ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। ছবি: পিটিআই।
সরকারের ফয়সালা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কুর্সির কিস্সা শেষ হয়নি এখনও!
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ত্রিপুরায় ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। আগের সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদ পার করার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছিল তারা। এ বার দলের অন্দরে প্রশ্ন, দ্বিতীয় বারের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ কে নেবেন? প্রশ্ন উঠেছে এই কারণে যে, ত্রিপুরা বিজেপিতে মুখ্যমন্ত্রী পদের স্বপ্ন দেখার একাধিক মুখ আছে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। শুধু তা-ই নয়, টানা কয়েক দশক বামেদের দখলে থাকা ধনপুর কেন্দ্রে গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে এসেছেন। দিল্লির মোহ ছেড়ে নিজের রাজ্যে সিংহাসনের স্বপ্ন তাঁর আছে।
যাঁকে সামনে রেখে ভোটের বৈতরণী পার করা হল, সেই মানিক সাহাকে বহাল রাখার দাবিও স্বাভাবিক। এমনিতেই তিনি মাত্র বছরখানেক সময় পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। আবার যাঁর জায়গায় মানিকবাবু ওই পদে এসেছিলেন, সেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব কোন দিকে অবস্থান নেবেন, তা-ও এই মুহূর্তে বিজেপি শিবিরে চর্চার উপাদান।
শাসক শিবিরে যখন এই ছবি, বিরোধী শিবিরেও আসন নিয়ে টানাপড়েন চালু হয়ে গিয়েছে। বাম ও কংগ্রেস সমঝোতা করে লড়ে ১৪টি আসন পেয়েছে। প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মার তিপ্রা মথা একক ভাবে পেয়েছে ১৩টি আসন। এখন প্রশ্ন, বিরোধী দলনেতা কে হবেন? বাম শিবিরের যুক্তি, প্রাক্-নির্বাচনী সমঝোতা থাকায় বাম ও কংগ্রেস মিলিত ভাবে একটি গোষ্ঠী হিসেবে বিরোধী দলনেতার পদ আইন অনুযায়ী দাবি করতে পারে। তবে সেই দাবি মানা বা না মানা স্পিকারের পছন্দসাপেক্ষ। বিরোধী নেতার পদ দাবি করা হবে কি না, সেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অবশ্য সিপিএম এখনও নেয়নি। দলের রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। অন্য দিকে, মথার যুক্তি, বাম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতা ছিল। জোট নয়। তাই বিরোধী দলনেতার পদ মথারই পাওয়া উচিত।
মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা— দুই পদের জন্যই আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম বাছতে হবে পরিষদীয় দলের বৈঠকে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতি ছাড়া বিজেপি ওই বৈঠক করবে না। দলের রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কারা থাকবেন, সেটা ঠিক হলে বৈঠক হবে। তা ছাড়া, ফলপ্রকাশের পরে হিংসার ঘটনা সামাল দেওয়ার জন্য বিধায়কেরা নিজেদের এলাকায় রয়েছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী পদে কি বদলের সম্ভাবনা আছে? রাজীবের কৌশলী জবাব, ‘‘সে তো পরিষদীয় দলে আলোচনা করে ঠিক হবে!’’
এরই মধ্যে শুক্রবার রীতি মেনে রাজ্যপাল সূর্যদেও নারায়ণ আর্যের কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবু, সরকার গড়ার দাবিপত্রও দিয়েছেন। নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যপাল তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। তিনিই কি আবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন? মানিকবাবু বলেছেন, ‘‘পরিষদীয় দলের বৈঠক হোক। দেখা যাক, কী হয়!’’ নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর শপথের সম্ভাব্য দিন ঠিক হচ্ছে ৮ মার্চ। আর ঘনিষ্ঠ মহলে প্রতিমা বলে রেখেছেন, দল যা ‘দায়িত্ব’ দেবে, তা-ই যথাসাধ্য নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে তৈরি থাকবেন।
এলাকা সামলাতে হচ্ছে বলে মথাও বিধায়কদের বৈঠকের দিন ঠিক করেনি। তবে ‘বুবাগ্রা’ প্রদ্যোৎ এ দিন দলের নেতা-বিধায়কদের বার্তা দিয়েছেন কয়েক দিন পরে শান্তিপূর্ণ ভাবে এলাকায় বিজয়োৎসব করার।
ফলপ্রকাশের পরে ত্রিপুরার নানা প্রান্ত থেকে হিংসার অ্ভিযোগও আসতে শুরু করেছে। বিজেপির অভিযোগ, বড়জলায় সিপিএম এবং চড়িলাম, খোয়াইয়ে মথা সমর্থকেরা তাদের উপরে হামলা চালিয়েছে। চড়িলামের কয়েক জন বিজেপি কর্মী গুরুতর আহত। আবার সিপিএমের অভিযোগ, খয়েরপুর, সোনামুড়া, বিশালগড়, শান্তিরবাজার, কমলপুর-সহ নানা জায়গায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে, আগুন দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির হামলা দেখেও পুলিশ-প্রশাসন কিছু করছে না বলে তাদের অভিযোগ। আহত বিজেপি সমর্থকদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবু এ দিন অবশ্য পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘হেরে গিয়েও কেউ কেউ হামলার অভ্যাস ছাড়ছে না! প্রশাসনকে বলছি, এ সব কড়া হাতে মোকাবিলা করতে হবে।’’