ব্রহ্ম-বিভ্রাটের জল এ বার হাইকোর্টে গড়াল।
জগন্নাথদেবের নতুন বিগ্রহে ব্রহ্ম বা ঘট-পরিবর্তনের সময়ে দেরির জেরে গোটা রাজ্যে যে তোলপাড় শুরু হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই সরকারি তরফে দু’জন দয়িতাপতিকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশের আর্জি জানিয়ে তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কটকে হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে রথ রাজ্য সরকারের তরফে শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে তাঁদের বক্তব্য পেশ করতে বলেন।
গত কাল, বুধবার, হাইকোর্ট জানিয়েছিল, মন্দির কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের মধ্যে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে।
ঘট-পরিবর্তনের দেরির ময়না-তদন্ত করে মন্দিরের প্রশাসনিক আধিকারিক সুরেশ মহাপাত্র দু’জন দয়িতাপতি কাশীনাথ দাস মহাপাত্র ও জয়কৃষ্ণ দাস মহাপাত্রের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। কাশীনাথ ও জয়কৃষ্ণ বাবা-ছেলে। সুরেশের বক্তব্য, ‘‘প্রবীণ কাশীনাথ ঘট-পরিবর্তনের সাক্ষী থাকতে চেয়েছিলেন। মন্দিরের পরম্পরা মতে যা হতে পারে না। আর কাশীনাথের পুত্র জয়কৃষ্ণও বাবার পক্ষ নিয়ে ঘট-পরিবর্তনের দায়িত্বে থাকা বড়গ্রাহীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।’’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুরী থেকে ফোনে সুরেশ জানিয়েছেন, এ দিন তিনি ঘট-পরিবর্তনের সময়কার ঘটনা জানতে আরও তিন জন দয়িতাপতির সঙ্গে মন্দিরে গিয়ে কথা বলেছেন।
সুরেশের কথায়, ‘‘আমরা জানতে চেয়েছিলাম, নিয়ম ভেঙে মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে কেউ ‘ব্রহ্ম দর্শন’ করেছেন কি না!’’ ব্রহ্ম-বিভ্রাটের ঘটনায় যাঁর দিকে আঙুল উঠেছে সেই দয়িতাপতি কাশীনাথ ‘ব্রহ্ম দর্শনে’র দাবি জানালেও সুরেশ
এ দিন বলেন, ‘‘তদন্তে যা উঠে আসছে তাতে মনে হচ্ছে না, কাশীনাথ সত্যি বলেছেন। কাশীনাথের সঙ্গী তিন জন দয়িতাপতিই জানিয়েছেন, তাঁরা বা কাশীনাথ কেউই ‘ব্রহ্ম দর্শন’ করে উঠতে পারেননি। সুতরাং ব্রহ্মের মর্যাদা কোনও
ভাবে ক্ষুণ্ণ হয়নি। শুধু কথা কাটাকাটিতে আচার-অনুষ্ঠানে কিছুটা দেরি হয়েছে।
সাসপেন্ড হওয়ায়ে নবকলেবরের আগে মন্দিরে ঢুকতে পারছেন না তাঁরা দু’জন। ১৭ জুলাই জগন্নাথদেবের নবকলেবর ধারণের দিন। সে-দিনই নবযৌবন দর্শন উৎসবে জগন্নাথদেবের নতুন বিগ্রহ মন্দিরে সব সেবায়েতের সামনে প্রকট করা হবে। আর ১৮ জুলাই রথযাত্রা। তার আগে সাসপেন্ড হওয়া দু’জন দয়িতাপতি মন্দিরে ঢুকতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করছে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের উপরে।
আর রথযাত্রা পর্যন্ত রাজ্যে বিরোধীরা যাতে অনুষ্ঠানে ত্রুটি নিয়ে কোনও কিছু বলতে না-পারে, তার জন্য এখন যত দূর সম্ভব সাবধানেই পা ফেলছে রাজ্য সরকার।