ফাইল চিত্র।
অনিচ্ছাকৃত এবং না বুঝে করা কাজ কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করলেও তা অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে না। কেউ যদি না জেনে এমন কাজ করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তিনি শাস্তিযোগ্য হবেন না। শনিবার ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দায়ের করা একটি মামলার শুনানিতে এই রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করেছেন বলে ২০১৩ সালে একটি মামলা হয় অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে। তিনি সে সময় একটি বিজনেস ম্যাগাজিনের কভার ফটো শ্যুট করেন। সেই ফটোয় তাঁকে ছয় হাত যুক্ত বিষ্ণুর এক অবতার হিসেবে দেখানো হয়। প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষ্ণুর শরীরের ছবির উপরে তাঁর মুণ্ড বসিয়ে দেওয়া হয়। ম্যাগাজিনের কভার ছবিতে তিনি ছয় হাতে ছ’রকমের পণ্য ধরে ছিলেন। তার মধ্যে এক হাতে জুতো ধরা ছিল। ধোনির এই ছবি হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলে হাইকোর্টে মামলা করেন এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দুই নেতা। সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা মামলা দায়ের করেছিলেন ধোনি। এ দিন সেই মামলারই রায় বেরলো। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এ এম খানউইলকর এবং বিচারপতি এম এম শান্তনাগৌদার-এর বেঞ্চ এই রায় দেন।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫এ ধারা (এই ধারাতেই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের বিষয়টি রয়েছে) উল্লেখ করে তাঁরা জানান, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। কিন্তু এই শাস্তি তিনিই পাবেন, যিনি ইচ্ছাকৃত এই কাজ করবেন। অর্থাৎ, কেউ যদি না বুঝে এমন কোনও কাজ করে থাকেন বা তাঁর উদ্দেশ্য যদি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা না হয়ে থাকে তা হলে তিনি এই দণ্ডবিধির আওতায় পড়বেন না। ২৯৫এ ধারায় এই কথাটিই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে বলে বিচারপতিরা জানান।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশের ২০০০ মাদ্রাসা-মসজিদে বিশেষ নজরদারি শুরু পুলিশের
ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার তকমা এনে অনেক তারকার বিরুদ্ধেই আইনি পদক্ষেপ করতে চান কট্টরবাদীরা। সলমন খান, শাহরুখ খান, আমির খান বা অক্ষয় কুমার— কেউই এই তালিকা থেকে বাদ যাননি। ২০১২ সালে ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’-এ একটি গানের লাইনকে কেন্দ্র করে শাহরুখ খানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ফিল্ম ‘ও মাই গড’-এ অক্ষয় কুমারকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হিসেবে দেখানোয় হিন্দু কট্টরবাদীদের হাত থেকে রেহাই পাননি তিনিও। রাজস্থানের অজমেঢ় থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। ফিল্ম ‘পিকে’-তে শিবের সাজে আমির খান দুই বোরখা পরা মহিলাকে রিকশায় চাপিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। দিল্লি পুলিশে তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়। এই রায় কট্টরবাদীদের কাজকর্মের উপরে কিছুটা রাশ টানতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।