দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনা। ফাইল চিত্র।
আধিকারিক রদবদল-সহ যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেবে দিল্লি সরকার। উপরাজ্যপাল কিংবা লেফটেন্যান্ট গভর্নর নয়। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়কে দিল্লির আপ সরকারের ‘বড় জয়’ হিসাবেই দেখা হচ্ছে। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলের তরফে বলা হচ্ছে, শীর্ষ আদালতের এই রায়ে ‘গণতন্ত্রের জয়’ হয়েছে।
এই রায় ঘোষণা হওয়ার পরেই দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে যান কেজরীওয়াল। দীর্ঘ দিন পরে তিনি সেখানে মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকও করেন। সুপ্রিম-রায় নিয়ে আপের তরফে হিন্দিতে একটি টুইট করা হয়। ওই টুইটে লেখা হয়, “নির্বাচিত সরকারের আধিকারিককে অন্যত্র বদলি করার ক্ষমতা রয়েছে। সরকারি আধিকারিকরা কেবল নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই কাজ করবেন।” এই আধিকারিক রদবদল নিয়ে তো বটেই, তা ছাড়াও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপ সরকার এবং সেখানকার উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনার মতপার্থক্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই প্রসঙ্গের কথা উল্লেখ করেই ওই টুইটে লেখা হয়, “দিল্লির জনগণের কাজকে বন্ধ করার কোনও ক্ষমতা উপরাজ্যপালের নেই।”
আপের রাজ্যসভার সাংসদ রাঘব চাড্ডা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করে লেখেন, “উচ্চ আদালতের রায় এই বার্তাই দিল যে, দিল্লির জনগণের কাজ নির্বাচিত সরকারই করবে। কোনও অনির্বাচিত, কেন্দ্রীয় সরকারের প্যারাসুটে করে পাঠানো দখলদার সরকারের কাজকে থামিয়ে দিতে পারবে না।”
বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মত ভাবে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়। আদালতের তরফে জানানো হয়, ‘জনগণের ইচ্ছা’কে বাস্তবায়িত করার জন্যই নির্বাচিত করা হয় একটা সরকারকে। তাই প্রশাসনিক সমস্ত কাজেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। পক্ষান্তরে সরকারের নির্দেশ মেনে চলবেন উপরাজ্যপাল। প্রধান বিচারপতি রায়টি পড়ে শোনানোর সময় বলেন, “যদি আধিকারিকেরা মন্ত্রীদের কাছে তাঁদের কাজের ব্যাখ্যা না দেন, তবে তো যৌথ দায়িত্বের যে নীতি, তা-ই লঙ্ঘিত হবে।” তবে প্রয়োজনে উপরাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভাকে পরামর্শ দিতে পারেন বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
দিল্লির মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ক্ষমতার রাশ নির্বাচিত সরকারের হাতে থাকবে, না কি উপরাজ্যপালের মাধ্যমে শেষ কথা বলবে কেন্দ্রই, তা নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। অন্যান্য রাজ্য সরকারগুলি সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পেলেও, দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় এই নিয়ম প্রযোজ্য হয় না। সাম্প্রতিক কালে দিল্লির আপ সরকারের সঙ্গে উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনার একাধিক বিষয়ে মতান্তর হয়েছে। উপরাজ্যপালের মাধ্যমে সরকারের কাজে নাক গলানোর অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। গত ১৮ জানুয়ারি এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট রায়দান স্থগিত রেখেছিল। সে সময় প্রায় সাড়ে চার দিন ধরে সওয়াল-জবাব পর্ব চলে।