ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেও ফের উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি তুলেছেন জন বার্লা। তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে, শুক্রবার এ নিয়ে প্রতিবাদে মুখর হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই বাংলা ভাগের আওয়াজ তুলেছেন মন্ত্রী-সাংসদেরা। যে ‘যুক্তিতে’ বার্লা-সহ বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের বঙ্গভাগ সংক্রান্ত ওই দাবি, তাকে নস্যাৎ করতে ‘ইতিহাসের দলিলও’ এ দিন সামনে এনেছেন তাঁরা। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতা দিলীপ ঘোষ অবশ্য ইতিমধ্যেই একাধিক বার বলেছেন, আদৌ বাংলা ভাগের সমর্থক নয় বিজেপি।
দিলীপ এ কথা বললেও, রাজ্যের শাসক দলের মতে, বিষয়টিকে লঘু করে দেখা ঠিক নয়। কারণ, বিজেপির এটি পুরনো খেলা। কখনও গোর্খাল্যান্ড, তো কখনও গ্রেটার কোচবিহারের দাবি হাওয়ায় ভাসিয়ে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী অংশকে সুড়সুড়ি দেওয়ার কৌশলে ২০০৯ থেকে দার্জিলিংয়ের লোকসভা আসন ধরে রেখেছে তারা। শুধু বার্লা নন, এই ‘খেলায়’ নতুন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকও শামিল বলে অভিযোগ তৃণমূলের। সম্প্রতি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের দার্জিলিংয়ে গিয়ে বার্লা এবং নিশীথের সঙ্গে দেখা করাকেও ওই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছে তারা। সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বাত্মক প্রতিবাদের।
প্রতিমন্ত্রী বার্লা সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গকে স্বাধীন রাজ্য করার দাবি প্রায় একশো বছরের পুরনো। এটি স্থানীয় জনগণের দীর্ঘ দিনের দাবি। এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলব। জনতার দাবি দাবিয়ে রাখা যায় না।” তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে চোখ রাখলেই স্পষ্ট যে, বার্লা নির্জলা মিথ্যা বলছেন।
তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায়ের কথায়, রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরির পরে ১৯৫৬ সালে যখন আইন এনে ভাষার ভিত্তিতে নতুন রাজ্য তৈরির কাজ শুরু হয়, তখন থেকে এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্যের দাবি ওঠেনি।
তাঁর কথায়, মালদহ, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও দার্জিলিং— এই নিয়ে ছিল উত্তরবঙ্গ। ভৌগলিক ও প্রশাসনিক কারণে দাবি ছিল, দিনাজপুরকে দু’ভাগ করার। দাবি ছিল জলপাইগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা করা এবং সাবেক দার্জিলিং থেকে কার্শিয়াংকে পৃথক জেলা করারও। দিনাজপুরের দু’ভাগ বাম আমলেই হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ক্ষমতায় এলে আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা করবেন। কারণ, তার আলাদা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। রেশম রুট সেখান দিয়ে গিয়েছে। সুখেন্দুর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা আলিপুরদুয়ার এবং কার্শিয়াংকে দু’টি আলাদা জেলা করে সেখানকার মানুষের চাহিদা মিটিয়েছেন।”
তৃণমূল নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই জেলাগুলির কোনওটি থেকেই উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবি ওঠেনি (এমনকি জেলা পুনর্বিন্যাসের সময়েও)। কোচবিহারের মহারাজা জগদীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর এবং ভারতের তৎকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের পরামর্শদাতা ভি পি মেননের মধ্যে হওয়া ‘কোচবিহার-মার্জার’ চুক্তি তুলে ধরেও তৃণমূল দেখাচ্ছে যে, সেখানকার সমস্ত প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা ওই অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, সেই সরকার যে ভাবে ঠিক মনে করবে, সে ভাবেই তারা ওই প্রশাসনিক ক্ষমতা নির্বাহ করবে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ১৯৪৯ সালের ওই চুক্তিতে কোথাও নতুন রাজ্য তৈরির কথা ছিল না।
একই সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, বিজেপি বাংলায় ভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার পরে এখন তাকে ভাগ করার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি, বাংলাকে টুকরো করতে পারলে বিভিন্ন ভাবে অস্থিরতা তৈরি করে সাম্প্রদায়িকতা, হিন্দুত্ব, আধিপত্য কায়েম করতে সুবিধা হবে বিজেপির। তৃণমূলের নেতাদের কটাক্ষ, উত্তরপ্রদেশকে চারটি আলাদা রাজ্যে ভাগ করার দাবি দীর্ঘ দিনের। গুজরাতের সৌরাষ্ট্র হাজার বছরের প্রাচীন ‘রাজ্য’। তাকেও পৃথক রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করার ঐতিহাসিক দাবি রয়েছে। গোয়ায় কোঙ্কন রাজ্যের প্রস্তাব আছে। অসমে বোড়ো উপজাতিদের দাবি রয়েছে বোড়োল্যান্ডের জন্য। এগুলি নিয়ে বিজেপি নীরব কেন?