বাংলায় সারদা, রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারি নিয়ে হইচই হচ্ছে। কিন্তু গুজরাতের বিজেপি জমানায় অস্কার বা পঞ্জাবে পার্ল কেলেঙ্কারি নিয়ে কেন হইচই হয় না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল। পঞ্জি প্রকল্পের রমরমা রুখতে অনিয়ন্ত্রিত সঞ্চয় প্রকল্প নিষেধাজ্ঞা বিল নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনার সময় তৃণমূলকে নিশানা করার জন্য আজ তৈরিই ছিলেন বিজেপি নেতারা। পাল্টা আক্রমণের পন্থা নেয় তৃণমূল।
সারদা, রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারিতে নতুন করে সিবিআই-ইডির তৎপরতা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকেও ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘গুজরাতে অস্কার চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে ১.২ লক্ষ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ওড়িশা, মহারাষ্ট্রেও এই কেলেঙ্কারি হয়েছে। পার্ল গোষ্ঠীর ৪৯ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে ৫.৫ কোটি মানুষ সঞ্চয় হারিয়েছেন।’’
বিজেপির শীর্ষ নেতারা এর সঙ্গে জড়িত বলে ইঙ্গিত করে তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘সাংবিধানিক পদে থাকাকালীন এক জন পার্ল গোষ্ঠীর আইনি উপদেষ্টা ছিলেন। বাংলায় আশির দশকে সঞ্চয়িতা কেলেঙ্কারি হয়েছে। গত পাঁচ-ছয় বছরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কমিশন তৈরি করে মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’’
তৃণমূলের নেতারা অবশ্য এক বারও সারদা বা রোজ ভ্যালির নাম করেননি। পরে প্রশ্ন করা হলে ডেরেকের জবাব, ‘‘যদি সবই বলে দিই, বিজেপির নেতারা কী বলবেন! তবে সারদা নিয়েও আমাদের অনেক কিছু বলার রয়েছে। খুব শীঘ্রই তা তুলে ধরা হবে।’’ সমন নিয়ে ডেরেক বলেন, ‘‘জাগো বাংলা-র প্রকাশক হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে সিবিআইয়ের থেকে চিঠি পেয়েছিলাম। সংসদের অধিবেশনের জন্য যেতে পারিনি। পরে যে দিন যাওয়ার কথা, তার আগের দিন জানানো হয়, আসতে হবে না। তথ্যের অধিকার আইনে সংশোধনের বিরোধিতা করার পর দেখছি, আমাকে আবার ডাকা হয়েছে।’’
তৃণমূলের অনেক নেতা, সাংসদ ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা সারদা ও রোজ ভ্যালির মতো সংস্থার হয়ে প্রচার করেছিলেন। আজ রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বিল পাশের সময় স্পষ্ট করে দেন, বেআইনি লগ্নি সংস্থার হয়ে বিজ্ঞাপন বা প্রচার করলে নতুন আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। এর পরেই তৃণমূল নেতাদের ইঙ্গিত করে অনুরাগ বলেন, ‘‘বড় বড় ব্যক্তি জড়িত থাকলে সাধারণ মানুষ ভরসা করেন। দুর্ভাগ্যজনক হল, রাজ্যসভা, লোকসভা ও বাইরের অনেক নেতা এই সব প্রকল্পে জড়িত ছিলেন।’’
তবে সকলের সমর্থনে বিল পাশ করানোর তাগিদে এর থেকে বেশি আক্রমণে যাননি অনুরাগ। বিজেপি সাংসদেরা বারবার বাংলার কথা বললেও, অনুরাগ বলেন, ‘‘কোন রাজ্যে এ সব কারবার চলেছে, তার মধ্যে যাব না। এটা দেশের সমস্যা। আইনে ফাঁক ছিল। তা-ই হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে গরিব মানুষের টাকা মার না-যায়, তার জন্যই আইন।’’ এই বিল নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে এবং যাবতীয় ফাঁকফোকর বন্ধ করা গিয়েছে। আজ তৃণমূল ও অন্যান্য দলও এই বিলে সমর্থন জানিয়েছে।