মুম্বইয়ে এই সময়টায় গ্রীষ্মদেবের চোখরাঙানি থাকেই। বৃষ্টি নামতে এখনও কিছু দেরি। এই আনচান গরমে মনে হয় কোনও ঠান্ডার শহরে গিয়ে দিন-কয়েক কাটিয়ে আসি। গ্রীষ্মের ত্র্যহস্পর্শকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেরিয়ে পড়ি শীতল ছোঁয়ায়।
ভারতের নানা প্রান্তে শৈলশহরও তো আর কম নেই। পশ্চিমঘাট, সহ্যাদ্রীতে তো প্রায়শই চলে যাই। তবে আমার পছন্দ হিমালয়। এ বার যেমন গাড়োয়াল উত্তরাখণ্ডের আউলি-জোশীমঠ যাওয়ার বন্দোবস্ত করার জন্য শরণাপন্ন হয়েছিলাম এক নামীদামি ভ্রমণ সংস্থার। আজকাল তো অনলাইনেই ঘরে বসে ট্রেন, হোটেল বুকিং ও সঙ্গে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা সমস্তই হয়ে যায়।
খেই-হারানো মুগ্ধতা নিয়ে প্রকৃতির আবিলতায় একটু নিসর্গবিলাস। গাড়োয়াল হিমালয়ে আমাদের মতো অচেনা পথিক দিন কয়েক অবসরের আরামে শীতলতা ছুঁয়ে ফিরে যাবে একরাশ সুখস্মৃতি নিয়ে। আর কী চাই? মৌনী হিমালয়ের বিশুদ্ধ পরিবহে নতুন করে আর কীই বা চাওয়ার থাকতে পারে। যেখানে দু’চোখের চরাচর জুড়ে হিমালয়ের বৈভব, অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গা নদীসঙ্গম, সবুজ ঘেরাটোপে আঁকিবুকি-কাটা তুষারধবল পাহাড়শ্রেণি, জলপ্রপাত, বাঁক খেয়ে ঘুরে যাওয়া পাহাড়ি রাস্তা আর চূড়ান্ত ভাল লাগা।
গাড়োয়াল হিমালয়ের কোলে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার এক পবিত্র শহর জোশীমঠ। পাহাড়ি এই শহরটি সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৬১৫০ ফুট উচ্চতায়। আগে অঞ্চলটির নাম ছিল জ্যোতির্মঠ। পরে লোকমুখে হয়ে যায় জোশীমঠ। জ্যোতির্মঠ হল ‘উত্তরামণ্য মঠ’ বা বলা যেতে পারে উত্তরের মঠ। আদি শঙ্করাচার্য প্রতিষ্ঠিত চার মঠের মধ্যে অন্যতম। আদি শঙ্করাচার্য ভারতে মোট চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অন্য প্রসিদ্ধ তিনটি মঠ হল পুরী, দ্বারকা ও শ্রীনগিরি। আদি শঙ্করাচার্যর সনাতন নীতি মতে জ্যোতির্মঠ হল বেদের ‘অথর্ববেদ’। কথিত আছে আদি গুরু শঙ্করাচার্য উত্তরাখণ্ড যাত্রাকালে প্রথম পৌঁছন জোশীমঠ। আজ শঙ্করাচার্যের আশ্রমের নামও হয়েছে জ্যোতির্মঠ। এখানেই শঙ্করাচার্য ব্যাসমুণির বেদান্ত দর্শনের ওপর ভাষ্য দেন। এখান থেকেই শঙ্করাচার্য বদ্রীনারায়ণ ধাম দর্শনের জন্য রওনা হন। সেখানে পৌঁছে বদ্রীনারায়ণ শিলার ওপর মূর্তি এবং মন্দির স্থাপন করেন।
অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গার অপরূপ মিলিত রূপ প্রকাশ পেয়েছে জোশীমঠের পাদদেশে বিষ্ণুপ্রয়াগে। অপাপবিদ্ধা প্রকৃতির রংমহলে সে এক মুগ্ধ দৃশ্যময়তা রচনা করেছে। চার পাশে হিমালয়ের উদাত্ত প্রকৃতি। সুউচ্চ গিরিশোভিত দৃশ্যপট আর নদীসঙ্গমের স্বপ্নবিধৃত নীল পরিবহ। অপার মুগ্ধতায় চেয়ে থাকি হিমালয়ের ওই নদী-জোড়ার মিলনদৃশ্যের দিকে।
মুম্বইয়ে লোকমান্য তিলক টার্মিনাস থেকে ১২১৭১ হরিদ্বার এসি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে হরিদ্বার পৌঁছে, খাওয়াদাওয়া সেরে গাড়ি নিয়ে চললাম জোশীমঠ। প্রায় ঘণ্টা পাঁচেকের পথ। দূরত্ব জাতীয় সড়ক-৫৮ ধরে প্রায় ২৭৬ কিমি। হরিদ্বার-হৃষিকেশ-দেবপ্রয়াগ-শ্রীনগর-রুদ্রপ্রয়াগ-কর্ণপ্রয়াগ-চামোলি-গোপেশ্বর হয়ে জোশীমঠ। সমস্ত যাত্রাতেই পথশোভা যে অপূর্ব, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় আলোচনায় তছনছ হয়ে যাচ্ছে আবেগ জড়ানো ভ্রমণরসিক ভাবুক মন। খুলে যাচ্ছে অনুভবের সব ক’টি আগল। কোথাও বেড়াতে এলেই পাগলপারা মনের ভেতর এমনটাই চলতে থাকে।
জোশীমঠ ব্যস্ত পাহাড়ি শহর। খুবই প্রাচীন শহর। কার্তিকেয় পুরাণেও জোশীমঠের উল্লেখ পাওয়া যায়। পার্বতীপুত্র কার্তিকের নামে এই শৈল শহরটির নাম ছিল কার্তিকেয়পুরা। ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন বৃক্ষ ‘কল্পবৃক্ষ’ গাছটিরও সন্ধান পাওয়া যায় এই জোশীমঠেই। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে ১২০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই কল্পবৃক্ষ গাছটি।
স্থানীয়রা হিন্দিতে কথা বললেও এদের উচ্চারণে গাড়োয়ালি টান রয়েছে। প্রচুর হোটেল, রিসর্ট, রেস্তোরাঁ, দোকানপাঠ, মন্দির, গ্যারেজ, যানবাহন নিয়ে জমজমাট জোশীমঠ। এখান থেকেই বদ্রীনাথধাম এবং গুরুগোবিন্দ ঘাটের ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার জাতীয় উদ্যানে যাওয়ার সড়কপথ। পাহাড় সংলগ্ন হোটেলগুলির অবস্থানও বেশ সুন্দর। প্রায় প্রতিটি হোটেলের ঘরের জানালা বা বারান্দা থেকেই গাড়োয়াল হিমালয়ের পাহাড়চুড়ো দৃশ্যমান। পাহাড়ের গায়ে হেলান দেওয়া ‘হোটেল অতিথি’ আপাতত আমাদের দু’রাতের অবকাশের ঠিকানা।
জোশীমঠে প্রচুর দেবদেবীর মন্দির। হনুমান, গৌরীশঙ্কর, গণেশ, সূর্য, নৌদেবীর মন্দির রয়েছে। অষ্টম শতকে নির্মিত আদি শঙ্করাচার্য প্রতিষ্ঠিত মঠটি উত্তর ভারতের প্রসিদ্ধ মঠ। এখানে বদ্রীনারায়ণ ও রাজেশ্বরী দেবীর মন্দিরও রয়েছে। অদূরে একটি পবিত্র গুহার সন্ধান পাওয়া যায়। কথিত আছে সেই গুহায় আদি শঙ্করাচার্য তপস্যা করতেন। ভগবান বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার তথা নরসিংহরূপী নারায়ণমূর্তি সংবলিত উল্লেখযোগ্য মন্দির নরসিমা মন্দির। শতাব্দীপ্রাচীন মন্দির। এখানে নরসিমা