নিকোলাস বার্নসের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাহুল গাঁধী (বাঁ দিকে)। ছবি: টুইটারের ভিডিয়ো থেকে নেওয়া
মার্কিন মুলুকে সাদা-কালোর সঙ্ঘাত। ভারতে হিন্দু-মুসলিম। দুই দেশের জাতি-বিভেদকে এক সূত্রে বেঁধে মোদী সরকারকে বিঁধতে অভিনব পন্থা নিলেন রাহুল গাঁধী। প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক নিকোলাস বার্নসের সঙ্গে আলাপচারিতায় কংগ্রেস সাংসদ বললেন, দু’দেশেই কমেছে ‘সহিষ্ণুতা’। ভারত-মার্কিন সম্পর্কে আগেকার ‘উন্মুক্ত ডিএনএ’র শৃঙ্খলটাই ভেঙে গিয়েছে। নাম না করে বিজেপির ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’কে খোঁচাও দিয়েছেন রাহুল।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছেন রাহুল গাঁধী। এর আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহামারি বিশেষজ্ঞ জোহান গাইসিকি এবং শিল্পপতি রাজীব বজাজের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলাপচারিতা সেরেছেন। শুক্রবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন নিকোলাস বার্নস। নিকোলাস বর্তমানে হার্ভার্ডের ‘জন এফ কেনেডি স্কুল’-এর প্র্যাকটিস অব ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল পলিটিকস বিভাগে অধ্যাপনা করেন। কিন্তু তার চেয়েও উল্লেখযোগ্য, ইউপিএ জমানায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সময় ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন এই নিকোলাস বার্নস।
শুক্রবার সকালে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাহুল-নিকোলাস কথোপকথনের ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে রাহুল বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, আমাদের (ভারত-মার্কিন) সম্পর্কের রসায়ন ভাল ছিল, তার অন্যতম কারণ আমাদের সহনশীলতা। আপনি বলেছেন আপনারা শরণার্থী জাতি। আবার আমরা অত্যন্ত সহনশীল জাতি। সহনশীলতা ছিল আমাদের ডিএনএ-তে।’’
আরও পড়ুন: হতদরিদ্রের সংখ্যা দেড় গুণ ছাপিয়ে হবে ১১২ কোটি, ১০ কোটি ভারতে, বলছে গবেষণা
কিন্তু সেই সম্পর্ক এখন সংকীর্ণ ও সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে বলে মনে করেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি। তাঁর মতে, ‘‘আমরা নতুন নতুন আইডিয়া গ্রহণ করতাম। আমরা উন্মুক্ত ছিলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেই উন্মুক্ত ডিএনএ কেমন যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এখন আর সেই সহিষ্ণুতা দেখি না, যেটা আগে দেখতাম। আমেরিকাতেও না, ভারতেও না।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, জর্জ ফ্লয়েড কাণ্ডের পর মার্কিন মুলুক জুড়ে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে, সেই দিকেই দিকনির্দেশ করেছেন রাহুল। আবার ভারতের অসহিষ্ণুতা বলতে বিজেপি তথা মোদী সরকারকে খোঁচা দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ।
আরও পড়ুন: ‘মানচিত্র বদলাব না’, ভারতের আপত্তি উড়িয়ে ফের জানিয়ে দিল নেপাল
বিজেপির বিরুদ্ধে উগ্র জাতীয়তাবাদের অভিযোগ নতুন নয়। সেই দিকে ইঙ্গিত করে রাহুল মার্কিন কূটনীতিককে রাহুল বলেছেন, ‘‘আমেরিকায় আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে এবং ভারতে হিন্দু-মুসলিম-শিখদের মধ্যে যাঁরা বিভাজন করেন, তাঁরা আসলে নিজের দেশকেই দুর্বল করছেন। অথচ তাঁরাই আবার জাতীয়তাবাদী বলে নিজেদের দাবি করেন।’’ বর্তমানে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কের পরিসর সংকীর্ণ হয়ে এসেছে বলেও মনে করেন রাহুল। নিকোলাসকে তিনি বলেন, ‘‘একটা সময় যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে বহু ক্ষেত্রে প্রসারিত ছিল, সেটা এখন কেন্দ্রীভূত হয়েছে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে।
তাহলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক কোন দিকে যাচ্ছে? এ বার নিকোলাসকেই প্রশ্ন করেন রাহুল। ও প্রান্তের জবাবে উঠে আসে চিনের আগ্রাসনের কথা। নিকোলাস বলেন, ‘‘আমি মনে করি, ভারত ও আমেরিকা বাকি বিশ্বকে একজোট করতে পারে। সওয়াল করতে পারে আমজনতার স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং জনগণের শাসনের পক্ষে। চিনের সঙ্গে বিবাদ নয়, বরং আমাদের দ্বন্দ্ব হচ্ছে ধারণার।’’