প্রতীকী ছবি
শীতকালীন সমস্যার সুরাহায় যে-রাস্তা নিতে হয়, ঘোর গ্রীষ্মেও সেই পথ নিতে বাধ্য হচ্ছে রেল! কারণটা শুধু আলাদা। শীতে কুয়াশার দরুন উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বহু ট্রেন বাতিল অথবা বিলম্বিত হয়। এ বার দেশ জুড়ে প্রবল গ্রীষ্মেও রেল-কর্তৃপক্ষকে প্রায় নির্বিচারে ট্রেন বাতিল করতে হচ্ছে বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার জোগান অক্ষুণ্ণ রাখার তাগিদে। ট্রেন বাতিল করে ফাঁকা রাখা হচ্ছে কয়লাবাহী মালগাড়ি চলাচলের রুট।
বিদ্যুতের চাহিদায় ভাটার টান শুরু হওয়ার আগে, জুন পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রেলের আধিকারিকেরা। প্যাসেঞ্জার ট্রেন, অল্প সংখ্যক সাপ্তাহিক এক্সপ্রেস মিলিয়ে ওই সংখ্যা দৈনিক ৬০০ থেকে ৬৫০-র মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। যাত্রিবাহী ট্রেনের ক্ষেত্রে রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ত এক্সপ্রেসের মতো প্রথম সারির কিছু ট্রেন ছাড়া বাকি সব ট্রেনের চেয়ে কয়লাবাহী রেককে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রেল সূত্রের খবর।
দেশের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির ৯৫ শতাংশই কয়লা খনি থেকে অনেক দূরে। ফলে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্ব ভারতের কয়েকটি রাজ্য থেকে কয়লাবাহী রেকগুলিকে প্রতিনিয়ত কয়েকশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওই সব রেকের পথ করে দিতেই পরপর ট্রেন বাতিল করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল।
অতিমারিতে গত দু’বছর যাত্রিবাহী ট্রেন থেকে রেলের আয় অনেকটা ধাক্কা খেয়েছিল। গরম পড়তেই এ বার গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলিতে বেশি সংখ্যায় বিশেষ ট্রেন চালিয়ে সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিতে চেয়েছিল রেল। ওই সব ট্রেন খুব একটা বাতিল না-করলেও বিভিন্ন সময়ে কয়লাবাহী রেককে রাস্তা ছেড়ে দিতে গিয়ে ওই সব ট্রেনকে পথে থামিয়ে রাখতে হচ্ছে।
এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলিতে ট্রেনের বিলম্বের প্রবণতা বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে কয়লা এবং অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রেনের রেককে পথ ছেড়ে দিতে গিয়ে উত্তরবঙ্গগামী বিভিন্ন ট্রেন ১৫-২০ দিন ধরে প্রায়ই দুই থেকে চার ঘণ্টা দেরিতে চলছে। রেল সূত্রের খবর, মালদহ ডিভিশনে ট্রেনের বিলম্ব বেশি। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ছুঁয়ে যায়, এমন ট্রেনও প্রায়শই দেরিতে চলছে। যাত্রী পরিষেবায় তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন রেলকর্তাদের একাংশ। তবে গত এপ্রিলে রেল সারা দেশে রেকর্ড পরিমাণ (১২২.২ মিলিয়ন টন) পণ্য পরিবহণ করেছে। যা একই সময়ে গত বছরের তুলনায় ১০.৫ মিলিয়ন টন বা ৯.৫ শতাংশ বেশি। ওই পরিমাণ পণ্য পরিবহণ যে সম্ভব হয়েছে, তার পিছনেও অন্যতম প্রধান অবদান কয়লার।