ভগবানের মূর্তিটির দক্ষিণ হস্ত চুলের মতো সরু। জনশ্রুতি, এমন একটা সময় আসবে যখন সেটি ভেঙে বা নষ্ট হয়ে যাবে—তখন বদ্রীনাথের কাছে জয়-বিজয় পর্বত দুটিও ধুলিসাৎ হবে। এবং বদ্রীনাথধামের বদ্রীনারায়ণ মূর্তিটিও অদৃশ্য হয়ে যাবে বর্তমান মূল মন্দির থেকে। প্রবল তুষারপাত ও শৈত্যর দিনে যখন বদ্রীনারায়ণ মন্দির বন্ধ থাকে ছয় মাসের জন্য—সেই সময়টুকু এই নরসিমা মন্দিরেই ভগবান বদ্রীনারায়ণের পুজো অনুষ্ঠিত হয়। জোশীমঠকে সেই জন্য বদ্রীনারায়ণের ‘শীতকালীন প্রার্থনাস্থলও’ বলা হয়ে থাকে।
স্থানীয় পুরোহিত ও ধর্মগুরু সম্প্রদায় মনে করেন, ভবিষ্যতে যখন বদ্রীনারায়ণ মন্দিরটি থাকবে না, তখন জোশীমঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে কালো কষ্টিপাথরে নির্মিত শালগ্রাম শিলার আদলে ‘ভবিষ্য বদ্রী’ হিসেবে পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে। স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস, বর্তমান কেদারধামের মূর্তিও একদিন অনুরূপ ভাবেই অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং ‘ভবিষ্য কেদার মন্দির’ নামে এই স্থানে পুনর্জন্ম হবে ছোট এক শিবলিঙ্গ হিসাবে।
জোশীমঠ থেকে প্রায় মাইল দশেক দূরে আরও এক নির্ভেজাল প্রকৃতিপাঠ নিয়ে পড়ে আছে তপোবন নামক মনোরম অঞ্চলটি। প্রাকৃতিক একটি উষ্ণ প্রস্রবনও আছে এখানে। তপোবনের আঙিনা থেকে সামনেই প্রবাহিত ধৌলিগঙ্গার অসামান্য রূপটি ক্যামেরায় টুকে রাখি। এই পাহাড়ি শহরাঞ্চলগুলোতে কিছুটা বেশি সময় পর্যন্ত সূর্যালোক থাকে। তার পরই ঝুপ করে নামে সবুজ অন্ধকার মাতিয়ে সন্ধে। তখন জোশীমঠ যেন নিরালা নিঝুম এক চুপ শহর।
রাত ন’টা নাগাট হোটেল থেকে বেরিয়ে পায়ে পায়ে বাজার এলাকায় এলাম। বিস্কুটের প্যাকেট, শুকনো ফল এ সব কিনে একটা স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় মাখনের ছিটে দেওয়া তাওয়া রোটি, ভিন্ডি রোটি, ভিন্ডি মশালা ও ডাল ফ্রাই সহযোগে নৈশাহার সারলাম। দেবস্থান বলেই বোধহয় এ সব অঞ্চলে নিরামিষ আহার সর্বত্র। রেস্তোরাঁটির উল্টো ফুটপাতে একরত্তি একটা দুধের দোকানে এই রাতেও বেজায় ভিড়। বড় দুটি উনুনে লোহার কড়াইয়ে অনবরত দুধ ফুটছে। অনেকেই মাটির বড় ভাঁড়ে দুধ কিনে খাচ্ছেন, কেউ বা বাড়ি থেকে আনা পাত্রে গরম দুধ কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন। আমরাও ধোঁয়া-ওঠা গরম দুধ আধ পোয়া করে খেলাম। জোশীমঠের এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম ঘন দুধে যেন অমৃতর আস্বাদ।
