নিশানায় সেই চিন, ভিয়েতনামে সমঝোতা

কাল বাদে পরশু ভারতে এসে পৌঁছবেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। তার আগে আজ কমিউনিস্ট ভিয়েতনামের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও এক স্তর এগিয়ে নিয়ে গেল নয়াদিল্লি। শুধু তাই নয়, ‘বিপ্লবের মাটি’তে দাঁড়িয়ে বেজিংয়ের ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিতে হ্যানয়ের সঙ্গে কণ্ঠও মেলালো ভারত।

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

হ্যানয় (ভিয়েতনাম) শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

হ্যানয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট তুরং তান সান। সোমবার। ছবি: রয়টার্স

কাল বাদে পরশু ভারতে এসে পৌঁছবেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। তার আগে আজ কমিউনিস্ট ভিয়েতনামের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও এক স্তর এগিয়ে নিয়ে গেল নয়াদিল্লি। শুধু তাই নয়, ‘বিপ্লবের মাটি’তে দাঁড়িয়ে বেজিংয়ের ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিতে হ্যানয়ের সঙ্গে কণ্ঠও মেলালো ভারত।

Advertisement

চিনের ‘আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে জাপান যেমন রুষ্ট, তেমনই অসন্তোষ বাড়ছে ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্সের মতো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে। ভিয়েতনাম সংলগ্ন দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিং তেল উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু করায় ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে গিয়েছে হ্যানয়ের। তা ছাড়া পূর্ব ও দক্ষিণ চিন সাগরে অবাধ চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বেজিং। সেই প্রেক্ষাপটেই জাপান সফরে গিয়ে চিনকে বার্তা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, সম্প্রসারণ বাদের ‘অষ্টাদশ শতাব্দীর মানসিকতা’ থেকে তারা যেন নিবৃত্ত থাকে। তার পরেই চার দিনের ভিয়েতনাম সফরে এলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

হো চি মিনের সমাধির অদূরে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে আজ তাঁর ও ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট তুরং তান সানের উপস্থিতিতে দু’দেশ সাতটি চুক্তি সম্পাদন করেছে। পরে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগরে অবাধ গতিবিধি সুনিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবে দুই দেশ।” সেই সঙ্গেই নাম না করে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে বেজিংকে। বলা হয়েছে, “সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের (দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগরে) সব অংশীদার যেন সংযত আচরণ করে। কোনও রকম শক্তি প্রয়োগ না করে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক আইন মেনে যেন বিরোধ মীমাংসার পথে হাঁটে।” ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক গুঁয়েন ফু ত্রং এবং প্রধানমন্ত্রী গুঁয়েন তান দুংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রণববাবু। প্রতিরক্ষা খাতে হ্যানয়কে ১০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে নয়াদিল্লি।

Advertisement

কূটনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, মূলত দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রাখার তাগিদেই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে হ্যানয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল নয়াদিল্লি। ঋণের টাকায় সমুদ্র পথে নজরদারির জন্য চারটি জলযান কিনবে হ্যানয়। তা ছাড়া জাহাজ থেকে নিক্ষেপণের জন্য অদূর ভবিষ্যতে ভিয়েতনামকে ব্রাহ্মোস মিসাইলও সরবরাহ করবে ভারত।

প্রতিদানে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসি বিদেশ-কে আরও দু’টি তেল ও গ্যাস ব্লক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি করেছে হ্যানয়। মজার বিষয় হল, ওই দু’টি ব্লকের অবস্থান ঠিক কোথায়, তা আজ সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়নি ঠিকই, কিন্তু সে দু’টি যে দক্ষিণ চিন সাগরেও হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও জিইয়ে রেখেছে ভিয়েতনাম।

তবে ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, দু’টি তেল ব্লক পাওয়া বা প্রতিরক্ষা সমঝোতার মতো বিষয়গুলো তুলনায় ছোট বিষয়। বৃহৎ প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে নয়াদিল্লির স্থানাঙ্ক পরিবর্তনটাই তাৎপযপূর্ণ। সাউথ ব্লকের এক কূটনীতিকের কথায়, এশিয়ার কূটনৈতিক পরিসরে বিবর্তন হচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থান বদলাচ্ছে নয়াদিল্লিও। তার ভিত সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়ে রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী। সরকারের সেই নীতিই ভিয়েতনাম সফরে এসে আরও প্রসারিত করতে সক্রিয় হলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

কিন্তু কী সেই পরিবর্তন?

ভারতীয় কূটনীতিকদের কথায়, আঞ্চলিক কূটনীতিতে নয়াদিল্লিকে রক্ষণাত্মক খেলা খেলতেই দেখা গিয়েছে। সামনে পা বাড়িয়ে খেলার দৃষ্টান্ত কম। কিন্তু বেজিং বরাবরই ‘আগ্রাসী’। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সম্পর্কের সামান্য অবনতি হলেই তার সুযোগ নিয়েছে চিন। সেই কূটনীতির আড়ালে তাঁদের বাণিজ্যিক এবং আর্থিক স্বার্থ চরিতার্থ করেছে।

বেজিংয়ের সেই কৌশলের জবাব তাদের সূত্রেই দিতে চাইছে নয়াদিল্লি। চিনের সঙ্গে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জাপান, ভিয়েতনাম-সহ যে দেশগুলির আস্থার সম্পর্ক টলে গিয়েছে, সে সব দেশের সঙ্গে আরও নিবিড় বন্ধু সম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট মোদী সরকার। এই পথে চিনকে টক্কর দিয়ে এই দেশগুলির বিনিয়োগ ভারতে টানতে চাইছে নয়াদিল্লি। বেজিংকে চাপে রাখার কৌশলই এর মধ্যে নিহিত রয়েছে। ভারতের আরও খুশির কারণ, অক্টোবরেই একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দলকে নিয়ে ভারতে আসছেন ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী।

যদিও বেজিংয়ের নাম এক বারও মুখে আনেননি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। আজ নেহরু-হো চি মিন সম্পর্কের ঐতিহ্য টেনে এনে শুধু বলেছেন, ভিয়েতনাম নয়াদিল্লির পূবে তাকাও নীতির বড় স্তম্ভ।

প্রণববাবু পরশু দেশে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারত সফরে এসে পৌঁছবেন চিনের প্রেসিডেন্ট। পরের দিন তাঁকে রাইসিনা হিলসে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রণববাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement