জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত সেনা যোগাম্বর সিংহের শেষকৃত্যে ভিড়। রবিবার উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায়। ছবি পিটিআই।
কাশ্মীরে ফের ভিন্ রাজ্যের তিন শ্রমিককে গুলি করল জঙ্গিরা। তাঁদের মধ্যে দু’জন নিহত হয়েছেন। আহত এক জন। তিন জনই বিহারের বাসিন্দা। পর পর দু’দিন ভিন্রাজ্যের শ্রমিকেরা খুন হওয়ার ফলে জরুরি নির্দেশিকা জারি করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। একটি সূত্রে দাবি করা হয়, ভিন্ রাজ্য থেকে আসা হাজার হাজার শ্রমিককে সেনা ও পুলিশ শিবিরে সরিয়ে আনা হচ্ছে। পরে অবশ্য জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের আইজি জানান, এই খবর ঠিক নয়। বিহারের শ্রমিকদের খুন হওয়ার খবর পেয়ে জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হাকে ফোন করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
গত কালই বিহারের বাসিন্দা ফুচকা বিক্রেতা অরবিন্দকুমার শাহকে শ্রীনগরে ও উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা কাঠের মিস্ত্রি সাগির আহমেদকে পুলওয়ামায় গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা। আজ কুলগামের ওয়ানপো এলাকায় বিহারের তিন শ্রমিকের উপরে হামলা চালায় জঙ্গিরা। চলতি মাসে কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় ১১ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হলেন। তাঁদের মধ্যে ৪ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
পুলিশ জানিয়েছে, আজ সন্ধ্যায় কুলগামের লারান গাঙ্গিপোরা ওয়ানপো এলাকায় ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের ঘরে ঢুকে গুলি চালায় এক দল জঙ্গি। তাতে রাজা ঋষিদেব যাদব ও যোগেন্দ্র ঋষিদেব যাদব নামে দুই শ্রমিক নিহত হন। আহত হন চুনচুন ঋষিদেব যাদব। তাঁরা নির্মাণ ব্যবসায়ে শ্রমিকের কাজ করতেন। ঘটনার পরেই এলাকা ঘিরে তল্লাশি শুরু করেছে বাহিনী। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন পুলিশ, সেনা ও আধাসেনার কর্তারা।
ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক-সহ সাধারণ নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আজ মুখ খুলেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লা। তাঁর দাবি, ‘‘এই হত্যাকাণ্ড দুর্ভাগ্যজনক। কাশ্মীরিরা এতে জড়িত নন। কাশ্মীরিদের বদনাম করতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। উপত্যকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
পর পর দু’দিন বিহারের বাসিন্দারা খুন হওয়ার পরে আজ ফোনে জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হার সঙ্গে কথা বলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। নিহত অরবিন্দকুমার শাহ, রাজা ঋষিদেব যাদব ও যোগেন্দ্র ঋষিদেব যাদবের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে নীতীশ সরকার। সেই সঙ্গে ওই পরিবারগুলি যাতে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রকল্পের সুবিধে পায় তা নিশ্চিত করতে শ্রম দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন নীতীশ। বিজেপির তরফে ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে। তাদের মতে, দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতদের এর চেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
খুনিদের খুঁজে বার করা হবে বলে এ দিন আশ্বাস দিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হা। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ নাগরিকদের প্রতিটি রক্তবিন্দুর বদলা নেওয়া হবে। জঙ্গি ও তাদের সমর্থকদের আমরা খুঁজে বার করব।’’
গত কাল কাশ্মীরে নিহত কাঠের মিস্ত্রি সাগির আহমেদই ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। সাগির কাশ্মীরে আসার পর থেকে উত্তরপ্রদেশের সহারনপুরে তাঁর বাড়ির হাল কিছুটা ফিরেছিল। প্রতি মাসে পাকাপোক্ত রোজগারের টাকা বাড়িতেও পাঠাচ্ছিলেন নিয়মিত।
বছর দেড়েক আগে কাজ খুঁজতেই উত্তরপ্রদেশের সহারনপুর থেকে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন সাগির। তাঁর ভাই নাসিম বলছেন, ‘‘ভালই কাজ করছিল দাদা। ওর সঙ্গে তো ৩-৪ দিন আগেও কথা হল। ওর থেকে উপত্যকার পরিস্থিতির কথা জানতেও চাইলাম। আমাদের বলল, ভয়ের কিছু নেই। সব ঠিক আছে।’’ ভাই জানিয়েছেন, সাগিরের রোজগার ছাড়া পাঁচ জনের পরিবার কার্যত অচল। তাঁর এক ছেলেও কাঠের কাজ করেন। তবে আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। রয়েছে চার মেয়ে। মেয়ে নাজ়রানার কথায়, ‘‘আমরা বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ চাই। বাবা ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। এক ভাই, তিন বোন নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাব জানি না।’’