তিন দাওয়াই মোদীর, চলছে মেরুকরণও

সরকারে প্রথম বার আসার পর অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনকে ‘সুশাসন দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদী সরকার। একটি ওয়েবসাইটও চালু হয়, যা এখন আর খোলা যায় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১২
Share:

লখনউয়ে হাসপাতালের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী। পিটিআই

লখনউয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদ কত পুরনো ব্যাধি ছিল?’’ (বিরতি)...

Advertisement

জনতা: ‘ভারত মাতা কি জয়!’

‘‘কিন্তু নির্বিঘ্নে তা নিরাময় হয়েছে। সকলের ধারণা চুরমার হয়ে গিয়েছে। রাম জন্মভূমি এত পুরনো মামলা...’’ (আবার বিরতি, এ বারে একটু বেশি ক্ষণ)

Advertisement

জনতা: ‘জয় শ্রী রাম... জয় শ্রী রাম!’

‘‘দলিত, শোষিতেরা নিজেদের ধর্ম বাঁচাতে, মেয়ের সম্মান বাঁচাতে এ দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সমস্যার হালও দেশের ১৩০ কোটি ভারতীয় বের করেছে।’’ আবার বিরতি, আসলে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানের সুযোগটুকু করে দেওয়া।

প্রধানমন্ত্রী এ বারে বললেন, ‘‘এই আত্মবিশ্বাসে ভরা ভারত ২০২০ সালে প্রবেশ করছে। আর এখনও যা বাকি আছে?’’ কী কী বাকি আছে, সেটি দর্শক আসনে বসে থাকা বিজেপি সমর্থকদের ভাববার অবকাশ দিলেন বেশ অনেক ক্ষণ। কেউ হয়তো ভাবলেন, এ বুঝি জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)। কেউ ভাবতে পারেন, অযোধ্যার পর কাশী-মথুরা। সবাইকে সব রকম ভাবার সুযোগ দিলেন নরেন্দ্র মোদী। তত ক্ষণে সভাঘর মাতছে ‘জয় শ্রী রাম’, ‘ভারত মাতা’র জয়ধ্বনিতে। প্রশ্ন উঠেছে, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি, বেকারত্ব, শিল্পে স্থবিরতা, আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি— এগুলো কি দেশের কোনও সমস্যাই নয়? কাশ্মীর থেকে ৩৭০ বিলোপ, রামমন্দির বা নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের যে তিন দাওয়াইয়ের কথা আজ মোদী শুনিয়েছেন, সে সবের কি কোনও সুরাহা হবে? বিরোধীরা বলছেন— সুরাহার তো প্রশ্ন নেই, সে-সব থেকে নজর ঘোরাতেই কড়া মেরুকরণের রাস্তা নিতে হয়েছে সঙ্ঘ-বিজেপিকে।

কেউ যাতে না-বলেন মোদী মেরুকরণের ইঙ্গিত করছেন, যে ভাবে ক’দিন আগে পোশাকের কথায় ইশারা করেছিলেন, বিরতির পর বললেন, ‘‘গরিবদের ঘর দেওয়া কিংবা সব ঘরে জল দেওয়া— চ্যালেঞ্জ যত বড়ই হোক, ২০১৪ থেকে চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার কোনও সুযোগ ছাড়িনি।’’

সরকারে প্রথম বার আসার পর অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনকে ‘সুশাসন দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদী সরকার। একটি ওয়েবসাইটও চালু হয়, যা এখন আর খোলা যায় না। ‘সুশাসন’ শব্দটিও অব্যবহারে ফিকে হয়ে গিয়েছে। আজ সকালে অটল-সমাধি, তার পর দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে অটলের নামে দু’টি প্রকল্প, শেষে লখনউয়ে গিয়ে অটলের মূর্তি উদ্বোধন, তাঁর নামাঙ্কিত মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপনের অনুষ্ঠানে বার বার ‘সুশাসন’ শব্দটিই উচ্চারণ করলেন আজ।

এক বার বললেন, ‘‘আমাদের কাছে সুশসানের মানে, সকলকে শোনা, সুবিধা দেওয়া, নিরাপত্তা ও সরকারের অস্তিত্ব অনুভব করানো। সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস। এই স্বপ্নই দেখেছিলেন অটলজি।’’ কিন্তু বিরোধীরা মোদীর কথায় আশ্বস্ত হচ্ছেন কই? কারণ, মোদীর মুখে যতই সকলের ‘বিশ্বাস’ আদায়ের কথা ঝরুক, মেরুকরণের উস্কানিও থামছে না। হরিয়ানার বিজেপির বিধায়ক লীলারাম গুর্জর বলছেন, ‘‘এ সরকার নেহরু-গাঁধীর নয়, মোদী-শাহের। এক বার ইশারা হলেই সিএএ-বিরোধীরা এক ঘণ্টায় সাফাই হবে।’’ মোদী-শাহর রাজ্য গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী বলছেন, ‘‘মুসলিমদের জন্য দেড়শো দেশ আছে। হিন্দুদের কেবলই ভারত!’’

বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজেরা নেমে পড়েছেন সঙ্ঘ-বিজেপির পরবর্তী এজেন্ডা— জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। আর সেখানেও বিশেষ ইঙ্গিত করে সাক্ষী বলেছেন, ‘‘চার স্ত্রী আর চল্লিশ বাচ্চা চলবে না। হম দো হমারে দো, সব কো দো!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement