ছবি: পিটিআই।
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আস্থাভোটে জয়ী হল উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট সরকার। ১৬২ জন বিধায়ক তাদের সমর্থন করেছেন বলে জানিয়েছিল তিন দলের জোট। এ দিন সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ১৬৯ জন। সংখ্যা না থাকায় ‘অনিয়ম’-এর অভিযোগ তুলে ওয়াক আউট করেছে বিজেপি।
এ দিনের আস্থাভোটের ফলে নিয়ম অনুযায়ী ছ’মাসের মধ্যে উদ্ধব সরকারকে আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে না। তবে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বিধানসভার সদস্য নন। তাঁকেও ছ’মাসের মধ্যে নির্বাচিত হতে হবে।
তবে শাসক জোটের মধ্যে জট পুরোপুরি কাটেনি বলে রাজনৈতিক সূত্রে খবর। এনসিপি সূত্রে খবর, অজিত পওয়ার উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বিজেপি-সঙ্গের ফলে অজিতকে এখনই কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে রাজি নন শরদ পওয়ার। ফলে উপমুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি ছেড়ে এনসিপি স্বরাষ্ট্র, অর্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দাবি জানাতে পারে বলে এনসিপি সূত্রে খবর। অন্য দিকে রবিবার স্থায়ী স্পিকার নির্বাচনে কংগ্রেসের নানা পাটোলের জয় প্রায় নিশ্চিত। সূত্রের খবর, স্পিকার পদের পাশাপাশি রাজস্বের মতো দফতর চায় কংগ্রেস। শিবসেনা চায় নগরোন্নয়ন, আবাসন।
আরও পড়ুন: জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়ে নির্মলাকে কটাক্ষ ডেরেকের
বিজেপির কালিদাস কোলাম্বকরকে সরিয়ে এনসিপি-র দিলীপ ওয়ালসে পাটিলকে প্রোটেম স্পিকার করার প্রতিবাদে আজ আস্থাভোটের আগে ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিজেপি পরিষদীয় দলের নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস বলেন, ‘‘এই প্রথম মহারাষ্ট্রে স্থায়ী স্পিকার নির্বাচন না করেই আস্থাভোট করা হল। কিসের ভয়ে এমন সিদ্ধান্ত? এই সরকারের মন্ত্রীরা অবৈধ ভাবে শপথ নিয়েছেন।’’ প্রোটেম স্পিকার পাটিল জানান, ফডণবীস বিধানসভার অধিবেশনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিষয় নিয়ে সরব হচ্ছেন। রাজ্যপালের অনুমতি নিয়েই বিধানসভার এই বিশেষ অধিবেশন হচ্ছে। ফলে অধিবেশন বৈধ।
বিধানসভায় উপস্থিত বিধায়কদের সংখ্যা গোনা শুরু হওয়ার আগেই বিজেপির ১০৫ জন বিধায়ক ওয়াক আউট করেন। ফডণবীসের আরও অভিযোগ, শপথে কেউ ছত্রপতি শিবাজি, কেউ বালসাহেব ঠাকরে, কেউ সনিয়া গাঁধী, কেউ আবার শরদ পওয়ারের নামোচ্চারণ করেছেন। এটা বিধিসম্মত নয়। ফডণবীসের অভিযোগ, ‘‘বিধানসভার আগের অধিবেশনের শেষে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়েছিল। অর্থাৎ বিধানসভা জিইয়ে রাখা হয়েছিল। তাই নতুন অধিবেশন ডাকতে রাজ্যপালের মাধ্যমে সমন জারি করা প্রয়োজন। কিন্তু তা না করে অবৈধ ভাবে বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হয়েছে।’’ বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, প্রোটেম স্পিকার বদল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবছে দল। মহারাষ্ট্রে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক নাটকের পরে আজ প্রথম একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুম্বইয়ে এসেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান ফডণবীস।
এ দিন গেরুয়া পাগড়ি পরে বিধানসভায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বলেন, ‘‘আমি সব সময়েই বিধানসভার বাইরে কাজ করেছি। মানুষের আশীর্বাদে এখানে আসতে পেরেছি। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।’’ এর পরেই বিজেপিকে তোপ দাগেন তিনি। উদ্ধবের কথায়, ‘‘আমরা শিবাজির নাম উচ্চারণ করায় আপনাদের অসুবিধে হচ্ছে। আপনারা মনে করেন শিবাজি আর নিজের বাবা-মার নাম উচ্চারণ করা অপরাধ। কিন্তু আমরা বারবার শিবাজির নাম উচ্চারণ করব। কারণ সেটাই মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি।’’ কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের কথায়, ‘‘ফডণবীস হার স্বীকার করতে পারছেন না। উনি লড়াইয়ের মঞ্চ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। গোটা দেশের মানুষ টিভিতে সেটা দেখেছেন।’’