সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে হওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ থেকে নিজেদের দূরে রাখছে তৃণমূল। এ দিন ১২ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে সব দল একসঙ্গে ধর্না দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা কারও নেতৃত্বাধীন ধর্না ছিল না। আজ লোকসভায় নাগাল্যান্ড কাণ্ডের প্রতিবাদে কংগ্রেস, বাম, এসপি, এনসি-র মতো দলের সদস্যেরা প্রতীকী ভাবে কক্ষত্যাগ করেন। কিন্তু বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র তৃণমূল কক্ষত্যাগ করেনি। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “অন্য দলের কর্মসূচিতে থাকলেও, আমাদের কক্ষত্যাগ করার কোনও দলীয় পরিকল্পনা ছিল না। বরং আমরা নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহকে প্রশ্ন করেছি, আপনারা নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টিতে আলোকপাত করুন। নাগাল্যান্ড রাজ্য যখন এগিয়ে এসেছে, কেন কেন্দ্র হাত গুটিয়ে বসে থাকবে?” সুদীপের দাবি, “আমাদের প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।”
অন্য দিকে গোয়ায় আঞ্চলিক দলকে কাছে টানার দৌড়ে আজ কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দিল তৃণমূল। অক্টোবরের শেষে যখন গোয়ায় গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন সে রাজ্যের ছোট দলগুলিকে নিয়ে টানাপড়েন চলছিল কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে। গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি তথা জিএফপি নেতা মমতার সঙ্গে দেখা করেও শেষ পর্যন্ত জোট গড়েন সনিয়ার গাঁধীর দলের সঙ্গে। তবে এ দিন কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়তে রাজি হয়েছে মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি বা এমজিপি।
এমজিপি সভাপতি দীপক ধাবলিকর সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে জানান, তাঁদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটি আগামী বছরের শুরুতে রাজ্য নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বার গোয়া নির্বাচনে এই জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বা নির্বাচনী মুখ কে হবেন, তার বিশদ বিবরণ ও নির্বাচনী পরিকল্পনা পরে জানানো হবে।
এমজিপি ২০১৭ সালের নির্বাচনে ৪০ সদস্যের গোয়া বিধানসভায় তিনটি আসন জিতেছিল। তাদের দু'জন বিধায়ক শাসক দল বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে বর্তমানে শুধুমাত্র এক জন বিধায়ক রয়েছেন। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিজেপির সঙ্গে ক্রমশ সম্পর্ক খারাপ হওয়া এই দলটির স্বাভাবিক ভাবেই গোয়ার প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর কথা ছিল। কিন্তু তা ঘটল না। দেখা যাচ্ছে, তারা তৃণমূলের সঙ্গে জোট করায় কার্যত হীনবল হচ্ছে গোয়ার বিজেপি-বিরোধী প্রধান বিরোধী শক্তি কংগ্রেস।
রাজনৈতিক শিবির বলছে, গত কয়েক মাস ধারাবাহিক ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস যে ভাবে বিরোধী রাজনীতির ঘুঁটি সাজাচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে কংগ্রেসকে রাজ্যে রাজ্যে শক্তিহীন করাটা তাদের লক্ষ্যের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে নিজেদের যুক্তি দিয়ে তৃণমূলের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা গোয়ার প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, “কংগ্রেস একটি রাজ্যে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারবে না। তাদের বিধায়কেরা দলে দলে বিজেপিতে চলে যাবেন। আর তার পরেও কংগ্রেসের দাবি, আমরা কেউ গিয়ে সেই রাজ্যে নিজেদের সংগঠন বাড়াব না। অনন্ত কাল বসে থাকব কখন তারা হৃত জমি ফিরে পাবে! এটা তো রাজনীতিতে হতে পারে না।”