ছবি: সংগৃহীত।
বেহাল অর্থনীতি, নাগাড়ে ছাঁটাই, দ্রুত বাড়তে থাকা বেকারত্ব আর বছরের পর বছর থমকে থাকা বেতনে এমনিতেই নাভিশ্বাস সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীদের। তার উপরে কেন্দ্রের নীতির খেসারত গুনে বাড়ছে অসাম্য। মাথার উপরে খাঁড়া এনআরসি-র। আর এই সমস্ত কিছুর জন্য মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে তাদের একতরফা ‘শ্রমিক-বিরোধী’ নীতির প্রতিবাদে ৮ জানুয়ারি সারা দেশে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিল কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। এতে নেই শুধু সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)।
অভিযোগের আঙুল তোলা ইউনিয়নগুলির দাবি, দ্বিতীয় দফার মোদী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্র সাফল্যের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আসলে দেশের অর্থনীতি রসাতলে। চাকরি তো নেই-ই, উল্টে ছাঁটাই হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ কর্মী। যাঁদের চাকরি কোনও ক্রমে টিকে, তাঁদের বড় অংশেরও গত পাঁচ বছরে প্রকৃত বেতন বাড়েনি। সব মিলিয়ে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের। তার উপরে শুধু মালিকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে একের পর এক ‘শ্রমিক-বিরোধী’ সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে কেন্দ্র। তা সে শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাবই হোক বা নতুন বেতন বিধি। এই সমস্ত কারণের জাঁতাকলে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশার শেষ নেই বলে শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ।
এ ছাড়া, প্রতিরক্ষা থেকে রেল— বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্র বেলাগাম ভাবে বেসরকারিকরণও সমস্যা বাড়াচ্ছে বলে ইউনিয়নগুলির অভিযোগ। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংযুক্তি, ২০৩৯ সালে গিয়ে চাষিদের মাত্র ৩,০০০ টাকা পেনশন,
কয়লা উত্তোলনে ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়া আসলে ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ স্লোগানের নামে নির্মম রসিকতা বলেই মনে করছে তারা। বিরোধিতা করছে অর্থনীতির আসল সমস্যার দিকে নজর না-দিয়ে শুধুমাত্র কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, এনআরসি-র মতো গুটিকয় বিষয়ে প্রচারের আলো ফেলে রাখার।
কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় কর্পোরেট কর্তাদেরই সম্পদ তৈরির কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই অবস্থান থেকে সরে এসে শ্রমিকদের সেই হিসেবে দেখুক কেন্দ্র। ধনের সম বণ্টন, মাসে ন্যূনতম জাতীয় গড় বেতন ২১,০০০ টাকা করা, সরকারি খরচে কমপক্ষে ১০,০০০ টাকা পেনশন, গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের ব্যাপ্তি বাড়ানো সমেত ১২ দফা দাবি যাতে কেন্দ্রের কানে পৌঁছয়, মূলত সেই কারণেই ধর্মঘটের ডাক বলে জানিয়েছে ইউনিয়নগুলি।
তবে মনমোহন সিংহের জমানায় সরকারের শ্রমিক-বিরোধী কোনও সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সাধারণত এককাট্টা থাকত আইএনটিইউসি সমেত সব কেন্দ্রীয় ইউনিয়ন। কিন্তু এ বারের ধর্মঘটে এখনও শামিল নয় সঙ্ঘের শাখা বিএমএস।