আবার কর্নাটক রাজনীতিতে টিপু সুলতানকে ঘিরে বিতর্ক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
হিজাবের পরে এ বার টিপু সুলতান। বিধানসভা ভোটের আগে কর্নাটক রাজনীতিতে মেরুকরণের কেন্দ্রে এ বার অষ্টাদশ শতকের মহীশূরের (বর্তমান মাইসুরু) সুলতান। বুধবার কর্নাটক বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ নলিনকুমার কটীল বলেছিলেন, ‘‘কর্নাটকের পবিত্র মাটিতে টিপু সুলতানের অনুগামীদের বেঁচে থাকাই উচিত নয়!’’
বৃহস্পতিবার নলিনের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। সংবাদ সংস্থা এনএনআই-কে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় নলিনকে উদ্দেশ করে ওয়েইসি বলেন, ‘‘আমি টিপু সুলতানের নাম নিলাম। দেখি তুমি আমার কী করতে পারো!’’ পাশাপাশি, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটিয়ে অশান্তির চেষ্টার অভিযোগে নলিনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার জন্য কেন্দ্র এবং কর্নাটকের বিজেপি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন মিম প্রধান।
প্রসঙ্গত, বুধবার কর্নাটকের কোপ্পল জেলার ইয়েলাবুর্গা শহরে বুধবার বিজেপির একটি কর্মসূচিতে বক্তৃতায় নলিন আরও বলেন, ‘‘আমরা ভগবান রাম, ভগবান হনুমানের ভক্ত। আমরা ভগবান হনুমানের সামনে প্রার্থনা করি, প্রণাম জানাই। আমরা টিপু সুলতানের বংশধর নই। আসুন টিপুর বংশধরদের তাঁদের দেশে ফেরত পাঠাই!’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পরেই নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে কন্নড় রাজনীতিতে। কংগ্রেস নলিনের মন্তব্যের নিন্দা করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের দাবি তুলেছে।
এ প্রসঙ্গে কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটাতে চাইছে বিজেপি।’’ তাঁর অভিযোগ, এর আগে হিজাব বিতর্কের ক্ষেত্রেও একই কৌশল নিয়েছিল পদ্ম-শিবির। একই অভিযোগ তুলেছেন ওয়েইসিও।
কর্নাটকের রাজনীতিতে টিপু সুলতান নামটি বরাবরই বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির হাতিয়ার। বিজেপির চোখে, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শহিদ টিপু ‘হিন্দু-হত্যাকারী’। শ্রীরঙ্গপত্তনমে টিপুর মসজিদ আদতে মন্দির ভেঙে গড়া বলেও হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগ। ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার কংগ্রেস সরকার টিপুর জন্মজয়ন্তী পালন শুরু করার পরে সেই মেরুকরণ আরও চরমে পৌঁছয়। অমিত শাহ সরাসরি ওই ঘটনাকে ‘মুসলিম তোষণ’ বলেছিলেন।
২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটের আগে টিপুর ২১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘মহীশূর’-এর প্রাক্তন শাসককে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য কুর্নিশ জানায় পাকিস্তান সরকার। বিজেপি প্রচারে নামে, ‘কংগ্রেসের নায়ককে’ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে পাকিস্তান। ঘটনাচক্রে, চলতি বছরে সে রাজ্যে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। কর্নাটকের জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ মুসলমান। ২২৪টির মধ্যে ১৯টি আসনের নির্ণায়ক মুসলিম ভোট। সেই আসনগুলি বাদ দিয়েই বিজেপি জয়ের অঙ্ক কষছে বলে নলিনের মন্তব্য শুনে মনে করছেন ভোট পণ্ডিতদের একাংশ।