ভোট ছিল ক্ষমতা দখলের, মর্যাদা রক্ষার, রাজনৈতিক সমীকরণের। কিন্তু আগামী কাল অসম-অরুণাচলের তিন কেন্দ্রে উপনির্বাচনে সব কিছুকে পিছনে ঠেলেছে নোট-সঙ্কট।
আগামী কাল লখিমপুর লোকসভা কেন্দ্র ও বৈঠালাংশু বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। উপনির্বাচন রয়েছে অরুণাচলপ্রদেশের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুলের আসন হায়ুলিয়াংয়েও। রাজনৈতিক শিবিরের অনুমান, তিনটি কেন্দ্রেই বিজেপির জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট বাতিল করায় আম জনতার যেমন হাহাকার অবস্থা, তেমনই থমকেছে শেষপর্বের প্রচার। ভোট প্রচারে টাকার হয়রানিকেই বিজেপির বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে কংগ্রেস।
লখিমপুরে বিজেপি প্রার্থী বিধায়ক প্রদান বরুয়া। তাঁর সঙ্গে লড়াই কংগ্রেসের হেমহরি প্রসন্ন পেগু, সিপিএমের অমিয়কুমার সন্দিকৈ, এসইউসিআইয়ের হেমকান্ত মিরি এবং বিজেপি থেকে টিকিট না পেয়ে দলত্যাগ করা নির্দল প্রার্থী দিলীপ মরাণ। ধারে ও ভারে প্রদানবাবুই এগিয়ে। তাঁর হয়ে প্রচার চালিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা-সহ তাবড় নেতারা। সর্বানন্দ নিজে লখিমপুরের সাংসদ ছিলেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় আসনটি খালি হয়েছে। প্রসন্ন পেগুর হয়ে প্রচারে এসেছেন এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা, বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া ও প্রাক্তন কংগ্রেসী মন্ত্রীরা।
বৈঠালাংশুতে কংগ্রেস বিধায়ক মানসিংহ রংপি দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় উপনির্বাচন হচ্ছে। সেখানে এ বারও মানসিংহের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি। কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন রূপনসিংহ রংহাং। কিন্তু ভোটের হিসেব সরিয়ে এখন লখিমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা আটটি বিধানসভা কেন্দ্র ও বৈঠালাংশুতে টাকার হাহাকার। সব দলের প্রচারেই ছত্রভঙ্গ নগদের অভাবে। জনসভা এবং অন্য ভোটকেন্দ্রীক কাজ সবই নগদে হয়। কিন্তু কর্মীদের দেওয়ার মতো নগদ টাকায় টান পড়েছে সব দলে। অন্য সময় ভোট কিনতে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এ বার ছড়ানোর মতো খুচরো টাকাই নেই। মোটা টাকা লেনদেনেরও প্রশ্ন ওঠে না।
অরুণাচলের হায়ুলিয়াংয়ের সহানুভূতি ভোটের উপরই ভরসা রাখছেন বিজেপি-পিপিএ প্রার্থী তথা প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুলের তৃতীয় স্ত্রী ডাসাংলু পুল। তাঁর বিরুদ্ধে মহিলা প্রার্থী ইয়োম্পি ক্রিকে দাঁড় করিয়েছে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু-সহ তাবড় নেতারা ডাসাংলুর জয় হচ্ছে বলে দাবি করলেও, টানা ২৫ বছর পুল পরিবারের হাতে থাকা হায়ুলিয়াংয়ের মানুষ পরিবর্তন চাইতে পারেন বলে দলে আশঙ্কা।
অরুণাচলের যে কোনও ভোটেও টাকা ছড়ানো আম-ঘটনা। তাতে বাধ সেধেছে বিমুদ্রাকরণ নীতি। অসম ও অরুণাচলে গ্রামের মানুষ টাকার অভাবে ধুঁকছেন। বন্ধ কেনাবেচা। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিকে জনসভায় মানুষের দেখা মেলেনি। সকলেই ব্যস্ত ছিলেন টাকা জোগাড়ে।
বিজেপির এই হঠকারি নীতি ও মানুষের সমস্যাকেই প্রচারপর্বে কাজে লাগিয়েছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, মোদী সরকার আগেভাগে ঘনিষ্ঠ পূঁজিপতিদের সতর্ক করে পুরনো টাকা বাতিল করেছে। সমস্যায় পড়েছেন আম জনতা। গ্রামে ব্যাঙ্কের শাখা বা এটিএম নেই। তা মাথায় রাখেনি ধনীদের দল বিজেপি। কংগ্রেসের দাবি, বিজেপির আসল চেহারা সামনে আসায় এবং মানুষ এত সমস্যায় পড়ায় ভোটে তারাই এগিয়ে। উল্টো দিকে বিজেপির দাবি সব সভায় গিয়ে কালো টাকার বিরুদ্ধে মানুষের মত নেওয়া হয়েছে। সমস্যার কথা মেনে নিয়েও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। তার প্রতিফলনই আগামী কালের ভোটে পড়বে।
জেলে রাকেশ। অসম লোকসেবা আয়োগের অধ্যক্ষ রাকেশ পালকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠাল আদালত। পুলিশ হেফাজতের পরে পালকে আজ আদালতে হাজির করা হয়েছিল। আদালত তাঁকে ৩ ডিসেম্বর ফের হাজিরার নির্দেশ দেয়। আয়োগের সদস্য সামেদুর রহমানের হাতিগাঁওয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। উদ্ধার হয় নগদ সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা।