প্রতীকী ছবি।
আইন ১৯৫৫ সালের। তা-ও কোনও সার্বিক নিষেধাজ্ঞা নয়। সেই আইন নিয়েই বৃহস্পতিবার বিতর্ক ছড়াল বিহার জুড়ে। বিতর্ক ছড়াল বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতীশ কুমার শপথ নেওয়ার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায়।
সেই আইন দেখিয়ে বিহারে ‘বেআইনি গো-জবাই’ এবং গো-মাংস পাচার হচ্ছে বলে একটি ট্রাককে আটক করেছে পুলিশ। বিহার পুলিশের এডিজি (সদর) এস কে সিঙ্ঘল জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় ট্রাকের চালক-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। যদিও পুলিশ যা-ই বলুক না কেন, এই ঘটনায় বিহারের আকাশে গেরুয়া-মেঘের অশনি সঙ্কেত দেখছেন বিহারের বিরোধী নেতারা। তবে এখনই এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন তাঁরা। আরও একটু দেখে নিতে চাইছেন।
নীতীশের হাত ধরে বিজেপি এ বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আরজেডি, কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, প্রতিবেশী উত্তরপ্রদেশের মতো বিহারেও উগ্র গেরুয়া রাজনীতি মাথা চাড়া দেবে। আরজেডির ‘ব্রাহ্মণ’ নেতা শিবানন্দ তিওয়ারির সতর্ক প্রতিক্রিয়া, ‘‘যদি বেআইনি কসাইখানার মাংস আটক করা হয়, তা হলে কিছু বলার নেই। কিন্তু সেটা না হলে বিষয়টি দুঃখজনক।’’ তবে এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি যে বিহারে ক্ষমতায় এসেছে, তা এই ঘটনাতেই টের পাওয়া যাচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: কংগ্রেসের চিন্তা রেখে রইল নোটা
বিহার পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিহারের ভোজপুর জেলায়, ৮৪ নম্বর জাতীয় সড়়কের ধারে শাহপুরের একটি পেট্রোল পাম্পে তেল নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিল একটি ট্রাক। সে সময়ে বৃষ্টি পড়ছিল। ট্রাক থেকে বৃষ্টির জলের সঙ্গে রক্ত গড়িয়ে পড়তেই সেটিকে ঘিরে ফেলেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। ট্রাকের চালককে জেরা করতে শুরু করেন তাঁরা। ট্রাকের চালক স্বীকার করেন, গরুর মাংস নিয়ে তিনি মুজফ্ফরপুর, ভাগলপুর হয়ে কলকাতা যাচ্ছেন। এটা জানার পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা ট্রাকটিকে আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ট্রাকের চালক এবং খালাসিকে নামিয়ে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। পরে পুলিশ এসে ট্রাকটি আটক করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সিঙ্ঘল বলেন, ‘‘ট্রাকটি ভোজপুরের দিঘীয়া এলাকা থেকে গরুর মাংস নিয়ে যাচ্ছিল।’’
সিঙ্ঘলই জানিয়েছেন, ‘দ্য বিহার প্রিজার্ভেশন অ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট অব অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট, ১৯৫৫’ অনুযায়ী তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও বিরোধী দলের নেতাদের বক্তব্য, দেশের গো-বলয়ের রাজ্যগুলির মধ্যে বিহার অন্যতম। সেখানে যাতে দুধেল গাই বা কর্মক্ষম বলদকে মারা না হয়, তা আটকাতেই ওই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। ওই আইনে গরুর মাংস কাটা এবং তা রফতানি করার উপর কোনও সাধারণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। বলা ছিল, ২৫ বছরের কমবয়সি গবাদি পশু হত্যা করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই বয়স-সীমা ১৪ বছর। জেডিইউয়ের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এর আগেও নীতীশ বিজেপিকে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। তখন এই হুজ্জতি হয়নি। কিন্তু মোদী-শাহের পরে এখন বিজেপিতে তো যোগী-যুগও চলছে!’’