দর্শনার্থী: খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার অজমেরে। ছবি: পিটিআই
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে যখন তিস্তার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন, তখন প্রায় একই সময়ে দ্বিপাক্ষিক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে তিস্তা চুক্তির দ্রুত রূপায়ণে রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের কথা বলছে কেন্দ্র। মমতার বিকল্প প্রস্তাবের কোনও উল্লেখই রাখা হয়নি এই যৌথ বিবৃতিতে। বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর তোর্সা প্রস্তাবকে গ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছে না দিল্লি।
কাল রাতে মমতা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কেবল মাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, হায়দরাবাদ হাউসের মধ্যাহ্নভোজেও তিনি ভারতীয় নেতৃত্বকে তাঁর বিকল্প প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সন্ধ্যায় ভারত যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে সেই প্রস্তাবের উল্লেখটুকুও নেই। বরং বলা রয়েছে উল্টো কথা। যৌথ বিবৃতির নথির ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে, ‘২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে দুই সরকারের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সই করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করেছেন। মোদী জানিয়েছেন, ওই চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার সংশ্লিষ্ট মহলগুলির সঙ্গে কথা বলছেন।’ শুধু তাই নয়, ফেনি, মানু, ধরলা-সহ ৭টি নদীর জলবণ্টন নিয়ে চুক্তি সইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। তোর্সার নামই নেই সে তালিকায়।
আরও পড়ুন: গো-রক্ষার নামে তাণ্ডবের নিন্দা করলেন মোহন ভাগবতও
মুখ্যমন্ত্রী তিস্তার বদলে তোর্সার জলের প্রস্তাব দেওয়ার পর এখনও সরকারি ভাবে মুখ খোলেননি কেন্দ্রীয় কর্তারা। খোলার কথাও নয়। হাসিনার সফর এখনও চলছে। তবে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছে না কেন্দ্র। তার কারণ, জলের অভাবে বাংলাদেশে তিস্তা অববাহিকা শুকিয়ে জীবন-জীবিকায় বিপর্যয় নামার বিষয়টি তো রয়েছেই। নয়াদিল্লি জানে, তিস্তা নিছক একটি নদীর নাম নয়। বাংলাদেশের মানুষের আবেগের নাম। ২০১৮-র শেষে নির্বাচনে যাওয়ার আগে মুজিব কন্যার প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে চলেছে এই তিস্তা চুক্তি। তিনি তা সই করে ভোটে যেতে পারলে সরকারে ফিরতে সুবিধা হবে বলে মনে করে আওয়ামি লিগ। অন্য দিকে আগ্নেয় প্রতিবেশী বলয়ের মধ্যে থাকা ভারতের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা-সমঝোতা জরুরি। মোদীর কথায়, ‘‘হাসিনা যে ভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করছেন, তাঁর জন্য আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রয়েছে।’’ কূটনীতিকরা বলছেন, এমন নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলাটা দিল্লির লক্ষ্য নয়। বরং প্রতিবেশী দেশের এই নেতৃত্বকে সর্বতো ভাবে সহযোগিতা করাই নীতি হওয়া উচিত।
শেখ হাসিনাকে পাশে নিয়ে কাল প্রধানমন্ত্রী কার্যত তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের সময়সীমাই ঘোষণা করে দিয়েছেন। মোদী বলেছেন, ‘‘আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আমার এবং আপনার সরকারই তিস্তা চুক্তির দ্রুত সমাধান করতে পারবে।’’ তাঁর এই মন্তব্যের পর জল্পনা— আগামী বছরের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আর প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মঞ্চে তাঁর পাশেই ছিলেন।