শান্তনু বেরা রাত ১১টা নাগাদ বিমানবন্দর থেকে উব্র-এ গড়িয়ায় নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। ই এম বাইপাসে রাস্তা ফাঁকা পেতেই চালক গাড়ির স্পিড বাড়ালেন। খানিকটা ভয়ই পেয়েছিলেন শান্তনু। চালককে গাড়ি আস্তে চালাতে বলবেন, ঠিক সে সময়েই চালকের মোবাইলে ‘বিপ বিপ’ আওয়াজ শুরু হল। চালক নিজেই গাড়ির স্পিড কমিয়ে দিলেন।
সুরক্ষা বাড়াতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে নতুন এই ব্যবস্থা চালু করেছে উব্র। চালকের মোবাইল গাড়ির ড্যাশ বোর্ডের উপরে রাখা থাকলেই তার জিপিএস-এর মাধ্যমে গাড়ির স্পিডোমিটার সম্পর্কে জানতে পারছে উব্র। গাড়ির গতি বাড়লেই চালককে সতর্ক করা হচ্ছে। বারবার সতর্ক করার পরেও চালক স্পিড না কমালে তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উব্র।
শুধু গাড়ির গতিবেগই নয়, যাত্রী, গাড়ি এবং চালকের সুরক্ষায় এমন বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা উব্র।
বেঙ্গালুরুর এক পাঁচতারা হোটেলে উব্র-এর অপারেশন বিভাগের প্রধান প্রদীপ পরমেশ্বরণ বলেন, ‘‘যাত্রী সুরক্ষায় উব্র চালু করছে ‘রিয়েল টাইম আইডি চেক’। পাশাপাশি, গাড়়ির সুরক্ষায় ‘টেলিম্যাটিক্স’ এবং চালকের সুবিধার্থে ‘শেয়ার ট্রিপ’ ব্যবস্থা’’ চালু করা হয়েছে।
উব্র সূত্রের খবর, অনেক সময়ই যে চালকের ছবি উব্র-এ নথিভুক্ত রয়েছে, তার জায়গায় অন্য চালক গাড়ি চালান। তাতে অপরাধের সম্ভাবনা বাড়ে। অপরাধীকে ধরার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়। যাত্রীদের সে কারণে বলা হয়, গাড়িতে ওঠার সময়ে চালকের ছবি মিলিয়ে দেখে নিতে। কিন্তু ছবি দেখে সে ভাবে চেনা সব সময়ে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ঠিক চালক চালাচ্ছেন কি না এ বার তা উব্র নিজেই পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাতে যখন-তখন যে কোনও চালককে বলা হচ্ছে মোবাইলে নিজস্বী তুলে পাঠাতে। সেই ছবির সঙ্গে উব্র-এ দেওয়া চালকের ছবি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ছবি ঠিক না হলে সঙ্গে সঙ্গে ওই চালককে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বাতিলের তালিকায়।
গতির পাশাপাশি গাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইঞ্জিনে সেন্সর বসানোর কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানালেন উব্র-এর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অপূর্ব দালাল। তিনি বলেন, ‘‘ইঞ্জিনে সেন্সর থাকলে জিপিএস-এর মাধ্যমে গাড়ির অবস্থা সম্পর্কেও জানা যাবে। তাতে দুর্ঘটনা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব হবে।’’
গাড়ি এবং যাত্রীর পাশাপাশি চালকের সুরক্ষা নিয়েও তাদের ভাবনা রয়েছে বলে দাবি উব্রের। এ বার থেকে চালক তাঁর পরিবারের কারও মোবাইলেও নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে পারবেন। এর মাধ্যমে চালকের পরিবারও তাঁর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে। তিনি কখন বাড়িতে ফিরবেন বা কোনও বিপদে পড়েছেন কি না, এ সম্পর্কেও জানতে পারবে পরিবার। পরমেশ্বরণ বলেন, ‘‘শুধু যাত্রীর সুরক্ষা নিশ্চিত করাই নয়, চালক এবং গাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিত না করলে যাত্রীও নিরাপদ নন। সে কারণেই তিনটির নিরাপত্তাই কী করে নিশ্চিত করা যায়, সে সম্পর্কে আমরা ভাবনাচিন্তা চালিয়ে যাচ্ছি।’’