বিলাপ ও বগা পাত্র। নিজস্ব চিত্র
এমন একটা সম্পদ হাতে পেতে রাতের অন্ধকারে, শ্বাপদ সঙ্কুল জঙ্গলে জীবন বাজি রাখে শিকারিরা। এমন সম্পদ জোগাড় করতে বনরক্ষীদের গুলির ভয়ের তোয়াক্কা না করে গ্রামের মানুষ শিকারিদের পথ দেখান। কিন্তু একেবারে পড়ে পাওয়া সেই ধন হাতে পেয়েও নির্লোভ দুই গ্রামবাসী তুলে দিলেন বন দফতরের হাতে!
আন্তর্জাতিক বাজারে এশিয়ান গন্ডারের খড়্গের দাম কেজি প্রতি প্রায় চার লক্ষ ডলার। কাজিরাঙায় একটা গন্ডার মারতে পারলেই শিকারি বা গ্রামের মানুষ হাতে পান বিশ লক্ষ টাকা! কাজিরাঙা লাগোয়া কোহরা গ্রামের তেতেলি ডাঙ্গা এলাকায় সকালে জমিতে চাষ করার সময়ে বিলাপ পাত্র ও বগা পাত্র এমনই একটি গন্ডারের খড়্গ কুড়িয়ে পেলেন। ওজন প্রায় তিনশো গ্রাম।
কাজিরাঙার ফরেস্টার শামিম আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘‘বেঙা শিবির থেকে তিনশো মিটার দূরে ডিফলু নদীর কাছেই ডাল চাষের জন্য জমি সাফ করা হচ্ছিল। সেই সময়ই খড়্গটি কুড়িয়ে পান বিলাপ ও বগা। সাধারণত জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে অনেক সময় ঢুকে পড়ে গন্ডাররা। নিজেদের মধ্যে মারামারি করার ফলে গন্ডারদের খড়্গও খসে যায়। এ ক্ষেত্রেও সম্ভবত এই ভাবেই খড়্গটি জাতীয় উদ্যানের গণ্ডির বাইরে পড়ে যায়।’’
খড়্গ উদ্ধারের পরে দুটো রাস্তাই খোলা ছিল তাঁদের হাতে। হয় তা বন দফতরে জমা দেবেন। বদলে মিলবে দুটো ভাল কথা আর একটা ফুলাম গামোসা। অথবা পাচার চক্রে খবর দিতে পারতেন। হাতে হাতে নগদ কয়েক লক্ষ টাকা চলে আসত। কিন্তু প্রথম পথটাই বেছে নিলেন বিলাপ ও বগা। প্রায় ২০ সেন্টিমিটার ওজনের খড়্গটি নিয়ে তাঁরা হাজির হন কোহরা রেঞ্জের অফিসে।
দুই দরিদ্র কৃষকের এমন নির্লোভ সততার নিদর্শনে মুগ্ধ হন বনকর্তারা। তাঁদের ফুলাম গামোসা পরিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। পশুপ্রেমীরা দাবি তোলেন, পরবর্তী বন্যপ্রাণ সপ্তাহে বনমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যেন ওই দুই জনকে তাঁদের সততার জন্য পুরস্কৃত করা হয়। ডিএফও রমেশ চন্দ্র গগৈ জানান, সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।