কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ
বিড়ম্বনার নতুন নাম এ বার রাধামোহন সিংহ! এমনিতেই সুষমা-বসুন্ধরার দুর্নীতি প্রশ্নে সংসদ অচল। জমি অধ্যাদেশকে হাতিয়ার করে সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক-বিরোধী তকমা সেঁটে দিতে পোস্টার হাতে ঘুরছেন বিরোধীরা! সরকারের কাজকর্মে ছিদ্র খুঁজতে ওত পেতে রয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যেই চাষিদের আত্মহত্যা নিয়ে কৃষিমন্ত্রী রাধামোহনের সংসদে পেশ করা এক জবাবে বেমক্কা বিপাকে পড়ে গেল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
প্রশ্ন ছিল, গত ৩ বছরে দেশে কত চাষি আত্মহত্যা করেছেন ও কী কারণে। মন্ত্রীর দেওয়া হিসেবে কোনও গরমিল ছিল কি? না, তা কেউ বলছেন না। তথ্যে কারচুপি? তা-ও নয়। তবে!
মন্ত্রী যে ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন, ধুন্ধুমার বেধে গিয়েছে তাতে। লোপ্পা ক্যাচ লুফে নিয়েছেন রাহুল গাঁধী ও অন্য বিরোধীরা। কৃষিমন্ত্রী তাঁর লিখিত জবাবে জানান, চাষিদের কেউ ভালবাসায় দাগা খেয়ে, কেউ বা বিয়ে ভেঙে যাওয়া বা যৌন অক্ষমতার মতো কারণে আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে আত্মহত্যা করেছেন ড্রাগের নেশা, পারিবারিক বিবাদ বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে। এ ছাড়া, ফসল নষ্ট হওয়া বা দেনার দায়েও কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। এই জবাবেই, শোরগোল পড়ে যায় সংসদে।
গত ক’মাস ধরে মোদী সরকারকে নিরন্তর কৃষক-বিরোধী, কর্পোরেটদের স্বার্থে চলা স্যুট-বুটের সরকার— এমনই সব তকমা দিয়েছেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল। আজ ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশে তিনি রাধামোহনের মন্তব্য লুফে বলেন, ‘‘এই সরকার হল হাতে গোনা কিছু শিল্পপতির সরকার। কৃষক, গরিবের সমস্যা নিয়ে এঁদের কোনও মাথাব্যথা নেই।’’
স্নেহশীল। অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার এক কৃষকের বাড়িতে রাহুল গাঁধী। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
কৃষিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে ওঠেন সংযুক্ত জনতা দলের নেতারাও। রাধামোহন বিহার বিজেপির প্রবীণ নেতা। যেখানে মাস দুই বাদেই ভোট। সে কথা মাথায় রেখেই সংযুক্ত জনতা দলের নেতা শরদ যাদব বলেন, ‘‘কৃষকদের সম্পর্কে এই সরকার যে ন্যূনতম সংবেদনশীল নয়, তা এখন জলের মতো পরিষ্কার। এক দিকে অকাল-বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হচ্ছে।
চাষিরা দেনার দায়ে জেরবার। সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়েও পাচ্ছেন না। আর কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী বেমালুম আজেবাজে যুক্তি দিচ্ছেন।’’ রাধামোহনের বিরুদ্ধে সংসদের স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনা উচিত, বলেও মন্তব্য করেন শরদ যাদব। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সরকারের নীতির কারণেই কৃষক আত্মহত্যা হচ্ছে। কিন্তু মোদী সরকার দায় ঝেড়ে ফেলছে।’’ সরব অন্যান্য বাম দলও। এসইউসিআই-এর প্রভাস ঘোষের মতে কৃষিমন্ত্রীর উক্তি ‘নিষ্ঠুর শুধু নয়, অপরাধীসুলভ’।
ঘরোয়া আলোচনা কংগ্রেস-বিজেপি, উভয় শিবিরের নেতারাই মানছেন, আসলে গোল পাকিয়েছেন আমলারাই। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য ঘেঁটে তাঁরাই যান্ত্রিক
ভাবে জবাব তৈরি করে দিয়েছেন মন্ত্রীকে। দেখা যাচ্ছে ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে যথাক্রমে ১৩,৭৫৪, ১১,৭৭২ এবং ৫,৬৫০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে প্রথম দুই বছর ছিল ইউপিএ-র সরকার। তুলনায় মোদী জমানার এক বছরে আত্মহত্যা যে কম হয়েছে, সে দিকটি তুলে ধরা যেত। কিন্তু রাধামোহনের জবাবে রাজনৈতিক ভাবনাটাই নেই, মানছেন বিজেপি নেতারাই।
আত্মহত্যার কারণ জানানোর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটেছে। পরিসংখ্যান বলছে দেনার দায়ে বা দেউলিয়া হয়ে ২০% ও ফসল নষ্ট হওয়ার জন্য ১৬.৮% কৃষক আত্মহত্যা করেছে। মন্ত্রীর জবাবেই স্পষ্ট, মোট কৃষক-আত্মহত্যার ৩৬.৮% ঘটেছে চাষবাস সংক্রান্ত কারণে। সঙ্গে বাকি ৬৩.২% আত্মহত্যার কারণও আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু হিসেবের তিল যে তাল হয়ে উঠবে, মোটেই আঁচ করতে পারেননি রাধামোহন। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে নির্দেশ আসে মন্ত্রীকেই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। পরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘‘অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে ন্যাশনাল ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর দেওয়া তথ্যই সংসদে জানানো হয়েছে। বিভ্রান্তি তৈরি করছেন বিরোধীরা।’’