হোটেলের বারান্দার দরজা একটুখানি ফাঁক করতেই বাইরের হিমেল বাতাস লাফিয়ে ঘরে ঢোকে। দূর পাহাড়ের গায়ে ঝুপ্পুস অন্ধকার। পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা ধরবাড়ির ভেতর জ্বলা আলোগুলোকে জোনাকি বলে ঠাহর হয়। জোশীমঠে রাত ঘন হয়। বাইরের পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে। মুম্বইয়ের গরম থেকে পালিয়ে এখন বিছানার লেপের উষ্ণতাকে বন্ধু মনে হয়।
পূব দিগন্তে সামান্য আলোর আভাস দেখা দিতেই জানলার পর্দা সরিয়ে দিই। বাইরে পাহাড়গুলোর গায়ে এখনও কুয়াশার হালকা আস্তরণ লেগে। প্রাতঃরাশ শেষে আমরা আউলির পথে। তবে আমরা একটু ভুল করে ফেললাম। পরে আফসোস হয়েছে খুব। আসলে আমরা তড়িঘড়ি নিজেদের ভাড়া গাড়ি টাটা ইন্ডিকাতেই আউলি চলে এসেছি। রোপওয়ে স্টেশনের হদিস না নিয়েই।
এশিয়ার মধ্যে উচ্চতম ও দীর্ঘতম বিখ্যাত কেবলকার যাত্রাপথ হল জোশীমঠ থেকে আউলি ৩০১০ মিটার উচ্চতা দিয়ে যাতায়াত। কাশ্মীরের গুলমার্গের পরই এর স্থান। শীতকালভর এই রোপওয়ে যাত্রা চালু থাকে। জোশিমঠ থেকে আউলির যাওয়া-আসার কেবলকার ভাড়া ৪০০ টাকা। ৩. ৯৬ কিমি দূরত্বের ১১১০ মিটার লম্বা রোপওয়ে যাত্রা পেরোতে সময় লাগে মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট। সমস্ত যাত্রাপথে মোট ১০টা কেবল টাওয়ার আছে। দুই পাশে বরফ মোড়া পাহাড় আর নীচে খাদে ওক গাছের জঙ্গল। অদ্ভূত আকর্ষণীয় সে রোপওয়ে যাত্রাপথ। স্থানীয় গাড়োয়াল ভাষায় কেবল কার-কে বলা হয় ‘গাণ্ডোলা’। তুষাররঞ্জিত হিমালয়ের শোভা ও প্রাকৃতিক ব্যাঞ্জনার জন্য পর্যটকদের কাছে আউলির এই গাণ্ডোলা যাত্রার কদর খুব।
জোশিমঠ থেকে সড়ক পথে ১৬ কিমি দূরত্বে আউলির যাত্রাপথটিও কম আকর্ষণীয় নয়। জোশীমঠের মূল বাজার এলাকা পেরোতেই পাহাড়ি পথ চলে গেছে আরও উপরে আউলির দিকে। মসৃণ রাস্তা। সর্পিল বাঁক। বাড়িঘর, পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে শিশু ছাত্রছাত্রীরা দল বেঁধে স্কুলে যাচ্ছে। ওদের দিকে হাত নাড়তে ওরাও লাজুক মুখে প্রত্যুত্তরে হাত নাড়তে থাকে। নজরে পড়ছে আউলির ক্লিফটপ ক্লাব, অ্যালপিন কটেজ, লগহাট ইত্যাদির বিজ্ঞাপন।
প্রায় চারদশক আগে পর্যন্ত আউলির বুগিয়াল ছিল ঘাসে ঢাকা সবুজ প্রান্তর। এটি ছিল মূলত গবাদি পশুদের চারণভূমি। জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত সবুজ তৃণে ছাওয়া থাকতো আউলি। তারপরই আস্তে আস্তে শ্বেত শুভ্র তুষারে ঢেকে যাওয়া আউলির অপার প্রান্তর। প্রতি জন্মাষ্টমীতে স্থানীয় গাড়োয়ালি মানুষজন এবং গবাদি পশুপালকরা এখানে উৎসব পালন করেন।
আউলি বুগিয়াল শব্দবন্ধটি গাড়োয়াল ভাষায় ব্যবহৃত হয়। এখানে ‘বুগিয়াল’ অর্থ হল ‘পশুচারণ ক্ষেত্র’। আউলির গন্ধমাদন রেঞ্জের সঞ্জবনী চূড়ায় হনুমানজির ভক্তরাও উৎসবের আমেজে আসেন। এই হনুমান মন্দিরটির আবিষ্কর্তা হলেন সন্ত ফতোরামজি। প্রতি বছর শুক্লা চৈত্র পূর্ণিমায় হনুমানজি মন্দিরের দ্বার উদঘাটন হয়। এবং মার্গ শিষ্য পূর্ণিমায় মন্দির দ্বার বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় সাধু-সন্ত-ভক্তদের সমাগম হয় এই মন্দিরে।
সাগরতল থেকে আউলির উচ্চতা ২৫০০-৩০৫০ মিটার। আউলির হিলটপ-এ পৌঁছে সৌন্দর্যে দিশেহারা হয়ে যাই। বরফের ছ’টায় চমকদমকে ভরে আছে আউলির সমস্ত চরাচর। রোদের বিচ্ছুরণে বরফ পাহাড়ে ক্রমশ চোখ ঝলসে য়ায়। ক্যামেরা সচল রেখেছি হিমালয়কে লেন্সে ধরে রাখতে। এখন বরফ নেই। মিলিটারি সেনারা ঘোড়া নিয়ে চলেছেন। ক্যামেরায় বন্দি করে রাখি তাও। কোথাও কোথাও সাদা ছাউনি খাটিয়ে সেখানে সেনাবাহিনীর জটলা। কোথাও আবার খোলা ময়দানে ফৌজিদের প্যারেড।
ভারতীয় সেনা ১৯৬২ সালের ইন্দো-চায়না যুদ্ধের সময় থেকেই বদরিকাশ্রম তথা এই পুরো গন্ধমাদন রেঞ্জের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন। জোশিমঠে এটির সদর দফতর। সেনাবাহিনীর প্রধানেরা আউলির মনলোভা সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ব্যবস্থাপনায় এবং ইন্দো-টিবেটিয়ান বর্ডার ফোর্স-এর সহায়তায় আউলিতে উপযুক্ত নানান ক্রীড়া বিভাগ চালু করেন। এই ক্রীড়া বিভাগে পর্বতারোহণ-এর যাবতীয় খুঁটিনাটি, মিলিটারি স্পোর্টস এবং রকমারি স্নো গেমস অনুষ্ঠিত হয়। গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগম-এর তত্ত্বাবধানে ইদানীং পর্যটকদের দৃষ্টি আউলির দিকে ঘোরাতে বিভিন্ন স্নো গেমস ট্রেনিং, স্কি-র মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস আউলির বরফে স্কি উৎসব পালিত হয়। এ ছাড়া ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ লেভেলও অনুষ্ঠিত হয়।
হিমালয়ের নিসর্গ শোভায় মেতে থাকে ভ্রমণবিলাসী মন। আউলির পাগাড় ঢালে দিশাহীন বিছিয়ে ওই সবুজ জেল্লা। কখনও মেঘচাদরে পলকে হারিয়ে যাচ্ছে আউলি। হারিয়ে যাচ্ছে জোশীমঠ। মেঘ রোদ্দুরের খুনসুটিতে বেলা গড়ায়। কিছু দৃশ্য বিছিয়ে থাকে চোখের নাগালে নিয়মমাফিক।
আপাতত সফর পৃষ্ঠাগুলি উড়তে থাকে। উড়তেই থাকে। মুম্বইয়ের অসহ্য গরমের কথা ভেবে বেবাক অবাক হই—এই মুহূর্তে। ক’দিন পরই তো সেই মুম্বইয়ে ঘরে ফেরা। আবার সেই সংসারের জাঁতাকল, রান্নাবান্না, লেখালিখি, বিউটি পার্লার, শপিং মল, হোয়াটস অ্যাপ, পেসবুক, বাজারহাট—রুটিন চেনা বারামাস্যা। হিমালয়ের কাজে জমা রেখে দিই ভাল থাকার কিছু আজন্ম ক্ষণ।