তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভার ১২ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে সংসদ চত্বরে গাঁধী মূর্তির সামনে বিরোধী সাংসদরা ধর্না দেবেন, এমনটাই স্থির হয়েছিল। কিন্তু বুধবার দেখা গেল, কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলের সঙ্গে কৌশলগত ভাবে অবস্থান বদলে গেল তৃণমূল কংগ্রেসের। বার দুয়েক রাজ্যসভা মুলতুবি হওয়ার পরে দুপুর দুটোয় যখন ফের অধিবেশন শুরু হয়, তখন তা বয়কট করে ধর্নাস্থলে চলে যান কংগ্রেস, এনসিপি, আরজেডি, শিবসেনা, ডিএমকে-র সাংসদরা। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না তৃণমূলের সংসদীয় নেতৃত্ব। অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছ’জন তৃণমূল সাংসদ ওয়েলে গিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
স্বাভাবিক ভাবেই অন্য বিরোধী কণ্ঠস্বর না থাকায় কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে হট্টগোল। সেই সুযোগে দু’টি বিল পাশ করিয়ে নেয় সরকার।
কংগ্রেসের বক্তব্য, একমাত্র তৃণমূল ছাড়া বাকিরা সবাই রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের ঘরে কৌশল নিয়ে বৈঠক করছেন নিয়মিত। তাঁদের মধ্যে সমন্বয় রয়েছে। সেই অনুযায়ীই স্থির হয়, আজ প্রাথমিক ভাবে সংসদে হইচই করে মুলতুবি করানোর পর, রাজ্যসভা বয়কট করা হবে। তার পর ১২ জন শাস্তিপ্রাপ্ত সাংসদের পাশে গিয়ে স্লোগান দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী একত্রে পদক্ষেপ করেছেন সবাই। তৃণমূল যে হেতু ঘোষিত ভাবে সমন্বয় করছে না, ফলে তাদের আলাদা করে জানানোর প্রশ্ন ওঠেনি।
অন্য দিকে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই নিজেরা ঠিক করে নিয়েছে রাজ্যসভা বয়কট করবে। অথচ সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্নার এই কর্মসূচি আদতে তৃণমূল কংগ্রেসেরই তৈরি করা। আমরা ডিএমকে, শিবসেনার মাধ্যমে কংগ্রেসের কাছে এই কৌশলের বিষয়ে তাদের জানিয়েছিলাম। এখন তারাই গোটা বিষয়টি হাইজ্যাক করার চেষ্টা করছে।”
পরে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ফাঁকা মাঠ ছাড়ব না। অন্যরা বয়কট করলেও আমাদের ছ’জন সাংসদ পুরো অধিবেশেন ওয়েলে দাঁড়িয়ে সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দিয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ একই সঙ্গে সংসদের বাইরে এবং ভিতরে আমাদের আন্দোলন চলেছে।”
তবে গাঁধীমূর্তির সামনে ধর্নাস্থলে কিন্তু বিরোধী ঐক্যের ছবিটাই আজ ফুটে উঠেছে। যে হেতু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদরা খোলা আকাশের তলায় টানা অবস্থানে বসেছেন, এক এক দিন এক এক জন সাংসদ খাবার নিয়ে আসছেন। গত কাল ডিএমকে-র তিরুচি শিবা নিয়ে এসেছিলেন দক্ষিণ ভারতীয় খাবার। বুধবার এনসিপি-র সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে এনেছেন মহারাষ্ট্রের খাদ্য। দীর্ঘ সময় ধর্নাস্থলে থাকতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ পি চিদম্বরমকে। এসপি সাংসদ জয়া বচ্চন এসেছিলেন লাল টুপি পরে। প্রসঙ্গত, গত কালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোরক্ষপুরে একটি জনসভায় এসপি-র নেতাদের লাল টুপিকে ব্যঙ্গ করে ‘লাল সতর্কতা’ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। তারই প্রতিবাদে আজ ধর্নামঞ্চে জয়াকে দেখা গিয়েছে লাল টুপি পরে।
কংগ্রেস সাংসদ আনন্দ শর্মা আজ ধর্নাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, “সরকার প্রথম দিন থেকেই সংঘাতের রাস্তায় চলেছে। তারা বিরোধীদের এবং গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করছে। এমন একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যেন বিরোধীদের জন্যই সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চলতে পারছে না। কিন্তু বিষয়টা আদৌ তেমন নয়।” তাঁর কথায়, স্বাধীন ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে এমন কখনও হয়নি যে আগের অধিবেশনের শাস্তি পরের অধিবেশনে টেনে এনে সাজা দেওয়া হচ্ছে। তাও শাস্তিপ্রাপ্ত সাংসদদের কথা না শুনেই।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে চলতি শীতকালীন অধিবেশনে বার বার অভিযোগ আনা হয়েছে, সংসদের টেলিভিশন চ্যানেলে শুধুমাত্র চেয়ার এবং বিজেপি সাংসদদের দেখানো হচ্ছে। বাকিদের দিকে ক্যামেরা ফেরানো হচ্ছে না। আজ ডেরেক টুইট করে বলেন, “আমরা এত দিন ধরে বলে আসছি, সংসদীয় টেলিভিশনকে সেন্সর করা হচ্ছে, তা আজ খোদ রাজ্যসভার মাননীয় চেয়ারম্যানই সেই কথা বলেছেন! ওয়েলে দাঁড়ানো বিরোধী সাংসদদের তিনি বলেছেন, আপনাদের কথা কেউ শুনছে না। আপনাদের কেউ দেখছে না। কেন শক্তি ক্ষয় করছেন?”