সাংবাদিকদের মুখোমুখি অরুণ জেটলি। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
ইটের বদলে পাটকেল খেতে হল অরুণ জেটলিকে।
তাঁর সচিবকে সিবিআই ছুঁতেই জেটলির বিরুদ্ধে দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (ডিডিসিএ) দুর্নীতির পুরনো অভিযোগ খুঁচিয়ে তুললেন অরবিন্দ কেজরীবাল। রীতিমতো জেটলির বরখাস্ত চেয়ে তীব্র আক্রমণে নেমে পড়েছেন গোটা আম আদমি পার্টির নেতৃত্ব। এর আগে জেটলি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিলেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী নির্দিষ্ট অভিযোগ এনে দেখান। আজ টিম-কেজরী সেই কাজটিও করে দেখালেন। যার জেরে প্রথমে দলীয় ভাবে বিজেপি এবং তার পরে খোদ জেটলিকেও সওয়াল করতে হল, ইউপিএ জমানায় ঠিক এই বিষয়ে হওয়া তদন্তে সব অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়েছিলেন তিনি। আর ছোটোখাটো অনিয়ম যা হয়েছিল, তাতে তাঁর কোনও হাত ছিল না। সেই অনিয়মকে দুর্নীতিও বলা যায় না। গোটা শাসক শিবির এ ভাবে জেটলির পাশে দাঁড়ানোয় কটাক্ষ করে কেজরীবাল টুইট করেছেন, ‘‘জেটলির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ কি ঢাকতে চাইছে শাসক শিবির?’’
ফলে পরিস্থিতি যা দাঁড়াল, তাতে অভিযোগের সারবত্তা থাকুক কিংবা না-ই থাকুক, জেটলির গায়ে অন্তত দুর্নীতির কালি লেপে দিতে পেরেছেন কেজরীবাল। আর গোদের উপর বিষফোড়ার মতো বিজেপিরই সাংসদ কীর্তি আজাদ বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। বহু বছর ধরে ডিডিসিএ-র দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি জেটলির বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছেন। আগামী রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে ফের সরব হওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতি সামলাতে আজই বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রামলাল কীর্তিকে ডেকে পাঠান। যদিও সূত্রের খবর, রবিবার পূর্বনির্ধারিত পথেই জেটলির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চলেছেন কীর্তি আজাদ।
আজ জেটলির বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ এনেছে টিম-কেজরীবাল?
আপ শিবিরের অভিযোগ, দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামটি সংস্কার করতে প্রথমে ২৪ কোটি টাকা ধার্য হয়েছিল। কিন্তু পরে মোট ১১৪ কোটি টাকা খরচ হয়। কী খাতে বাকি ৯০ কোটি খরচ হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত কমিটি প্রশ্ন তুলেছিল। আপ নেতা রাঘব চাড্ডা বলেন, ‘‘এ নিয়ে সরব কীর্তি আজাদকে জেটলি জানান, স্টেডিয়ামের মেরামতির কাজে মোট ৫৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যা দেওয়া হয়েছে ইপিআইএল নামের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে। তা হলেও প্রশ্ন, বাকি ৫৭ কোটি গেল কোথায়?’’
আপের আরও অভিযোগ, ডিডিসিএ তিনটি সংস্থাকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। কেন এই সিদ্ধান্ত, তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সংস্থার চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক।
তদন্ত বলছে, ভেন্ডার তালিকার ৯টি কোম্পানির দফতর, ফোন নম্বর এমনকী ই-মেল আইডি পর্যন্ত এক! কাজ না করা সংস্থাকে টাকা দেওয়া হয়েছে! টাকা সরানো হয়েছে কাজের ভুয়ো বিল দেখিয়ে। বাড়তি কর্মী নিয়োগ ও তাদের ওভারটাইম দেখিয়ে অর্থ সরানো হয়েছে। রাঘবের অভিযোগ, ‘‘ঘটনাটা হয়েছে ডিডিসিএ-র সভাপতি হিসেবে অরুণ জেটলির জমানায়। ফলে তিনি দায় এড়াতে পারেন না।’’
আম আদমি পার্টি জবাব দেওয়ার আগে বিজেপি নেতৃত্ব আজ স্থির করেন, স্মৃতি ইরানিকে দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করিয়ে জেটলির পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়া হবে। সেই মতো স্মৃতি বলেন, ‘‘ইউপিএ আমলেই সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস বা ‘এসএফআইও’ তদন্ত রিপোর্টে জানিয়েছিল, কিছু প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকলেও তাকে দুর্নীতি বলা যায় না।’’ স্মৃতির যুক্তি, ‘‘জেটলি ২০১৩ সাল পর্যন্ত ডিডিসিএ-র দায়িত্বে থাকলেও রোজকারের খুঁটিনাটি বিষয় দেখতেন না। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও ইউপিএ সরকারের তদন্তে ধোপে টেকেনি। আজ ডিডিসিএ-ও একই কথা বলেছে।’’ কিন্তু শাসক শিবিরের জবাবে আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘বিজেপি ভুলে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রক কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ মতো এ বিষয়ে তদন্ত করতে দিল্লিকে অনুরোধ করেছে।’’
তবে আপের দাবি উড়িয়ে জেটলির পাল্টা অভিযোগ, ‘‘যে-হেতু দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সচিবের গায়ে হাত দিয়েছে সিবিআই, তাই দৃষ্টি সরাতেই কেজরীবাল কখনও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, কখনও বা সিবিআই তদন্তকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরছেন।’’ জেটলির দাবি, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দিয়ে কোটলা স্টেডিয়ামের পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণে খরচ বেড়ে হয়েছে ১১৪ কোটি টাকা। ঠিক ওই সময়ে ইউপিএ সরকার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের জন্য ৯০০ কোটি টাকা ও ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়ামের জন্য ৬০০ কোটি টাকা খরচ করেছিল।’’
জেটলির কাছে স্বস্তির বিষয় হল, গত কাল কংগ্রেস যে ভাবে তাঁর পদত্যাগ ও গোটা ঘটনাটি সংসদের যৌথ কমিটিকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি তুলেছিল, আজ সে ভাবে সরব হয়নি তারা। তবে সিপিএমের শীর্ষ নেতা সীতারাম ইয়েচুরি দাবি করেছেন, অভিযোগ গুরুতর। এর তদন্ত হওয়া উচিত। এ দিকে, আপের তহবিল নিয়ে কেজরীবালের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার আর্জি আজ খারিজ করে দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট।