মদন লোকুর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ১৩:০৯
Share:

সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক বিষয়ে মুখ খুললেন চার বিচারপতি। এ ঘটনা নজিরবিহীন। ছবি: পিটিআই।

ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটালেন সুপ্রিম কোর্টের চার প্রবীণ বিচারপতি। দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে প্রকাশ্যে আঙুল তুললেন দেশের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে। শীর্ষ আদালতে মামলা বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়ে গরমিলের অভিযোগ তুললেন এঁরা। মুখ খুললেন ‘বিচারবিভাগের ভিতরে অনিয়ম’ নিয়েও।

Advertisement

সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা হাইকোর্টের তত্কালীন প্রধান বিচারপতি সিএস কারনানের ঘটনা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল গোটা দেশে। বিচারপতিদের দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে, জেল পর্যন্ত খাটতে হয়েছে কারনানকে। এ দিনের ঘটনা ধারে এবং ভারে তাকেও ছাপিয়ে গেল।

শুক্রবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতি জে চেলামেশ্বর, বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি মদন লোকুর। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, প্রধান বিচারপতির নিজের যে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ, এই চারজনই তার সদস্য।

Advertisement

আরও পড়ুন: মুম্বইতে জমি চাইবেন না, পাক সীমান্তে যান, নৌসেনাকে গডকড়ী!

সর্দারের চিনা ছাঁদ নিয়ে চিন্তায় ভাস্কর

চার বিচারপতির অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন ঠিকঠাক চলছে না। কোনও রকম নিয়ম না মেনেই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল মামলাগুলো জুনিয়র বিচারপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সব অভিযোগ তুলে ধরে দু’মাস আগেই প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওই চার বিচারপতি। এ দিন চেলামেশ্বর বলেন, “আদালতের প্রশাসনিক বিষয়টি জানাতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তাঁকে জানানো হয়েছিল কোনও কিছুই ঠিকঠাক চলছে না। এর একটা বিহিত দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্য এটাই যে, আমাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।”

প্রধান বিচারপতিকে লেখা বিচারপতিদের চিঠির কিছু অংশ।

সংবাদমাধ্যমকে ডেকে সারা দেশের সামনে এ ভাবে বিচার বিভাগের, বিশেষত শীর্ষ আদালতের, অন্দরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ করা হল তা যে বেনজির তা মেনে নিয়েছেন চারজন। তাঁদের কথায়, বিষয়টি তুলে ধরা ছাড়া অন্য কোনও পথ ছিল না। কারণ, “যদি বিচারবিভাগে নিরপেক্ষতা না থাকে, তা হলে গণতন্ত্রেরই অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।”

সুপ্রিম কোর্টে কোন মামলার দায়িত্ব কার বা কাদের এজলাসে যাবে এটা ঠিক করেন প্রধান বিচারপতি। এই মামলা বণ্টন নিয়েই গুরুতর অভিযোগ চেলামেশ্বর, জোসেফ, গগৈ এবং লোকুরের। তাঁদের কথায়, “সুশৃঙ্খল ভাবে এবং দক্ষতার মামলা চালানোর জন্যই প্রধান বিচারপতির হাত দিয়ে মামলা বণ্টনের প্রথা চলে আসছে। এর অর্থ এই নয় যে প্রধান বিচারপতি অন্যদের ঊর্ধ্বতন (সুপিরিয়র)।... সমানদের মধ্যে প্রধান বিচারপতি এক নম্বরে আছেন মাত্র, এর বেশি বা কম আর কিছু নয়।”

উদাহরণ হিসাবে তাঁরা বিচারপতি বিএইচ লোয়ার হত্যা মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়েছিল বিচারপতি লোয়ার। তাঁর এজলাসেই সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো এনকাউন্টার মামলার শুনানি চলছিল। লোয়ার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়। প্রথম চার বেঞ্চের কাছে না গিয়ে কোর্ট নম্বর ১০-এ সেই মামলাটি বন্টন করা হয় বলে জানান বিচারপতিরা। এর পাশাপাশি, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির কেলেঙ্কারি মামলার বন্টন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা।

তবে দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও সরাসরি তাঁর ইমপিচমেন্টের কোনও দাবি তাঁরা তোলেননি। প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বলেন, “দেশ ঠিক করুক প্রধান বিচারপতিকে ইমপিচ করা উচিত কিনা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement