জোটসঙ্গী: শরদ পওয়ারের সঙ্গে উদ্ধব ঠাকরে ও তাঁর পরিবার। শিবাজি পার্কের শপথ অনুষ্ঠানে। পিটিআই
২০১৮-র জানুয়ারি। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী তখন দেবেন্দ্র ফডণবীস। উদ্ধব ঠাকরে দাবি তুললেন, বিচারক ব্রিজগোপাল হরিকিষান লোয়ার মৃত্যু-রহস্যের গভীর তদন্ত প্রয়োজন। আজ মুখ্যমন্ত্রী পদে সেই উদ্ধবের শপথের পর জল্পনা তুঙ্গে— বিচারক লোয়ার মৃত্যুর তদন্তের ফাইল কি ফের খোলা হবে?
২০১৪-র ১ ডিসেম্বর মৃত্যুর ঠিক আগে সিবিআই আদালতের বিচারক লোয়ার এজলাসে গুজরাতের সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ হত্যা মামলার শুনানি চলছিল। প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন অমিত শাহ। অভিযোগ উঠেছিল, অমিতের তরফে লোয়াকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা হয়। বিচারক লোয়ার আচমকা মৃত্যুর পরে নতুন বিচারক আসেন। এবং ঠিক এক মাসের মাথায় অমিত বেকসুর খালাস পেয়ে যান।
ঘটনাচক্রে আজ শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের জোট সরকারের শপথগ্রহণের ঠিক আগেই ইডি নতুন করে আদর্শ সোসাইটি কেলেঙ্কারির তদন্তে তৎপর হয়েছে। সেনা অফিসার, নিহত ফৌজির পরিবারের জন্য তৈরি মুম্বইয়ের এই আবাসন মন্ত্রী-আমলাদের মধ্যে বিলি করে দেওয়ার কেলেঙ্কারিতে কংগ্রেসের নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। তাঁর নামও রয়েছে অভিযুক্তের তালিকায়। সাত বছর আগে মামলা দায়ের হলেও ইডি-কে এত দিন উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। কংগ্রেস ক্ষমতাসীন জোটে ফিরতেই ইডি-র তৎপরতায় কংগ্রেস-এনসিপি শিবির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ছায়া দেখছে।
শিবসেনা নেতারা মনে করাচ্ছেন, পাল্টা চাল হিসেবে উদ্ধব সরকারের হাতেও লোয়ার ফাইল থাকবে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের এপ্রিলেই বিচারক লোয়ার মৃত্যুতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি খারিজ করে দেয়। কিন্তু শিবসেনা নেতাদের যুক্তি, পুলিশি তদন্তে গড়বড় ছিল সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ উঠেছিল। ফলে রাজ্য সরকারের তরফে নতুন করে পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দিতে বাধা নেই।
আদালতে নাগপুরের আইনজীবী সতীশ উকে অভিযোগ করেছিলেন, বিচারক লোয়াকে বিষাক্ত রেডিয়ো আইসোটোপ দিয়ে খুন করা হয়েছে। বিচারক লোয়ার উপরে অমিত শাহর পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করা হয়। তার সাক্ষী ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক প্রকাশ খম্বরে ও আইনজীবী শ্রীকান্ত খাণ্ডালকর। বিচারক লোয়ার মৃত্যুর পর ওই দু’জনেরও রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়।
তবে ২০১৮-র এপ্রিলে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের রায় ছিল, বিচারক লোয়ার স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছিল। ভবিষ্যতে এ নিয়ে মামলার পথও কার্যত বন্ধ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এই মামলা প্রথমে বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চে পাঠানো নিয়ে অন্য চার প্রবীণ বিচারপতি আপত্তি তোলেন। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেন তাঁরা।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, সে সময়ও ‘বিদ্রোহী’ বিচারপতিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন উদ্ধব। বলেছিলেন, আদালতের বিচারপতিদের ‘বোবা ও কালা’ করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। শিবসেনা শিবিরে জল্পনা, উদ্ধব মুখ্যমন্ত্রী হয়ে লোয়া ফাইল খুলতে পারেন ভেবেই কি তাঁকে ঠেকাতে বিজেপি নেতৃত্ব মরিয়া হয়ে উঠেছিল? তাই কি শনিবার ভোররাতে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে দিয়ে ফের দেবেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর চেষ্টা হয়? বিজেপি সবটাই বিরোধীদের ‘দিবাস্বপ্ন’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। তাতে অবশ্য জল্পনা থামছে না।