জয়মালা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অমিত শাহ। শনিবার দিল্লিতে বিজেপির সদর কার্যালয়ে। পিটিআই
ত্রিপুরায় বিজেপির বিপুল জয়ের কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটিকেই দিয়েছেন দলের তরফে উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাম মাধব। আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জয়ের নায়ক হিসাবে অসমের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা এবং ত্রিপুরায় ভোটের দায়িত্বে থাকা সুনীল দেওধরের কথাও উল্লেখ করেছেন। যদিও সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরের বিশ্লেষণ, লাল দুর্গ পতনের নেপথ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর গত চার দশকের কাজও। সারা দেশ থেকে বছরের পর বছর বাছাই করা প্রচারকদের ত্রিপুরায় পাঠিয়েছে সঙ্ঘ। ১৯৯৯-এ চার আরএসএস কর্মী উগ্রপন্থীদের হাতে অপহৃত ও খুন হন। তার পরেও সেই কাজ থামেনি। সঙ্ঘের এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘এক সময় যে রাজ্যে প্রকাশ্যে শাখা খুলতে পারেনি আরএসএস, সেখানেই এখন ২৭৫টি শাখা চলছে। আদিবাসী এলাকায় প্রায় ১০টি বিনা পয়সার হস্টেল। চলছে অসংখ্য সেবা প্রকল্প। যার ফল মিলল।’’
সঙ্ঘের খবর, ষাটের দশকে হাওড়ার বাসিন্দা গণেশ দেবশর্মাকে আগরতলায় প্রচারক হিসাবে পাঠানো হয়। এর পর মূলত বাংলা থেকেই প্রতি বছর এক বা একাধিক প্রচারক ত্রিপুরার বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সঙ্ঘের কাজ শুরু করেন। ১৯৯৯ সালের ৬ অগস্ট ধলাই জেলার কাঞ্চনছড়া বনবাসী কল্যাণ আশ্রম থেকে আরএসএসের চার নেতাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এনএলএফটি জঙ্গিরা। তাঁরা গিয়েছিলেন বাংলা থেকে। সঙ্ঘের এক নেতার কথায়, ‘‘তখন কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী। তবু ওঁদের বাঁচানো যায়নি।’’ ওই নেতা জানান, এর পর কিছু দিন উত্তর ত্রিপুরায় কাজের গতি থেমে গেলেও ফের বাইরে থেকে প্রচারক পাঠিয়ে সংগঠন তৈরিতে ঝাঁপায় সঙ্ঘ।
সঙ্ঘ সূত্রের খবর, এখন ত্রিপুরায় আরএসএসের কাজ দেখেন নিখিল নিবাসকর। তিনি আদতে মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। ছিলেন মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলার দায়িত্বে। সেখান থেকে তাঁকে বছর দুই আগে ত্রিপুরায় পাঠানো হয়। এক সঙ্ঘ নেতার কথায়, ‘‘প্রথমে সরাসরি শাখা না-খুলে আদিবাসী স্কুল-হস্টেল তৈরি এবং সেবা প্রকল্প চালু করা হয়। তাতে বহু মানুষ সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত হন। এর পর ধীরে ধীরে শাখা খোলা শুরু হয়। তবে সেই সংখ্যা ৭৫ থেকে ১০০-র মধ্যেই ছিল।’’
ওই নেতা জানাচ্ছেন, ২০১৪ সালে দিল্লিতে ক্ষমতা বদলের পর সঙ্ঘের কাজেও জোয়ার আসে। ত্রিপুরায় এখন শাখার সংখ্যা ২৭৫। সেখানে অনেক যুবক সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ফলে এ বারের ভোটে নতুন ভোটারদের বড় অংশের সমর্থন পেয়েছে বিজেপি। গ্রামাঞ্চলে বিজেপির সংগঠন বাড়াতেও ‘বেস ক্যাম্প’ হিসাবে কাজ করেছে আরএসএসের শাখাগুলি। যদিও জয়ের দিনেও সঙ্ঘের কেউ ‘রাজনৈতিক সাফল্য’-এর কৃতিত্ব নিতে রাজি নন। নিখিলের মন্তব্য, ‘‘রাজনীতি প্রসঙ্গে বক্তব্য নেই।’’
আরও পড়ুন: ‘নীরবতা’ ভেঙে হুঙ্কার মোদীর