দারিয়া কি নিছক এসকর্ট, ইউক্রেন সুন্দরী এখন ঘুম কেড়েছে গোয়েন্দাদের

দারিয়াকে জেরা করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাকে জেরা করে, গোয়েন্দারা এখন নিশ্চিত যে, দারিয়া নিছক এসকর্ট নয়। ষড়যন্ত্রের বীজ আরও গভীরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ১২:৩০
Share:

ইউক্রেন সুন্দরীর আইপিএস সঙ্গ চিন্তায় ফেলেছে তদন্তকারীদের।

ইউক্রেন-সুন্দরী দারিয়া মোলচা এখন ঘুম কেড়েছেন ভারতের গোয়েন্দাকর্তাদের। এই ইউক্রেনিয়ান তরুণী দারিয়া মোলচা কি কোনও বিদেশি সংস্থার চর, না নিছক এসকর্ট? এ মাসের শুরুতেই দারিয়াকে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর থেকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। দারিয়ার কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল থেকেই সামনে আসে এ রাজ্যের এক পুলিশকর্তার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা। জানা গিয়েছে, পশ্চিম এশিয়া, চিন সমেত একাধিক দেশে তাঁর যাতায়াতের তথ্যও।

Advertisement

ভারতে আসার আগে দীর্ঘদিন চিনে কাটিয়েছিলেন ইউক্রেনের তরুণী দারিয়া মোলচা। আর এই চিন ভ্রমণই এখন সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে। দারিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া দু’টি মোবাইল আর আইপ্যাড ঘেঁটে গোয়েন্দারা একটি বিষয় নিশ্চিত। রাজ্য পুলিশের যে শীর্ষ কর্তার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ ছবি পাওয়া গিয়েছে, সেই পুলিশ কর্তার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে। সেই সময় একটি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই পুলিশ কর্তা।

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তদন্তকারীরা ছাড়াও, দারিয়াকে জেরা করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাকে জেরা করে, গোয়েন্দারা এখন নিশ্চিত যে, দারিয়া নিছক এসকর্ট নয়। ষড়যন্ত্রের বীজ আরও গভীরে। “পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এই শীর্ষকর্তাকে ব্যবহার করে একাধিক শীর্ষ আমলার ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন দারিয়া। আর সেটা শুধুমাত্র টাকার জন্য নয়”— দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তার। দারিয়ার আইপ্যাড এবং মোবাইলে দিল্লি পুলিশ এবং কয়েকজন সেনাকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের প্রচুর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত এক বছর ধরে দিল্লির যে ব্যবসায়ী মহম্মদ ইসপাস কাসিফের নিউ ফ্রেন্ডস‌ কলোনির বাড়িতে ছিলেন দারিয়া, সেই বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। জেরা করা হয়েছে ইসপাস এবং গোরক্ষপুরের ব্যবসায়ী অনুজ পোদ্দারকেও। এই দু’জনকে জেরা করেই জানা গিয়েছে দিল্লির ‘পাওয়ার করিডরের’ একাধিক হোমরা-চোমরার সঙ্গে ‘সময়’ কাটিয়েছেন দারিয়া।

Advertisement

দারিয়ার আইপ্যাডে পাওয়া কয়েকটি চ্যাট অ্যাপসের কিছু যোগাযোগের ধরন দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, দারিয়ার দু’দফায় ভারতে আসা, পুলিশ ও সেনাকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, সব কিছুর পিছনে তাঁর চিনে থাকার যোগাযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন:

উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে অবশেষে আটক বিজেপি বিধায়ক

বিচার পাবেই আসিফা, টুইট ভি কে সিংহের

২০১৬ সালে চিনে জি-২০ সম্মেলনের সময় পশ্চিমী দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করেছিল চিনা গোয়েন্দা সংস্থার পাতা হানিট্রাপের বিষয়ে। আর ঠিক সেই বছরই ভারতে এসেছিলেন দারিয়া। দিল্লির একটি মডেলিং সংস্থায় কাজ নেন তিনি।

দারিয়ার চিন-যোগ কপালে ভাঁজ ফেলেছে তদন্তকারীদের।

সময়টা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, ইঙ্গিত এক শীর্ষ গোয়েন্দার। “যৌনতাকে ব্যবহার করে চরবৃত্তিতে এক সময় কুখ্যাত ছিল রুশ গোয়েন্দা সমস্থা কেজিবি। কিন্তু গত এক দশকে কেজিবির থেকেও এ বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠেছে চিনা গোয়েন্দারা”— বলেন সেই গোয়েন্দা কর্তা। তিনি এটাও উল্লেখ করেন, ঠিক ওই সময়েই ভারতের মডেলিংয়ের বাজারেও হঠাৎ করেই ভিড় বাড়ে বিদেশি মডেলদের। যাদের অধিকাংশই সাবেক সোভিয়েতের বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা।

মডেলিং পেশাকে হাতিয়ার করেই রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত পার্টিতে যাতায়াত শুরু করে দারিয়া। সেখান থেকেই আলাপ দিল্লির ব্যবসায়ী ইমশামের সঙ্গে। দারিয়া দ্রুত হিন্দিও শেখে। ইউক্রেনের বাসিন্দা হলেও দারিয়া হিন্দি ভালই বোঝে। ভাঙা ভাঙা হিন্দি বলতেও পারে। এরকমই পার্টিতে আনাগোনার সূত্রে আলাপ পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের এই আইপিএসের সঙ্গে। রাজধানীর পার্টি সার্কেলে ওই আইপিএস খুব পরিচিত মুখ। তখন তিনি দিল্লিতেই কর্মরত। দারিয়া দ্রুত ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় এই পুলিশকর্তার সঙ্গে।

আর এই পুলিশকর্তার সঙ্গী হয়েই যাতায়াত বাড়ায় অন্যান্য পার্টিতে। ওই পার্টিগুলোতে রাজধানীর একাধিক শীর্ষ আমলা, সেনাকর্তারা নিয়মিত যাতায়াত করতেন। দারিয়ার ব্যবসায়ী বন্ধুকে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, বেশ কয়েকবার বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে বিনা নথি ও পরিচয়পত্রে দারিয়ার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন এই পুলিশকর্তা।

এ দেশে বেনামে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সও বানিয়েছিলেন দারিয়া।

রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে এক এডিজি পদমর্যাদার অফিসারকে গোটা বিষয়ের তদন্তে লিয়াঁজ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মাধ্যমেই এই পুলিশকর্তার কাছ থেকে দারিয়া সম্পর্কে কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চেয়েছেন গোয়েন্দারা। যেমন গত আড়াই বছরের আলাপে দারিয়া এই পুলিশকর্তাকে কিছু উপহার দিয়েছেন কিনা, বা দিয়ে থাকলে তার মধ্যে কোনও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট আছে কিনা এবং সেগুলো তিনি এখনও ব্যবহার করেন কিনা। দারিয়াকে নিয়ে তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন এবং কার কার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন তা-ও জানতে চেয়েছেন তদন্তকারীরা। জানতে চাওয়া হয়েছে সেই ব্যক্তির কথা, যার মাধ্যমে দারিয়ার সঙ্গে তাঁর আলাপ।

দারিয়ার বন্ধু ব্যবসায়ী অনুজ পোদ্দার তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, নেপাল হয়ে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। জেরায় দারিয়ার দাবি, দুবাইয়ের মডেলিং এবং এসকর্ট সার্ভিসে যোগ দেওয়ার জন্যই তিনি যাচ্ছিলেন। কিন্তু এখনও দারিয়ার দুবাই যোগ নিয়ে কোনও তথ্যই উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ঠিক একইভাবে চিন সম্পর্কিত সব প্রশ্নই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। গোয়েন্দাদের দাবি, দারিয়া গোটা ষড়যন্ত্রে বোড়ে মাত্র। তাঁদের সন্দেহ দারিয়ার মূল হ্যান্ডলার এ দেশেই রয়েছে। তাকে চিহ্নিত করতে পারলেই হদিশ মিলবে গোটা পরিকল্পনার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement