ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন।
নিজের দলের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন ত্রিপুরার আগরতলার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণ। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের নেতৃত্বকে ‘শিশুসুলভ’ বলে প্রকাশ্যেই কটাক্ষ করলেন তিনি। তাঁর ওই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিপ্লব তথা বিজেপি-র বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল। মঙ্গলবার আগরতলায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন সুদীপ। সেখানে নাম না করে তিনি বিপ্লবের নেতৃত্বকে ‘শিশুসুলভ’ বলে আক্রমণ করেন। সুদীপ বলেন, ‘‘শিশুসুলভ নেতৃত্ব, আসল শত্রুকে চিনতে পারছে না।’’
মাঝে আর মাত্র এক দিন। আগামী বৃহস্পতিবার পুরভোট আগরতলায়। তৃণমূল যখন এ রাজ্যে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে নিজের দলের বিরুদ্ধে ‘বেসুরো’ শোনা গেল সুদীপকে। বিপ্লবের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, দল আসল শত্রুদের চিহ্নিত করতে ভুল করছে। যার জেরেই বিজেপি-র বদনাম হচ্ছে বলে দাবি সুদীপের। তিনি বলেন, “সিপিএমের আমলের গুন্ডারা এখন বিজেপি-তে। তারাই সন্ত্রাস করছে। আর এই গুন্ডারা দলে আসায় বিজেপি-র বদনাম হচ্ছে। ত্রিপুরার ভোটকে প্রহসনে পরিণত করছে।”
একটা সময়ে ত্রিপুরায় তৃণমূলের মুখ ছিলেন সুদীপ। পরে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। যখন বিপ্লব দেবের সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি আওয়াজ তুলছে, সেই সময় দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলে অস্বস্তি বাড়ালেন বিজেপি বিধায়ক সুদীপ। তবে তাঁর এই মন্তব্যে দলের অস্বস্তি বাড়বে বলে মনে করছেন না তিনি। তাঁর কথায়, “কেন দলকে অস্বস্তিতে ফেলব! আমি তো মানুষের হয়ে কথা বলছি। আমি সেই সব বিজেপি কর্মকর্তাদের হয়ে কথা বলছি যাঁদের বলার সাহস নেই।” এ সব কথা বলে তিনি কোনও ভাবেই দলকে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা করছেন না, বরং দলকে সঠিক দিশা দেখানোর লক্ষ্যেই হাঁটছেন— এমন দাবি করেছেন সুদীপ।
সুদীপের দাবি, তিনি বরাবরই জনগণের স্বার্থ নিয়ে কাজ করেছেন। জনগণই তাঁকে দিশা দেখিয়েছে। রাজ্যের পরিস্থিতিই তাঁকে বিজেপি-তে আসতে বাধ্য করেছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন সুদীপ। তাঁর কথায়, “আমার রাজনৈতিক জীবন ঘেঁটে দেবে এটা তো হতে পারে না। আমি সব সময় মানুষের জন্য কাজ করেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।” তাঁর দাবি, তিনি যে কথা বলছেন, সেগুলি দলের ভালর জন্যই বলছেন। দলকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য নয়। মানুষের মনে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যে ধারণা তৈরি হচ্ছে সেটা তাঁকে অত্যন্ত পীড়া দেয় বলেও মন্তব্য করেছেন সুদীপ। তিনি বলেন, “মূল শত্রুকে চিহ্নিত করতে ভুল করছে বিজেপি। যাঁরা রাগ, অভিমান করে দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাঁদের ফেরানো দরকার। কিন্তু তা না-করে সেই সব নেতা-কর্মীদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
বিজেপি বিধায়কের এই মন্তব্যকে তুলে ধরে আক্রমণ শানাচ্ছে তৃণমূলও। সুদীপের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেছে, এর থেকে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, ত্রিপুরায় অপশাসন চলছে। যার ‘আওয়াজ’ খোদ বিজেপি-র অন্দর থেকেই উঠছে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি-র ভিতর থেকেই বলা হচ্ছে এখানে উন্নয়ন নেই। সন্ত্রাস চলছে। সুদীপবাবু বলছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কী ঘটছে রাজ্যে ওঁদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানেন না এটা হতে পারে? আসলে বাংলায় গো-হারা হারার পর ত্রিপুরায় হারের ভূত দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গুন্ডারাজকে নীরবে মদত দিয়ে মুখরক্ষা করার চেষ্টা করছে ওরা।” পাশাপাশি, যে দলেরই ভোটার হন না কেন ত্রিপুরার উন্নয়নের জন্য তাঁদের তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কুণাল।
অন্য দিকে, পশ্চিবঙ্গের শিক্ষমন্ত্রী ব্রাত্য বসুও সুদীপের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আজ ত্রিপুরার অভিজ্ঞ বিজেপি নেতা সুদীপ যা বলেছেন তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আসলে তিনি বলতে চেয়েছেন, ত্রিপুরায় একটি গুন্ডার দল বিজেপি। তিনি আরও বলতে চেয়েছেন এই সরকার চলছে শিশুমূলক নেতৃত্বে। মাথায় বসে আছে খোকা বিপ্লব, খুকু প্রতিমা। মানে খোকা-খুকির দল আসলে প্রধানত ডানপিটে, হার্মাদ এবং বজ্জাত। যেটা আমরা এত দিন বলছিলাম, এখন সুদীপ বলছেন।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “তাই রাজ্য বিজেপি-র কাছে অনুরোধ, বিরোধী দলের উপর গুলি না চালিয়ে, পাথর না ছুড়ে, সাধারণ মানুষের উপর হামলা না করে সুদীপকে বহিষ্কার করে দেখান। তবে বুঝব মুরোদ আছে।”