জেল থেকে মুক্তির প্রায় এক বছর পরে ফের ‘নিখোঁজ’ হলেন মাওবাদী পলিটব্যুরোর সদস্য প্রমোদ মিশ্র। ন’বছর জেলে থাকার পর ছাড়া পেয়ে নিজের গ্রামেই আর্য়ুবেদ চিকিৎসালয় খুলেছিলেন বছর ষাটের প্রমোদ। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা নিয়মিত তাঁর উপরে নজর রাখলেও মাস দুই আগে তাঁদের চেখে ধুলো আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান এই মাওবাদী ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’। নতুন করে তিনি মাওবাদীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বলে সন্দেহ পুলিশের।
বিহারের অরঙ্গাবাদের জেলার কসমা থানার ভবন থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে তৈরি করেছিলেন ‘পর্ণকুটি প্রমোদাশ্রম’। সেখানেই আর্য়ুবেদ চিকিৎসক হিসেবে বিনি পয়সায় পরিষেবা দিতেন। মাওবাদী সংগঠনের সদস্যদের সেখানে আনাগোনা ছিল বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আশির দশকে কানাই চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে বিহারে মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টারের (এমসিসি) নেতৃত্বে এসে সংগঠন গড়ে তোলেন করেন প্রমোদ মিশ্র এবং সঞ্জয় দুশাধ। প্রমোদের সাংগঠনিক দক্ষতাতেই গোটা বিহার জুড়ে ৫০০ ‘হোলটাইমার’ এবং ১০ হাজার সদস্য তৈরি হয় এমসিসি-র। বেশ কয়েকটি এলাকায় উচ্চ বর্ণের নরসংহারের মামলায় উঠে আসে প্রমোদের নাম। রাজ্য জুড়ে অন্তত প্রায় ছ’টি গণসংগঠন তৈরি করেছিলেন মিশ্র। ১৯৯৩ সালে তাঁর কথাতেই বেশ কয়েকটি নকশাল সংগঠন একত্রিত হয়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয়।
২০০৩ সালে পঞ্জাবের নকশাল নেতা শামশের সিংহ শেরি এবং বাংলার নকশাল নেতা প্রশান্ত বসুদের তথা কিষাণদার সংগঠনকে এমসিসি-তে যুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা ছিল প্রমোদের। ২০০৪ সালে লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতির সংগঠন ‘পিপলস ওয়ার’-এর সঙ্গে মিলে এমসিসি তৈরি করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)। গোটা পরিকল্পনাতে অন্যতম ভুমিকা ছিল প্রমোদের। মাওবাদীদের ১৪ সদস্যের পলিটব্যুরোর অন্যতম সদস্য হন তিনি। তার পরে দিল্লি, পঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ডে সংগঠনের দায়িত্ব পান। বনবিহারী, অগ্নি, বিবিজি নামেও ডাকা হত তাঁকে।
২০০৮ সালে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত সংগঠনে গণপতির পরে তিনিই ছিলেন দু’নম্বর নেতা। ২০০৬ সালে আমেরিকার সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ে মার্কিন সরকারের তালিকাতেও নাম ছিল তাঁর। নেপালের মাওবাদী আন্দোলনে প্রমোদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পটনায় নেপালের মাওবাদী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে তাঁর ছেলে গ্রেফতার হলেও তিনি পালিয়ে যান। তাঁকে গ্রেফতার করতে ছেলেকে ‘অপহরণের গল্প’ তৈরি করেছিল পুলিশ। কিন্তু ২০১৭ সালের অগস্ট পর্যন্ত কোনও মামলাতেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই আদালতের নির্দেশে ছাড়া পান প্রমোদ। নিজের বেশভূষা পাল্টে নেন তিনি। সাধুদের মতো সাদা চুল এবং দাড়ি বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় তাঁকে লোকে ‘প্রমোদ সাধু’ বলে ডাকতে শুরু করে। সেই প্রমোদ মিশ্র নিখোঁজ হওয়ায় চিন্তিত পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।