কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং মোদী মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য এর আগে অনেককেই সরাসরি আক্রমণ করেছেন। সেই তালিকায় এ বারে নাম জুড়ল সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বি এন শ্রীকৃষ্ণের। গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোর গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনের অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের কারামুক্তির বিষয়ে কিছু দিন আগেই আরও আনেকের সঙ্গে শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন বিচারপতিও মুখ খুলেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে একটি কথোপকথনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমাকে স্বীকার করতেই হবে, যদি জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে বলি প্রধানমন্ত্রীর মুখটা আমার পছন্দ নয়, তা হলে কোনও কারণ না দেখিয়েই আমার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হতে পারে। গ্রেফতার করা হতে পারে। জেলেও ভরে দিতে পারে।’’
নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করা যে ‘ঝুঁকি’-র, তা প্রাক্তন বিচারপতির মুখেও উঠে আসার পরে বিষয়টি নিয়ে সুর চড়ান বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী-সহ অনেকেই। আর তার পরেই মোদীর ‘মুখ বাঁচাতে’ আসরে নামেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। একটি সংবাদপত্রে দেওয়া বি এন শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাৎকার থেকে ওই অংশের ছবি তুলে ধরে শনিবার একগুচ্ছ টুইট করেছেন রিজিজু। তাতে লিখেছেন, ‘যাঁরা কোনও বাছবিচার ছাড়াই সর্বক্ষণ প্রচুর জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে অকথা-কুকথা বলেন, তাঁরাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কান্নাকাটি জুড়েছেন। কংগ্রেসের জরুরি অবস্থা জারি করা নিয়ে এঁরা কখনও কিছু বলবেন না। কোনও আঞ্চলিক দলের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করার সাহসটুকুও নেই।’
রিজিজুর বক্তব্য, শীর্ষ আদালতের কোনও প্রাক্তন বিচারপতি সত্যি সত্যি এমন কিছু বলেছেন কি না, তা তাঁর জানা নেই। তবে কারও নাম না করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যদি এটা সত্যি হয়ে থাকে, তা হলে উনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, এই কথাগুলো তারই মর্যাদায় আঘাত করে।’’
আইনমন্ত্রীর এই সমস্ত কথার বিরোধিতা আসতে শুরু করেছে বিরোধী শিবিরগুলি থেকে। তাদের দাবি, নিরপেক্ষ এবং ওজনদার কারও মুখে মোদী সরকারের সমালোচনা শোনা গেলেই আগ্রাসী হয়ে আক্রমণে নেমে পড়েন অনুরাগ ঠাকুর বা কিরেন রিজিজুর মতো বিজেপির তাবড় নেতারা। তাঁদের মন্তব্য, ‘‘রিজিজুর প্রতিক্রিয়াই বলে দিচ্ছে, প্রাক্তন বিচারপতি ভুল কিছু বললেনি।’’
বিরোধী শিবিরের নেতাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সমালোচক মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী এবং বুদ্ধিজীবীদের গত কয়েক বছরে যে ভাবে ধরপাকড় ও হেনস্থা করা হয়েছে, তাতে প্রাক্তন বিচারপতির কথা সরাসরি খণ্ডন করতে পারছেন না রিজিজু। তাই পঞ্চাশ বছর আগের জরুরি অবস্থার কথা টেনে আনতে হচ্ছে তাঁকে। এই প্রসঙ্গে তাঁরা তুলে ধরছেন মানবাধিকার কর্মী ফাদার স্ট্যান স্বামীর কথা। এনআইএ তাঁকে গ্রেফতার করার পরে টানা জেল হেফাজতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন অশীতিপর ওই মানবাধিকার কর্মী। আদালতের নির্দেশে হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এই প্রসঙ্গে আসছে সদ্য জামিন পাওয়া মানবাধিকার কর্মী তিস্তা শেতলবাড় বা সুধা ভরদ্বাজ, কবি ভারভারা রাওয়ের নাম। উঠে আসছে এখনও বন্দি ছাত্রনেতা উমর খালিদের কথা।