একই দাবি নিয়ে একই দিনে আসরে দুই গাঁধী।
একজন সশব্দে। বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে নরেন্দ্র মোদীকে নিশানায় রেখে। আর একজন প্রায় নিঃশব্দে।
অরুণ জেটলির বাজেটে গয়নার উপর উৎপাদন শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা অনেকদিন ধরেই রাস্তায় নেমেছেন। বুধবার যন্তর-মন্তরে তাঁদের ধর্না মঞ্চে পৌঁছে যান রাহুল গাঁধী। আর তার কিছুক্ষণ পরেই গয়না ব্যবসায়ীদের এক প্রতিনিধি দল নিয়ে অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিনহার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন বিজেপির গাঁধী- বরুণ গাঁধী।
অতীতে একই ধরণের ইস্যু নিয়ে দুই বিপরীত মেরুর দলে থাকা দুই ভাইকে সরব হতে দেখা গিয়েছে। আজও তার অন্যথা হল না। কিন্তু গয়নার উপর উৎপাদন শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিটি যেহেতু নরেন্দ্র মোদী সরকারের থেকে, তাই খুলে বলা সম্ভব নয় বরুণের পক্ষে। সে পথে তিনি হাঁটেনও নি। কিন্তু বিরোধী দলে থেকে রাহুলের সেই বাধ্যবাধকতা নেই। তাই অতীতে এই যন্তর-মন্তর থেকে জমি বিলের আন্দোলন করে রাহুল যে রক্তের স্বাদ পেয়েছিলেন, এ বারে দেশের প্রায় ৬ কোটি গয়না ব্যাবসায়ীর পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপির চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্কেই থাবা বসাতে চাইছেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি।
সংসদে যেভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে ‘বড় শিল্পপতি-বন্ধু’ তকমা নরেন্দ্র মোদীর গায়ে সেঁটে দিতে পেরেছিলেন, এ বারেও সেই একই পথ ধরলেন। আর তারজন্য মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ‘বব্বর শের’-এর পরীক্ষিত কটাক্ষকেই টেনে আনলেন তিনি। বললেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র লোগোতে মহাত্মা গাঁধীর চক্র আর সিংহের ছবি দেখে ভেবেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী ছোট ছোট ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিকদের কথা ভাববেন। মহাত্মা গাঁধী তাঁদের কথা ভাবতেন। তাঁদের শক্তি যোগাতেন। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী ৫-৬ জন বড় শিল্পপতির শক্তি যোগান।
আরও পড়ুন- সঙ্ঘ-সীমা লঙ্ঘন না করেই মুসলিম মন ছোঁয়ার চেষ্টায় মোদী
উৎপাদন শুল্ক বৃদ্ধিতে আক্রোশে থাকা ব্যবসায়ীদের আরও উস্কে দিতে রাহুল বলেন, ‘‘এটি শুধু উৎপাদন শুল্ক বাড়ানো নয়, আপনাদের টুঁটি চেপে হত্যার চেষ্টা করছে সরকার। আপানাদের ঘাম ও রক্তের দৌলতে দেশের বৃদ্ধিতে ৭ শতাংশ হয়, অথচ প্রধানমন্ত্রী নিজে মনের কথা বলেন, অন্যদের বলার সুযোগ দেন না।’’ বরুণ গাঁধী-সহ বিজেপির অন্য নেতাদের ‘নীরবতা’ নিয়েও কটাক্ষ করেন রাহুল। কংগ্রেসের সহ-সভাপতির মতে, ‘‘বিজেপির অনেকে আপনাদের সাহায্য করতে চান। কিন্তু তাঁরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারেন না। বললেই যে বিপদ, সেটি তাঁরা জানেন।’’
আসলে রাহুল এমন একটি জায়গায় ঘা দিতে চাইছেন, যেটি বিজেপির চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্ক। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই উৎপাদন শুল্ক নিয়ে পিছু হঠতেও চান না অরুণ জেটলি। জেটলি প্রকাশ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিলাসবহুল সামগ্রী বাইরে রাখলে পণ্য ও পরিষেবা করের হার ১৭-১৮ শতাংশের মধ্যে রাখা মুশকিল। এর আগেও ব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠন জেটলির সঙ্গেও দেখা করেছেন। কিন্তু জেটলি তাঁর অপারগতার কথা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। সরকার এই বিষয়ে পিছু হঠার অবস্থায় নেই জেনেই এখন রাহুল পুরোদমে আসরে নেমে পড়েছেন। অতীতে এ ভাবেই জমি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করে সরকারকে পিছু হঠতে হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীর গায়ে কৃষক ও গরিব বিরোধী তকমাও এঁটে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে মোদী এখন গরিব ও কৃষক করে যান নিরন্তর। ব্যবসায়ীদের পাশে রাখতে সরকার এখন কোন পদক্ষেপ করে, সেটাই দেখার।