প্রতীকী ছবি।
গত ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ককে করোনা টিকার দুই ডোজ় দেওয়া হবে বলে দাবি করে আসছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু নতুন বছর শুরু হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, এখনও প্রথম ডোজ় নেননি অন্তত ১০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক। অন্তত ৩৫ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ় পাননি। লক্ষ্যপূরণে না হওয়া নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ সরব হওয়ায় আজ পাল্টা জবাব দিতে বিবৃতি দিল কেন্দ্র। পরিসংখ্যান দিয়ে তাদের দাবি, ভারতের টিকা কর্মসূচি যথেষ্ট সফল এবং টিকাদানের হারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দেশ বেশ এগিয়ে।
টিকাকরণ প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে কেন্দ্র এক সময়ে জানিয়েছিল, দেশের অন্তত ৯৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ককে টিকার দু’টি ডোজ় দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্য কবে পূরণ হবে তা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে গত বছরের শুরুতে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর দাবি করেছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ৯৪ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ মোদী সরকার। প্রথম ডোজ় পেয়েছেন প্রাপ্তবয়স্কদের ৯০ শতাংশ। সেখানে দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন অন্তত ৬৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক।
বর্ষশেষে বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ সরব হয়। একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও লেখা হয়, নির্দিষ্ট সময়ে টিকাপ্রদানের লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি সরকার। আজ সেই অভিযোগের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানায়, বিশ্বের অনেক দেশের থেকে টিকাকরণ অভিযান পরে শুরু করেও ভারতের টিকাদানের হার অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভাল। পরিসংখ্যান দিয়ে কেন্দ্রের দাবি, আমেরিকায় প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ৭৩.২ শতাংশ। সেখানে ব্রিটেনে ৭৫.৯ শতাংশ, ফ্রান্সে ৭৮.৩ শতাংশ এবং স্পেনে ৮৪.৭ শতাংশ ব্যক্তি পেয়েছেন টিকার প্রথম ডোজ়। তবে আমেরিকা (৬১.৫শতাংশ) বাদে স্পেন, ফ্রান্স বা ব্রিটেন যে দ্বিতীয় ডোজ় পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। যদিও পাল্টা যুক্তিতে বলা হয়েছে, শতাংশের হিসাবে ভারত দ্বিতীয় ডোজ়ে পিছিয়ে থাকলেও, সার্বিক টিকাপ্রাপকদের বিচারে ভারত বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। যার কারণ ভারতের জনসংখ্যা।
কেন্দ্রের দাবি, ১১টি রাজ্যে ১০০ শতাংশ টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে তিনটি রাজ্যে টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় পেয়ে গিয়েছেন সকলে। কেন্দ্রের দাবি, আগামী এক মাসের মধ্যে আরও অন্তত ডজনখানেক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দু’টি ডোজ় টিকাকরণের ক্ষেত্রে একশো শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব হবে। তবে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পঞ্জাবের মতো রাজ্যের টিকাকরণের হার যে বেশ কম তা স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্র। ফলে দেশের ১০০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনতাকে কবে দু’টি ডোজ়ের আওতায় আনা সম্ভব হবে, তা স্পষ্ট করে জানানোর আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না কেন্দ্র। সম্প্রতি লোকসভায় একটি লিখিত প্রশ্নের উত্তরেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়াও স্বীকার করে নেন, দুই ডোজ় টিকাকরণ কবে দেশে সম্পূর্ণ হবে তার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা স্থির করেনি কেন্দ্র। টিকাকরণের হার নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব দীর্ঘ দিন ধরে বলেন আসছিল তৃতীয় ঢেউ আসার আগে দেশের সব মানুষকে দু’টি ডোজ় নিশ্চিত করার। সরকারের দাবি ছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে তা করে ফেলা হবে। এরই মধ্যে দেশে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে টিকাকরণের অভাবে দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতোই মৃত্যুমিছিল শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।