চেন্নাইয়ের রাস্তায় আন্দোলনকারীরা। ছবি: পিটিআই।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে ফুঁসছে গোটা দেশ। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কখনও পুলিশ, কখনও মুখোশধারী দুষ্কৃতীদের হামলা চলছেই। তার মধ্যেই ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মন্দা এবং বেকারত্ব নিয়ে দেশ জুড়ে ধর্মঘট শুরু হল। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বন্ধ শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে এ দিন দেশের সর্বত্র সারাদিন ব্যাপী বন্ধ ডাকা হয়েছে। প্রায় ২৫ কোটি মানুষ তাতে শামিল হবেন বলে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাতে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই দেশের ১২টি বিমানবন্দর বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্র। এয়ার ইন্ডিয়াও বিক্রি হওয়ার পথে। বিএসএনএল-এমটিএনএল সংযুক্তিকরণের কথাও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। জোর করে ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট নিতে বাধ্য করা হয়েছে টেলিকম কর্মীদের। তার জেরে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
ধর্মঘটের মাধ্যমে সরকারের এই সব সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে শুধু শ্রমিক সংগঠনগুলিই নয়, এ দিনের ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে ১৭৫টি কৃষক ও কৃষি সংগঠনও।
অসমে বাস চলাচল বন্ধ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
এক নজরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্ধের চিত্র:
• শ্রমিক সংগঠনের ডাকা বন্ধে ডাক পরিষেবা ব্যাহত নাগাল্য়ান্ডে।তবে বেশ কিছু জায়গায় বাজার-দোকান খোলা রয়েচে।
• গোয়ায় বন্ধের প্রভাব তেমন পড়েনি।
• শান্তিপূর্ণ বন্ধ চলছে অসমে। সাধারণ মানুষ রাস্তায়। নেমে আসায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। বাজার-দোকান বন্ধ রয়েছে। তবে খোলা রয়েছে সরকারি দফতর।
• হরিয়ানায় পরিবহণ কর্মীদের একাংশ বন্ধে যোগ দিয়েছেন। তবে এতে যান চলাচলে তেমন প্রভাব পড়েনি। পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে একটি ছাত্র সংগঠন।
• চণ্ডীগড়ে সরকারি ব্য়াঙ্ক, পরিবহণ এবং পোস্ট অফিসের কর্মীরা বন্ধে শামিল হয়েছেন। শামিল হয়েছে একাধিক কৃষক সংগঠনও। লুধিয়ানা, জলন্ধর, ভাতিন্ডা, পঞ্জাবে সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। জলন্ধরে কারখানায় যাওয়ার পথে একদল শ্রমিককে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। লুধিয়ানা এবং পঞ্জাবে যান চলাচলে প্রভাব পড়েছে।
• বন্ধের জেরে রাজস্থানে ব্যাহত ব্যাঙ্ক পরিষেবা। পরিবহণ কর্মীরাও বন্ধে যোগ দেওয়ায় যান চলাচলের উপর প্রভাব পড়েছে। জয়পুরে একটি এলআইসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা।
উত্তরপ্রদেশে পথে আন্দোলনকারীরা। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
• ভোপালে বন্ধে যোগ দিলেন ব্য়াঙ্কের কর্মীরা।
• কোচিতে সমস্ত দোপানপাট বন্ধ। শুনাশান রাস্তাঘাট। মেট্রো স্টেশনে যাত্রী নেই বললেই চলে।
• কেরলের সর্বত্রই বন্ধের প্রভাব পড়েছে। বন্ধ সমস্ত দোকানপাট ও দফতর।
• শ্রমিক সংগঠনের বন্ধকে সমর্থন জানালেন মহারাষ্ট্রের পূর্ত মন্ত্রী অশোক চহ্বাণ।
• চেন্নাইয়ের মাউন্ট রোডে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
শুনশান ত্রিপুরা। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
• মুম্বইয়ে ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেডের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
• অল ইন্ডিয়া কিষান সভা (এআইকেএস) আজ আজাদ ময়দানে আজ বিক্ষোভে নামতে চলেছে।
• অবরোধে সমর্থন জানালেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘মোদী সরকারের মানুষ ও শ্রমিক বিরোধী নীতির জন্যই বেকারত্ব দেখা দিয়েছে। দুর্বল বয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলি। ’’
রাহুল গাঁধীর টুইট।
ধর্মঘটে শামিল দিল্লিবাসী। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
• গুয়াহাটিতে সমস্ত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
• কর্নাটকের মাডিকেরিতে সরকারি বাস লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি আন্দোলনকারীদের।
• ওড়িশার ভুবনেশ্বরে রাস্তা অবরোধ করছেন অবরোধকারীরা।
• পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় রেল অবরোধ চলছে।
অসমে বন্ধ দোকানপাট। —নিজস্ব চিত্র।
• হরিয়ানায় বন্ধে শামিল সড়ক পরিবহণ দফতরের কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, সড়ক পরিবহণ ব্.বস্থার বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা চলছে। হরিয়ানায় প্রতিদিন ১২ লক্ষের বেশি মানুষ ভলভো-সহ সরকারি বাসে যাতায়াত করেন। পরিবহণ কর্মীরা বন্ধে শামিল হওয়ায় তাঁরা নাজেহাল হতে পারেন।
• কেরলে পর্যটন বিভাগকে বন্ধ থেকে ছাড় দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি।
তিরুঅনন্তপুরমে মিছিল শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের।
• রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কগুলির সংযুক্তিকরণের বিরুদ্ধে আজকের বন্ধে সমর্থন জানিয়েছে ব্য়াঙ্ক ইউনিয়নগুলি। অল ইন্ডিয়া ব্য়াঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশেন (এআইবিইএ), অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইবিওএ), ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (বিইএফআই), ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অফিসার্স এমপ্লয়িজ ফেজারেশন (আইএনবিইএফ) এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অফিসার্স কংগ্রেস (আইএনবিওসি) বন্ধে শামিল। তবে তাঁদের কাজকর্ম স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ।
• বাংলায় বামপন্থী সংগঠনগুলি বন্ধে শামিল। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এতে সমর্থন দেয়নি। এই মুহূর্তে সর্বত্র যান চলাচল স্বাভাবিক।তবে যাত্রী সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম।
রেল অবরোধ অসমে। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
• মহারাষ্ট্রের নাসিক, কোলাপুর, সঙ্গলি, পুণে-সহ একাধিক জায়গায় ‘রাস্তা রোকো’ কর্মসূচি শ্রমিক সংগঠনগুলির। রেল ইউনিয়নের তরফেও বন্ধে সমর্থন। তবে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হবে না বলে জানিয়েছে ‘ন্যাশনাল রেলওয়ে মজদুর সঙ্ঘ’।
• ব্যাঙ্ক পরিষেবায় ধর্মঘটের প্রভার বিশেষ পড়বে না বলে দাবি এসবিআই কর্তৃপক্ষের।
• দেশ জুড়ে বন্ধের মধ্যেই ব্যাঙ্ক পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।