যত এগিয়েছে বিজেপি, আগরতলায় ততই বেড়েছে উল্লাস। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
আড়াই দশকের বাম শাসনের অবসান। শুধু অবসান নয়, দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন বিজেপির দখলে। কোন বিজেপি? ত্রিপুরা বিধানসভায় এর আগে কোনও দিন পা-ই রাখতে পারেননি যে বিজেপির কোনও প্রতিনিধি।
একেবারে অপ্রত্যাশিত ফলাফল হয়েছে, তা নয়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা শাসক বাম এবং চ্যালেঞ্জার বিজেপির মধ্যে। বামেরা অবশ্য সে সম্ভাবনা নস্যাৎ করেছিল। বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া ত্রিপুরায় ঢুকেই মুখ থুবড়ে পড়বে বলে মানিক সরকার, বিজন ধররা দাবি করেছিলেন। আর গত কয়েক মাস ধরে ত্রিপুরায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন, পরিবর্তন হচ্ছেই।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জেরে ত্রিপুরার নির্বাচনের দিকে এ বার নজর ছিল গোটা দেশের রাজনৈতিক শিবিরের। নির্বাচনী প্রচারে যে এমন মারাত্মক ঝড় উঠতে পারে, তা উত্তর-পূর্বের আপাত নিস্তরঙ্গ রাজ্যটির বাসিন্দারা আগে কখনও কল্পনাও সম্ভবত করেননি। উত্তেজনাটা তাই টের পাওয়া যাচ্ছিল গোটা নির্বাচনী মরসুম জুড়েই। কিন্তু এমন টানটান লড়াই শেষে গেরুয়া ঝড়ের মুখে এতটা শোচনীয় ভাবে ধরাশায়ী হবে লালদুর্গ, এমনটা অনেকেই ভাবতে পারেননি।
শনিবার সকালে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পরে প্রথমে কাঁটায় কাঁটায় টক্কর চলছিল দু’পক্ষে। কিন্তু বেলা যত গড়িয়েছে, ততই শোচনীয় হয়েছে বামেদের পরিস্থিতি। বিজেপি ক্রমশ এগিয়ে গিয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিকে। একের পর এক কেন্দ্র থেকে অপ্রত্যাশিত হারের খবর পৌঁছেছে সিপিএমের রাজ্য দফতরে।
কঠিন লড়াই শেষে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ধনপুর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু ব্যবধান খুব বেশি নয়। মন্ত্রিসভার ‘নাম্বার টু’ অঘোর দেববর্মা হেরে গিয়েছেন আশ্রমবাড়ি থেকে। গতকাল প্রয়াত হয়েছেন যে মন্ত্রী, সেই উপজাতি নেতা খগেন্দ্র জামাতিয়ার কেন্দ্র কৃষ্ণপুরেও বামফ্রন্ট পরাস্ত।
অন্য দিকে বিজেপির প্রায় সব হেভিওয়েট জিতছেন। রাজ্য বিজেপির বনমালীপুরে সভাপতি বিপ্লব দেব, আগরতলায় সুদীপ রায়বর্মণ, মোহনপুরে রতনলাল নাথ জয়ী।
সকাল থেকেই আগরতলায় ভিড় জমিয়েছিলেন বামফ্রন্ট ও বিজেপির সমর্থকরা। তবে জমায়েতের বহরে বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে ছিল। স্থানীয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা তো বটেই, বিভিন্ন জেলা থেকে, বিশেষত উপজাতি অঞ্চল থেকে বহু বিজেপি কর্মী-সমর্থক আজ আগরতলায় জড়ো হয়েছিলেন। আরএমএস চৌমোহনি থেকে আইজিএম চৌমহনি পর্যন্ত এলাকা বিজেপি সমর্থকদের বিপুল জমায়েতে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গোলমাল রুখতে অবশ্য পুলিশি বন্দোবস্তও কড়া ছিল। ব্যারিকেড দিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল বাম ও বিজেপির জমায়েতকে।
• টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী আশিস কুমার সাহা।
• রাজ্যের কৃষি ও আদিবাসী কল্যাণ মন্ত্রী তথা বামফ্রন্ট প্রার্থী অঘোর দেববর্মা হেরে গিয়েছেন আশারাম বাড়ি কেন্দ্রে।
• বনমালীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি বিপ্লব দেব। তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
• ঋষ্য মুখ বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী তথা রাজ্যের বিদায়ী স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ, রাজস্ব ও পূর্ত মন্ত্রী বাদল চৌধুরী।
• কৈলাশহরে ইন্দ্রপতন ঘটেছে। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা বীরজিৎ সিংহ হেরে গিয়েছেন সেখানে।
• টাকারজলা বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি-র জোটসঙ্গী আইপিএফটি-র প্রার্থী নরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মা। হেরেছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী রমেন্দ্র দেববর্মা।
প্রতি মুহূর্তে বদলে গিয়েছে রং, গণনা কেন্দ্রের ভিতরেও টানটান উত্তেজনা ছিল ত্রিপুরায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
• ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জিতেছেন।
• আগরতলা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সুদীপ রায়বর্মণ জিতেছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী কৃষ্ণা মজুমদার।
• মোহনপুর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী তথা রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা রতনলাল নাথ। দ্বিতীয় স্থানে কংগ্রেসের দিলীপকুমার ঘোষ।
• মজলিসপুর বিধানসভা কেন্দ্রে হেরে গিয়েছেন রাজ্যের বিদায়ী বিদ্যুৎ মন্ত্রী তথা সিপিএম প্রার্থী মানিক দে। জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী সুশান্ত চৌধুরী।
ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট প্রথম ক্ষমতায় আসে ১৯৭৭ সালে। ১৯৮৩তে পরের বিধানসভা ভোটেও জেতে বামফ্রন্ট। কিন্তু ১৯৮৮-র ভোটে হেরে যায় কংগ্রেস-টিইউজেএস জোটের কাছে। পরে ভোট অর্থাত্ ১৯৯৩তে আবার বামফ্রন্ট। তার পর থেকে আরও চার বার টানা জয়।
আরও পড়ুন: লাইভ: মেঘালয়-নাগাল্যান্ডেও আজ ভোটগণনা
আরও পড়ুন: আগরতলায় গেরুয়া আবির ১০০ টাকা, লাল ৪০
বিজেপি এর আগে ত্রিপুরায় কখনও কোনও আসনে জেতেনি। কিন্তু এ বার তারা যে ভাবে ঝাঁপিয়েছিল প্রচার পর্বে, তা শাসক জোটের ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল। মোদী, জেটলির মতো কেন্দ্রীয় হেভিওয়েটরা বারবার গিয়েছেন প্রচারে। সেই জোরদার প্রচারাভিযানের ফলও মিলল হাতেনাতেই।
ফলাফলের আপডেট পেতে এই পাতায় নজর রাখুন