এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। —ফাইল চিত্র।
আগামী সপ্তাহে পটনায় বিরোধী দলগুলির বৈঠকের আগে এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার আওয়াজ তুলেছেন ‘ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি’র সূত্র দিয়ে। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিন্ন কৌশল হওয়া প্রয়োজন। পটনা বৈঠকে এই মর্মে প্রস্তাবও দেবেন তিনি।
পওয়ারের এমন প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রথমত, এই ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচির ধারণাটি সম্পূর্ণ ভাবে সিপিএম নেতৃত্বের মস্তিষ্কপ্রসূত। এই ধারণাটিতে সীতারাম ইয়েচুরি এমনকি রাহুল গান্ধী স্বচ্ছন্দ হতে পারেন, কিন্তু তৃণমূল নয়। আর এখনই এত দূর এগিয়ে ভাবার সময়ও আসেনি। দলের বক্তব্য, এমনিতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী বাছাইয়ে পওয়ার শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যাওয়ায় তাঁর প্রতি ‘অ্যালার্জি’ তৈরি হয়েছে তৃণমূলের। তৃণমূল নেতৃত্বের প্রশ্ন, তা ছাড়া যাঁর নিজের ঝুলিতে সংখ্যা নেই, তাঁর কথার কতটাই বা গুরুত্ব রয়েছে?
গোড়া থেকেই তৃণমূলের দাবি, জোটের প্রশ্নে এসপি, বিআরএস, আপের মতো দলগুলি কংগ্রেস নয়, তাদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলতেই বেশি আগ্রহী। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিআরএস নেতা তথা তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নভেম্বরে তাঁর রাজ্যে ভোটের বাধ্যবাধকতার জন্য তিনি পটনা বৈঠকে আসবেন না। তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি লড়াই বিআরএসের। চন্দ্রশেখর রাও মমতার দলকে জানিয়েছেন, তিনি সঙ্গে রয়েছেন, এমনকি সেখানকার আঞ্চলিক দলগুলিকেও বিজেপি বিরোধিতার সুতোয় গাঁথার চেষ্টা করছেন। কিন্তু রাজ্যে ভোটের ঠিক আগে কংগ্রেসের সঙ্গে এক টেবিলে বসা তাঁদের পক্ষে রাজনৈতিক হারাকিরির সমান হবে।
এসপি-র নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব আজ এক সাক্ষাৎকারে মোদীকে কুর্শি থেকে সরানোর জন্য পিছড়ে বর্গ-দলিত-সংখ্যালঘু, এই তিন সম্প্রদায়কে এক করার ডাক দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যদি বড় জাতীয় দলগুলি (কংগ্রেস) আমাদের পাশে থাকে, তা হলে উত্তরপ্রদেশে ৮০টির মধ্যে ৮০টি আসনেই বিজেপি হারবে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি বলেছেন, ‘বড় হৃদয়’ নিয়ে জোট করার জন্য প্রস্তুত হোক সব বিরোধী দল। নিজেদের উদাহরণ তুলে মুলায়ম-পুত্রের দাবি, বারবার জোট করেছে এসপি। কখনও কংগ্রেস, কখনও আঞ্চলিক দল, এমনকি বিএসপি-র সঙ্গেও। কিন্তু কখনও আসন নিয়ে তিক্ততা বা যুদ্ধংদেহি পরিবেশ তৈরি করেনি।
সূত্রের খবর, পটনা বৈঠকে মূলত দু’টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হবে। প্রথমত, রাজ্যে যুযুধান হলেও জাতীয় স্তরে বিজেপিকে হারানোর প্রশ্নে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে সব বিরোধী দলকে। দুই, যত বেশি সংখ্যক আসনে বিরোধী জোটের একজন মাত্র প্রার্থী দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। এক শীর্ষ বিরোধী নেতার মতে, এই বাছাইটি করতে হবে ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে। এটাই বাস্তব, কেন্দ্রে জোটের খাতিরে তৃণমূল একটি আসনও পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে ছেড়ে দেবে না। আবার একই ভাবে দিল্লির ৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে যদি আপ-কে কংগ্রেসের জন্য আসন ছাড়তে বলা হয়, তবে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের পক্ষে তা মানা সম্ভব নয়। আর এখানেই ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচির তত্ত্বটি খারিজ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে তৃণমূল।
সূত্রে জানা গেছে, পটনাতেই পরবর্তী বিরোধী বৈঠকের তারিখ ও স্থান স্থির হবে। সম্ভাবনা রয়েছে, পরের বৈঠকটি চেন্নাইয়ে হওয়ার।