কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। ফাইল চিত্র।
দলের পথ মেনে এ বার গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি-র বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারের অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের দেশে কিছু লোক মনে করে, বিবিসি-র অবস্থান সুপ্রিম কোর্টের চেয়েও উপরে।’’
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি–টু গুজরাত হিংসা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রচার করেছে, যার নাম ‘দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’। দু’দশক আগে গুজরাতের তৎকালীন সাম্প্রদায়িক হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে সেই রাজ্যে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে। যা থেকে বিতর্কের সূত্রপাত্র। নতুন ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে খোদ প্রধানমন্ত্রী যখন সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের সমর্থন কুড়োনোর কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন, তখন বিবিসি-র ওই তথ্যচিত্র ভোটের আগে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। প্রথম থেকেই ওই তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্য ও সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব বিজেপি নেতৃত্ব। এ বার দলের নীতি মেনেই সরব হলেন কিরেন। তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে ভারতের বিরুদ্ধে। এ দেশের সংখ্যালঘু-সহ সব সম্প্রদায়ের মানুষের ইতিবাচক ভাবে উন্নতি হচ্ছে। দেশে ও দেশের বাইরে বসে অপপ্রচার চালিয়ে কোনও ভাবেই ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।’’
গত দু’দশক ধরে মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত দাঙ্গায় জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যদিও গত বছর এই সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ওই অশান্তিতে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কোনও ভূমিকা ছিল না। আদালতের ওই রায়কে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রিজিজু বলেন, ‘‘এখনও এ দেশের অনেকে ঔপনিবেশিক হ্যাংওভার থেকে মুক্ত হতে পারেননি। তাঁরা মনে করেন, বিবিসি-র অবস্থান সুপ্রিম কোর্টের উপরে।’’ কিরেন-সহ বিজেপি নেতাদের বিবিসি সম্পর্কে ওই মন্তব্যের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদীর একটি পুরনো টুইট ভাইরাল হয়েছে। ২০১৩ সালের ওই টুইটে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, ‘তখনও ডিডি (দূরদর্শন), আকাশবাণী (রেডিয়ো) ছিল। সাধারণ মানুষ কী নিয়ে আলোচনা করতেন, আমরা বিবিসি-তে শুনতাম। ডিডি-আকাশবাণীর উপরে কোনও বিশ্বাস ছিল না।’ মোদীর ওই পুরনো টুইট তুলে অনেকেরই কটাক্ষ, তা হলে কি মোদীকে নিয়ে প্রশ্ন তোলাতেই বিবিসি-র উপরে বিশ্বাস হারাল বিজেপি?
বিবিসি-র ওই তথ্যচিত্র আসার পরেই বিভিন্ন দলের বিরোধী নেতৃত্ব, প্রশান্ত ভূষণের মতো ঘোষিত বিজেপি বিরোধীরা মোদীর সমালোচনায় সরব হয়েছেন। আজ বিরোধীদের আক্রমণ শানিয়ে রিজিজু বলেন, ‘‘এ ধরনের লোকেরা তাদের প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে দেশের সম্মান ও ছবিকে নিচু দেখাতে পিছপা হন না।’’ এ ধরনের ব্যক্তিত্বদের ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করে রিজিজুর বক্তব্য, ‘‘এ ধরনের গ্যাংয়ের সদস্যদের একমাত্র লক্ষ্য হল ভারতকে দুর্বল করা। এদের কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু প্রত্যাশা করা উচিত নয়।’’
বিজেপি গোড়া থেকেই ওই তথ্যচিত্রকে নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বিবিসি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, যথেষ্ট গবেষণার ভিত্তিতেই তথ্যভিত্তিক ওই তথ্যচিত্র বানানো হয়েছে। তাই এ থেকে সরে আসার প্রশ্ন নেই। সংবাদ সংস্থাটির দাবি, ভারত সরকারের কাছেও নিজেদের বক্তব্য রাখার জন্য মতামত চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারাএ বিষয়ে কথা বলতে চায়নি।