প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, মানিক ফেলে এ বার হিরে নিন! শেষমেশ ত্রিপুরা কী নিল?
অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, ‘সাগর ছেঁচা মানিক’ মন্তব্য করে একদা হাততালি কুড়়িয়েছিলেন যিনি, সেই তথাগত রায়ের হাতে রাজভবনে কাল, শনিবারই পদত্যাগপত্র পৌঁছে যাওয়ার কথা সত্যি মানিক মানে মানিক সরকারের! বাস্তবে কি সেটাই ঘটবে?
কেউ বলেছিলেন, ‘উন্নয়নের লক্ষ্যে, বিজেপির পক্ষে’। কারও প্রস্তাব ছিল, ‘অনেক হল মানিক সরকার, এ বার চাই মোদী সরকার’! ঝাড়াই-বাছাই করে রাম মাধব, সুনীল দেওধর, হিমন্তবিশ্ব শর্মা আর বিপ্লব দেব মিলে বেছে নিয়েছিলেন— ‘চলো পাল্টাই’! ছোট্ট এই স্লোগান কি বাজিমাত করল?
কলকাতার মানিকতলা থেকে মানিক-রাজ্যে এসে কিছু ঘটনা জেনে একটা ছবি তৈরি করেছিলেন অভিজিৎ (বুম্বা) পাল। নানা জনকে চিত্রনাট্য পড়়িয়েও বাংলায় ছবি করানোর লোক পাননি। দিল্লির প্রযোজকের পরামর্শে অবশেষে হিন্দিতেই তৈরি হয় কাহিনি চিত্র। ছবিটা এখনও সেন্সর বোর্ডের ঘরে। কিন্তু অভিজিতের সেই ‘লাল সরকার’ কি মুক্তি পাবে জনতার আদালতে?
বিপুল প্রচার, দেদার খরচ আর মোদী-অমিত শাহদের আগ্রাসী আক্রমণের মুখে ঘাঁটি আগলাতে কয়েক মাস ধরে মাটি কামড়়ে থেকেছেন অজস্র সিপিএম কর্মী। ভোট মিটে যাওয়ার পরেও স্ট্রং রুমের সামনে তাঁরা অতন্দ্র প্রহরায়। শেষ রক্ষা কি হবে তাঁদের?
বিপ্লব যখন উদয়পুরে ত্রিপুরেশ্বরীকে পুজো দিচ্ছেন, আগরতলা শহরে ভাড়়া নেওয়া বিয়েবাড়়িতে নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে বিজেপি-র নেতা বলাই গোস্বামী যে আজও বলছিলেন, ‘‘সিপিএম মরণ কামড়় দিতে পারে! গণনা কেন্দ্রে নানা চাল চালতে পারে। যদি ওরা জিতে যায়, তা হলে কিন্তু খুব মার দেবে’’— তাঁর আশঙ্কা কি সত্যি হবে?
প্রশ্ন অগুনতি! এ সবেরই উত্তর মিলবে শনিবার।
বিপুল উন্মাদনার ত্রিপুরা নির্বাচনের অন্তিম অধ্যায়ে কাল সকাল ৮টা থেকে রাজ্য জুড়়ে ২০ কেন্দ্রে শুরু হবে ৫৯ কেন্দ্রের ভোট-গণনা। দিকে দিকে ১৪৪ ধারা। অজানা কিছুর আন্দাজে হোলির দিনে চুপচাপ গোটা রাজ্যটা!
কংগ্রেস এবং তৃণমূলকে গিলে ফেলার পরে বিজেপির ভোট যে বাড়়বে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু কত? জল্পনার কেন্দ্রে এই মূল প্রশ্নই। ত্রিপুরার দখল তাদের হাতে এলে দেশের ২০তম রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এটা নিছক পরিসংখ্যান! ত্রিপুরায় জয় মানে এ বার বাংলায় গেরুয়া ঝড়় তুলতে মরিয়া হবে মোদী-শাহের দল! কেরলে পাঁচ বছর অন্তর এমনিই সরকার বদলায়। কিন্তু শিকড় গেড়়ে বসা সিপিএমকে উৎখাত করার যে অনন্য কৃতিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝুলিতে শোভা পাচ্ছে, তাতে ভাগ বসাবেন বিপ্লব-সুনীলেরা!
হেরেই তো গিয়েছেন— এ রকম একটা ধারণার মুখে দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা ঠিক কী রকম? সহকর্মী খগেন্দ্র জামাতিয়ার শোকবার্তা নিজে হাতে লিখে পার্টি অফিসের সিঁড়়ি দিয়ে নেমে যেতে যেতে চেনা হাসি নিয়েই মানিক সরকার বলে গেলেন, ‘‘কিচ্ছু না! হারানো-জেতানো তো মানুষের হাতে!’’